ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিশুদের ক্যান্সার অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাময়যোগ্য!

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:১৪

শিশুদের ক্যান্সার অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাময়যোগ্য!
ফাইল ছবি

আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস। বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে লাখ লাখ শিশু। নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় আক্রান্ত শিশুদের বেশিরভাগ চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর প্রায় চার লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর নিরাময় হওয়ার হার ৮০ শতাংশ হলেও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে তা ৩০ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশে কী পরিমাণ শিশু ক্যানসার আক্রান্ত হয় প্রতিবছর, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে চিকিৎসকদের ধারণা, ছয় থেকে সাত হাজার শিশু প্রতি বছর আক্রান্ত হয় ক্যানসারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেনিটিক্যাল কারণ, ভাইরাস, খাবারে টক্সিনের উপস্থিতি, কেমিক্যালস, পরিবেশগত সমস্যায় শিশুদের ক্যানসার হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিশুদের ক্যানসার মোকাবিলায় সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেমন বলছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় আক্রান্ত শিশুদের ৯০ শতাংশই চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। সংস্থাটির তথ্যমতে, বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, শিশুদের বেশিরভাগ ক্যান্সারই সঠিক সময়ে শনাক্ত হলে এবং যথাযথ চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য। ব্লাড ক্যান্সারের পাশাপাশি নসিকাগ্রন্থি, কিডনি এবং চোখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায় শিশুদের। শিশুর সংখ্যাও কম নয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শিশু রক্তরোগ এবং ক্যানসার বিভাগের তথ্য মতে, বাংলাদেশে শিশুদের ক্যানসারের ক্ষেত্রে লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসারের সংখ্যাই বেশি। তবে শিশুদের ব্লাড ক্যানসার ছাড়াও ব্রেইন টিউমার, নিউরোব্লাস্টোমা, চোখের টিউমার বা রেটিনোব্লাস্টোমা, যকৃতের টিউমার বা হেপাটোব্লাস্টোমা, কিডনির টিউমার বা নেফ্রোব্লাস্টোমা, হাড়ের টিউমার বা অস্টিওসারকোমা, মাংসপেশির টিউমারসহ আরও বিভিন্ন রকম ক্যানসার প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে।

বিএসএমএমইউ শিশু হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার নতুন শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। যদিও এটি পরিসংখ্যান অফিসিয়াল নয়, আমরা কাজ করতে করতে বুঝেছি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ব্লাড ক্যানসারে। শিশুদের যেসব ক্যানসার হয় সেগুলোর অধিকাংশ নিরাময়যোগ্য। অর্থাৎ ৭০- ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, ক্যানসারের চিকিৎসা সারা পৃথিবীতেই একই নিয়মে হচ্ছে। বর্তমানে জনমুখী স্বাস্থ্যনীতির কারণে ক্যানসার চিকিৎসার ওষুধ সারা দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের ওষুধ শিল্প এমনভাবে বিকশিত হয়েছে, অধিকাংশ ওষুধ দেশে তৈরি হয়। কিছু কিছু ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হয়। শিশুদের ক্যানসার ওষুধে নিরাময় করা যায়। অধিকাংশ রোগী ভালো হয়ে যায় যদি তারা চিকিৎসা সময়মতো শুরু করে আর চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখে।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পেডিয়েট্রিক হেমাটোলোজি অনকোলজি বিভাগে দেখা গেছে, ক্যানসার আক্রান্ত শিশু হাসপাতালের ৩০টি বেডেই ভর্তি আছে। বেড না পাওয়ায় বিভাগের মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে অনেক শিশুকে।

কয়েকটি শিশু এসেছে জ্বরে আক্রান্তের পর অন্যান্য জটিলতা নিয়ে। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।

অভিভাবকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করাচ্ছেন। চিকিৎসক ভরসা দিচ্ছেন, তাদের সন্তান সুস্থ হয়ে যাবে। তবে এজন্য আরও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশুদের ক্যানসার শনাক্তের হার বাড়লেও সে অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও কম। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৫০ জনের মতো ক্যানসার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। অভিজ্ঞ নার্স ও টেকনিশিয়ান এবং ঢাকার বাইরে শিশু ক্যানসার চিকিৎসাসেবা এখনো অপ্রতুল।

চিকিৎসকদের মতে, শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার, যেমন- পালং শাক, ব্রকোলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগির মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টি আলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদামের মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত