নিপীড়িত গণমানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠ বঙ্গবন্ধু

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ

  গাজী কাইয়ুম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু আজ শুধু দেশের নয়, গোটা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশীদার। সভ্যতার যে বিবর্ণ দিনটিতে বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছিলেন, সেদিনও তিনি ছিলেন বিশ্বের একজন অতিপরিচিত, ভীষণ জনপ্রিয় মুখ। নিপীড়িত গণমানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠ। তাকে সমীহ করেছে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব। মর্যাদা দিয়েছে ধনী দেশগুলোর জনগণও।

পূর্ব-পশ্চিম-মধ্যপ্রাচ্য-সবখানেই তার জায়গা পোক্ত হয়ে উঠেছিল। সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা কিংবা জাতীয়তাবাদ-রাষ্ট্রগঠনের যেসব নীতিচর্চায় বঙ্গবন্ধু আলোচিত হয়েছিলেন, সবখানেই ছিল তার প্রজ্ঞা, স্বাতন্ত্র্য ও রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টির স্বাক্ষর।

১৯৬৯ সাল। নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষী হয় দেশ। বীরের বেশে কারামুক্ত হন বঙ্গবন্ধু মুজিব। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাখ্যান করে লাখো জনতা। বঙ্গবন্ধু জনপ্রিয়তার উচ্চশিখর স্পর্শ করেন। ১৯৭০ আঞ্চলিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। প্রবল আন্দোলনের মুখে সামরিক জান্তা সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। দেশভাগের পর প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় আমজনতা।

বঙ্গবন্ধুও নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পান। ফলাফল দেখে দলের শীর্ষনেতা ও তাত্ত্বিকরাও অবাক হয়ে যান। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন ও রাজা ত্রিদিব রায় বাদে দল সবকটি আসন লাভ করে। দেখা গেছে, মুজিব যে জনসভায় যোগ দিয়েছেন, সেখানেই অন্তত ১০ শতাংশ ভোট বেশি যুক্ত হয়েছে। একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ তার স্মৃতিচারণে লেখেন বিখ্যাত এক ব্যারিস্টারের গল্প। নিজের জন্য তিনি নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জনসভার পর গণসংযোগ চলছিল। এক অশীতিপর বৃদ্ধ-কৃষক প্রার্থীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে সাফ বলে দেন-ভোট তিনি মুজিবকেই দেবেন, অন্য কাউকে নয়।

আওয়ামী লীগ বিপ্লবী দল ছিল না। গরিব খেটে খাওয়া কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ, কিন্তু বামপন্থিকে নয়, বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিয়েছিলেন। ঠিক করে ফেলেছিলেন-মানুষের জন্য, তাদের স্বপ্নপূরণের জন্য জীবনের সর্বস্ব উজাড় করে দেবেন। ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের সব প্রস্তুতি ও নির্দেশনা দিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর পথে পা বাড়িয়েছিলেন। প্রতিহিংসায় উন্মত্ত নিষ্ঠুর পাক সেনার হাত থেকে তিনি বাঁচার চেষ্টা করেননি। আর ৭ মার্চ গোটা পৃথিবী দেখেছিল ‘আ স্টেইট ইন মাইন্ড ওয়াজ বর্ন’-মানবসভ্যতার ইতিহাসে যা বিরল।

সাংবিধানিক রাস্তায় মুক্তির লক্ষ্যে রাজনৈতিক পথের সন্ধান দিয়েছিলেন মুজিব; যা মুক্তিকামী মানুষের চিরকালীন রাজনীতির প্রকরণে ধ্রুপদী লেখচিত্র হয়েই থাকবে। 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে