ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্বর্ণ পাচার: সীমান্তের ১০ জেলার শতাধিক নিরাপদ রুট

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

স্বর্ণ পাচার: সীমান্তের ১০ জেলার শতাধিক নিরাপদ রুট
ফাইল ছবি

দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের ১০টি জেলার শতাধিক চোরাচালান রুট যেন স্বর্ণের খনিতে পরিণত হয়েছে। সীমান্তের এসব রুটের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন উদ্ধার হচ্ছে বিভিন্ন পরিমাণের স্বর্ণ।

গত দুই মাসে সীমান্তের রুটগুলো থেকে ৫৪ কেজি সোনা উদ্ধারসহ ১৩জন স্বর্ণ বাহককে গ্রেপ্তার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর পাশাপাশি বিগত ৪ বছরে স্বর্ণ উদ্ধার হয়েছে সাড়ে ৪শ’ কেজি। এসব স্বর্ণের বাজার মূল্য আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকা।

২০১৯ সালে বিজিবি ৫৪ কেজি, ২০২০ সালে ৮৮ কেজি, ২০২১ সালে ৫০ কেজি ও ২০২২ সালে ১৯৫ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে। এসব ঘটনায় ১৯০জন বাহককে গ্রেপ্তার করে। তবে তারা স্বর্ণের চালানের মালিকের খোঁজ জিজ্ঞাসাবাদে দিতে পারেন নি।

সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধের বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আজ যে টেকনোলজি মর্ডান মনে হচ্ছে, ঠিক আগামীকাল সেটা পুরাতন হয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে চোরাকারবারিরা তাদের কাজ করেন। তাদের গ্রেপ্তার করার পর কৌশলও পাল্টে ফেলেন। এ কারণে বিজিবিকে প্রতিনিয়ত কৌশল পাল্টে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করতে হয়। সীমান্তে সোনা, মাদক, অবৈধ পন্য পাচার প্রতিরোধে বিজিবি কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, স্বর্ণ পাচারের সবচেয়ে বড় রুট যশোর জেলায়। এই জেলার সীমান্তে অন্তত ১০টি নিরাপদ রুট রয়েছে। বেনাপোল থানার সাদীপুর, পুটখালি, শার্শার শিকারপুর, ভবেরবেড়, দৌলতপুর, শ্যামলাগাজী রুটগুলোতে সবচেয়ে বেশি সোনা পাচারের ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া যশোরের মনোহরপুর, ছুটিপুর, কাশিপুর, শালকোনা, পাকশিয়া এলাকা দিয়েও পাচার হচ্ছে স্বর্ণ।

পাচারের সীমান্তঘেঁষা রুটগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো-কার্পাসডাঙ্গা, দর্শনা ও জীবননগর। সাতক্ষীরা লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী ৬টি রুট রয়েছে। এগুলো হলো ভাদিয়ালী, কালীগঞ্জ, শেরপুর, ভোমরা, নোংলা ও কৈখালী। মেহেরপুরের গাংনী, কুতুবপুর, কাতুলি ও বুড়িপোতা, কুষ্টিয়ার ধর্মদহ, প্রাগপুর, বিলগাতুয়া, চর ভবানন্দদিয়া, রাজশাহীর সোনাইকান্দি, হরিপুর, কাশিয়াডাঙ্গা, গোদাগাড়ী, চরখিদিরপুর, চর মাঝারদিয়া, আলাইপুর, বাঘা, চারঘাট, গোদাগাড়ী ও মোক্তারপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনাকষা, ঘুঘুডাঙা, রামকৃষ্ণপুর, শিবগঞ্জ, কিরণগঞ্জ, ভোলাহাট, রামদাসপুর, সাপাহার, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, হিলি, কামালপুর ও বিরল, ঠাকুরগাঁওয়ের আমজানখোর, হরিপুর, আটঘরিয়া, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও ফুলবাড়ী এবং লালমনিরহাটের বুড়িরহাট, শ্রীরামপুর ও দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার হয়। সীমান্ত এলাকা দিয়ে স্বর্ণ পাচারে কৃষক, দিনমজুর, ট্রাক-লরির চালক, খালাসি, রাখাল ও জেলেদের ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথমে ঢাকা থেকে সড়ক পথে বা ট্রেনে করে একজন বাহক স্বর্ণের চালান সীমান্ত এলাকার নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। বাহকরা টিফিন বক্স, মৌসুমি ফলের ঝুড়ি, সবজি ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে রেখে সেগুলো বহন করেন।

স্বর্ণ চোরাকারবারিরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে দুবাই থেকে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ আকাশ পথে পাচার করে থাকে। এছাড়া সৌদি আরব, কাতার এবং কুয়েত থেকেও স্বর্ণ পাচারের ঘটনা বিভিন্ন সময়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ধরা পড়ে। এ কাজে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পাচার সিন্ডিকেট নিজস্ব বাহক যেমন ব্যবহার করছে, তেমনি টাকার টোপে কখনো পাইলট, কখনো ক্রু, কখনো বিমানবালাকেও কাজে লাগায়। তাছাড়া বিমানের ক্লিনার, ট্রলিম্যান এমনকি প্রকৌশলীরাও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনাও ধরা পড়ে। যাত্রীবেশি বাহকের সঙ্গে থাকা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ইলেকট্রিক মোটর, মানবদেহের বিভিন্ন অংশ, ট্রলির ওপরের হ্যান্ডেল ও মানিব্যাগে করে স্বর্ণ পাচারের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া রোগী সেজে হুইল চেয়ারে, ঊরুতে অ্যাংকলেট বেঁধে, জুতার মধ্যে, বেল্ট দিয়ে কোমরবন্ধনীর ভেতরে, শার্টের কলারের ভেতরে, স্যান্ডেলের সঙ্গে, সাবান কেসে, সাউন্ড বক্সের অ্যাডাপটরে, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য বা ওষুধের কৌটা, প্যান্টের নিচে শর্টসের ভেতর, ল্যাপটপের ব্যাটারির ভেতর, মানিব্যাগে ও গলায় চেইনের সঙ্গে ঝুলিয়ে লকেট হিসেবেও আনা হচ্ছে সোনার বার। এরপর নানা কৌশলে হাত বদল হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএ/সুজন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত