ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ছিনতাই হওয়া টাকার ৯ কোটি উদ্ধার

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১৮:২৭  
আপডেট :
 ০৯ মার্চ ২০২৩, ২১:১৩

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ছিনতাই হওয়া টাকার ৯ কোটি উদ্ধার
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ছিনতাই হওয়া টাকার কিছু অংশ উদ্ধার। সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর তুরাগ এলাকায় দিনে-দুপুরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গাড়ি থেকে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ। এ সময় গাড়িচালকসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন, তুরাগ এলাকা থেকে ডাচ-বাংলার ছিনতাই হওয়া টাকার ৯ কোটি টাকা ডিবি পুলিশের সদস্যরা উদ্ধার করেছে। এখনো অভিযান চলছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযান শেষে ডিবির পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।

ডিবি সূত্র জানিয়েছে, টাকার চারটি বাক্স নিয়ে পালিয়েছিলো ছিনতাইকারীরা। ঘটনার পরপরই ডিবি পুলিশ অভিযান শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে ঘটনার সাড়ে ৮ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে খিলক্ষেত এলাকা থেকে গাড়িসহ এর চালককে আটক করা হয়। এ সময় ছিনতাই হওয়া চার বাক্সের মধ্যে তিনটি বাক্স উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে বিভিন্ন বুথে টাকা রাখার জন্য গেলে মানি প্লান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের গাড়ি থেকে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনতাই হয় বলে অভিযোগ করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ছিনতাইকারীরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়েছিলেন। তবে তাদের হাতে ছিল না কোনও আগ্নেয়াস্ত্র। ছিনতাইয়ের এ ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন পুলিশ ও ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে তুরাগ থানায় ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, মানি প্লান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৬৫৭৯০ সিরিয়ালের একটা নোয়া গাড়িতে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে বের হয়ে রওয়ানা দেয় সাভার ইপিজেডের উদ্দেশে। কোম্পানির ভাষ্য মতে, গাড়িটিতে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল। গাড়িটি মিরপুর ডিওএইচএস পার হয়ে মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে ১১ নম্বর ব্রিজ হয়ে যখন সামনের দিকে যাচ্ছিল, তখন পেছন থেকে একটি কালো কালারের মাইক্রোবাস এসে ডান থেকে বামে চাপ দিয়ে হর্ন দেয় ও গাড়িটির গতিরোধ করে। প্রথমে তারা হর্ন দেয়া নিয়ে কোম্পানির গাড়ির চালকের সঙ্গে ঝগড়া করে। এরপর গাড়ির চালক এবং কোম্পানির সুপারভাইজারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে।

ছিনতাইকারী দলের একজন টাকার গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে। তিনি গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে সামনে দাঁড় করান। ওই সময় গাড়িটিতে কোম্পানির একজন ম্যানেজার ছিলেন। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে এবং গাড়িতে থাকা টাকার চারটি বাক্স নামায়, কালো রংয়ের আরেকটি হায়েস গাড়িতে করে তারা সেই বাক্স নিয়ে চলে যায়। তারা গাড়িটি রাজউকের ভবনের পাশ দিয়ে ১৮ নম্বর সেক্টরের রাস্তা হয়ে সামনে থেকে ইউটার্ন করে ১০ নং সড়ক হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।

ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় তারা ৯৯৯ এ কল করে বিস্তারিত জানায়। ৯৯৯ এর মাধ্যমে থানা পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যায়। ছিনতাইয়ের ঘটনার খবর পেয়ে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটে গিয়ে বিস্তারিত শোনেন। কোম্পানির ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।

ছিনতাইকারীদের হাতে অস্ত্র ছিল কি না এবং তারা কোনো পরিচয় দিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে ডিসি মোর্শেদ বলেন, ছিনতাই করতে আসা গাড়িটিতে ১০ থেকে ১২ জন ছিলেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তবে তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। ছিনতাইকারীরা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়েছেন।

হঠাৎ করে ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটেনি, এটা পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে ডিসি মোর্শেদ বলেন, এতগুলো টাকা এদিক দিয়ে যাবে ছিনতাইকারীরা তা জানবে কী করে? নিশ্চয়ই পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। কারণ দিনের বেলায় ঢাকায় ছিনতাই ও ডাকাতির এতো বড় ঘটনা ঘটার মতো পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই। যা ঘটে ছোটখাটো, মধ্যরাতে ঘটে। সকাল বেলায় এ ধরনের ছিনতাই নিশ্চয়ই পূর্বপরিকল্পিত। আমরা ঘটনাটি বিস্তারিত তদন্ত করে দেখবো। প্রতিষ্ঠানটির কোনো সদস্য এ ঘটনায় জড়িত কি না সেটাও আমরা খতিয়ে দেখবো। আমরা সব কিছু বিবেচনায় তদন্ত করছি।

এখন পর্যন্ত কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা বা কাউকে আটক করা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে বেশি মোর্শেদ বলেন, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ওই গাড়িটিতে ঘটনার সময় পাঁচজন ছিলেন, তাদের আমরা থানায় নিয়ে এসেছি। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনেছি। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া টাকার গাড়িটিও থানায় আনা হয়েছে।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা মোর্শেদ আলম বলেন, টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে তারা পুলিশকে কিছু জানায়নি। ৫/১০ লাখের বেশি হলে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পুলিশকে জানানোর নিয়ম। কিন্তু তারা সেটি করেনি। এখানে পুলিশের কোনো অবহেলা দেখার সুযোগ নাই।

ডিসি আরও বলেন, যেসব কোম্পানি এরকম টাকা স্থানান্তর করেন বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা বুথে স্থানান্তর করেন তাদের আরও সতর্ক হওয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কেউ টাকা স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে বা ট্রিপল নাইনে ফোন করে অভিযোগ করলে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি। পুলিশ বা থানা পুলিশ সবসময় প্রস্তুত।

আরো পড়ুন: অস্ত্র ঠেকিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১১ কো‌টি টাকা ছিনতাই

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত