ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাইরে বাঁশের বেড়া, ভেতরে আলিশান রুমে চলতো অনৈতিক কাজ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ১৯:৫২

বাইরে বাঁশের বেড়া, ভেতরে আলিশান রুমে চলতো অনৈতিক কাজ
অভিযুক্ত মনির। সংগৃহীত ছবি

মো. মনির হোসাইন (৩৫)। পেশায় একজন ব্যাংকার। কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত। এর আড়ালে তিনি একজন অপরাধী তিনি। ‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে এর মাধ্যমে একর পর এক নারীর সর্বনাশ করতেন তিনি। ফেসুবকের এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার এবং মনির নিজেই পেজটির মডারেটর।

এই সাইবার অপরাধীকে রোববার রাতে রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্টের একটি টিম। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ও ছবি সম্বলিত ২টি মোবাইল ফোন, ৩টি সিম কার্ড, এবং ২টি মেমোরি কার্ড, ২টি গোপন ক্যামেরা/ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, সংস্থার সাইবার পুলিশ সেন্টারে একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি ওই ফেসবুক গ্রুপের সদস্য। তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, প্রথমে ভুক্তভোগী নারীকে ফেসবুক গ্রুপের সদস্য করে এবং পরে মডারেটর বানানোর প্রস্তাব দেন মনির। তাকে গ্রুপে আরও ক্ষমতাবান করা হবে এবং নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়।

এরপর ওই নারীকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং খাওয়া-দাওয়া করেন মনির। ছলনা করে তার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং কৌশলে সেই অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি তুলে রাখেন। পাশাপাশি ভিডিও করে রাখেন মনির। পরে সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে একাধিকবার অভিযোগকারী ভুক্তভোগীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন তথাকথিত ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন মনির হোসাইন।

জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডির কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার মনিরের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন যে, অভিযোগকারী নারী সদস্য ছাড়াও একাধিক নারী সদস্যদের সাথে একই প্রক্রিয়ায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে পরে তাদের ব্ল্যাকমেইল করছিলেন মনির।

এজন্য বাড্ডা এলাকায় তার গোপন হেরেমখানা তৈরি করেন। বাইরে বাঁশের বেড়া, টিনের ঘর, দেখলে চোখে পড়ার মত তেমন কিছু নয়। কিন্ত ভেতরে এসি রুম, উন্নত শয়ন কক্ষ, এটাচ বাথরুম, ইয়াবা সেবন করার ব্যবস্থাও রয়েছে। মৌজ-মাস্তি করার সব উপকরণ সেখানে মওজুদ। ছিল একাধিক গোপন ক্যামেরাও। এই গোপন ক্যামেরা দিয়ে তিনি তার অনৈকিত কাজের সব ছবি এবং কর্মকাণ্ড রেকর্ড করে রাখতেন।

তদন্তকালে সিআইডির কর্মকর্তা জানতে পেরেছেন, ‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ গ্রুপের এডমিন হিসেবে মনির ভুক্তভোগীসহ একাধিক নারীর সাথে গ্রুপের মডারেটর বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ভিডিও কলে কথা বলে ও তা স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখতেন। পরে সেই স্ক্রিন রেকর্ড ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে কৌশলে তাও ভিডিও করে রাখতেন বা ছবি তুলে রাখতেন। এরপর আবার সেই ছবি ও ভিডিও দিয়ে আবারও ব্ল্যাকমেইল করে প্রতিনিয়ত তাদেরকে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতেন মনির।

সিআইডি বলছে, ভিকটিমকে জোর করে ছুরির ভয় দেখিয়েও ধর্ষণ করতেন মনির। ভিকটিমের স্বামী অফিসে চলে গেলে কখনো কখনো তিনি ভিকটিমের বাড়িতেও হানা দিতেন। তার অত্যাচারে ভিকটিমের জীবন অতীষ্ঠ হয়ে পড়ে। ফলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হন।

তদন্তে সিআইডি আরও জানতে পেরেছে, বিভিন্ন মেয়েকে নিজের কব্জায় নিয়ে টাকার বিনিমেয়ে ধনাঢ্য লোকদের কাছে পাঠাতেন মনির।

সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, গ্রেপ্তার মনিরের বিরুদ্ধে রাজধানীর রুপনগর থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

আরো পড়ুন: ভাবির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে যুবককে খুন

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত