ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

বন্ধুত্ব গড়ে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ১৯:৪৪  
আপডেট :
 ০৬ জুন ২০২৩, ১৯:৫০

বন্ধুত্ব গড়ে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা
গ্রেপ্তার আল-আমিন। সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর কদমতলীর পশ্চিম মোহাম্মদবাগ এলাকার ক্লুলেস ইমন কাজী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনমহ মূল ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-ওয়ারী বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতের নাম- আল-আমিন শেখ (৩৬)।

সোমবার বরিশালের হিজলা উপজেলার গোবিন্দপুর খন্না এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর আল-আমিন পালিয়ে শশুরবাড়ি অবস্থান নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিবি পুলিশ জানায়, নিহত ইমন কাজী ও গ্রেপ্তার আল-আমিন দুইজনই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক। সেই সুবাধে আল-আমিনের বাসায় যাতায়াত করতেন ইমন। একপর্যায়ে আসামি আল-আমিনের স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সম্পর্ক শুরু হয় ইমনের। এটি নিয়ে ইমনের সঙ্গে আল-আমিনের মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ইমনের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আল-আমিনের স্ত্রী একাধিকবার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে আল-আমিন প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে ইমনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে তাকে টাকা ধার দেন। পরে সেই টাকার জন্য চাপ দেন আল-আমিন। এক পর্যায়ে ইমনকে কৌশলে বাসায় ডেকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন আল-আমিন। পরে ইমনের মরদেহ বস্তায় ভরে কদমতলীর হেনোলাক্স গলিতে একটি ডোবায় ফেলে পালিয়ে যান।

মঙ্গলবার গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. আজহারুল ইসলাম মুকুল বলেন, গত শনিবার কদমতলীর পশ্চিম মোহাম্মদবাগ সোনা মারিয়া জামে মসজিদের দক্ষিণ পাশে একটি অজ্ঞাতনামা বস্তাবন্দি মরদেহ পাওয়া যায়। পরে মরদেহ শনাক্ত হলে ভিকটিমের বাবা কদমতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে ডেমরা জোনাল টিম। তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যার সাথে জড়িত মূল ঘাতককে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় আল-আমিন প্রতিশোধ নিতে ইমনকে হত্যা করেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমনকে ৫ হাজার টাকা ধারও দেন আল-আমিন। একপর্যায়ে গত ৩০মে ইমনকে কৌশলে আল-আমিন তার বাসায় নিয়ে যান। যাওয়ার সময় কোক এবং সিগারেট কেনেন। আর আগে থেকেই বাসায় ঘুমের ওষুধ রেখেছিলেন। বাসায় ঢোকার পর কৌশলে কোকের বোতলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ইমনকে খেতে দেন আল-আমিন। কোক খাওয়ার পর তাদের মধ্যে পাওনা টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি এবং ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে জোরে ধাক্কা দিলে ইমন দেয়ালে বাড়ি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে ইমনকে হত্যা করেন আল-আমিন। হত্যার পর ইমনের অটোরিকশাটি গেন্ডারীয়ার গঙ্গা শাহ মাজারের সামনে রেখে আসেন। এরপর তার রিকশা গ্যারেজে গিয়ে ঘুমিয়ে পরেন। পরদিন দুপুরে একটি বস্তা কিনে বাসায় গিয়ে ইমনের মরদেহ বেঁধে বস্তায় ভরে সন্ধ্যার পর কদমতলীর হেনোলাক্স গলিতে একটি ডোবার মধ্যে ফেলে বরিশালে শ্বশুরবাড়ি চলে যান আল-আমিন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত সেখানেই আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ইমন কাজী। সংগৃহীত ছবি

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কদমতলী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আল-আমিনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গত ৩০ মে অটোরিকশাচালক মো. ইমন (১৭) হন। নিখোঁজের চারদিন পর শনিবার রাতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ইমনের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ইমনের স্বজনরা জানান, ইমনের বাবা মো. লিটন দিনমজুর। কদমতলী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাও চালান মাঝেমধ্যে। জুরাইনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ইমন দ্বিতীয়। সংসারের অভাব ঘোচাতে ছেলে ইমনকে অটোরিকশা চালাতে দিয়েছিলেন তিনি। ৩০ মে রাত ৮টার দিকে ইমন তার বাবাকে নামিয়ে রিকশা নিয়ে বের হয়। লিটন রাত ৯টার দিকে ইমনকে কল করলে তার ফোন বন্ধ পান। ভেবেছিলেন চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফোন বন্ধ হতে পারে। তবে রাত যত বাড়তে থাকে ততই দুশ্চিন্তায় পড়ে পরিবার। রাত দেড়টার দিকে অটোরিকশাটি গেন্ডারিয়ার ফরাশগঞ্জ এলাকায় পড়ে থাকার তথ্য জানিয়ে পুলিশ অটোরিকশার মালিক আশিক সরকারকে ফোন করে। আশিকের সঙ্গে লিটনের পরিবারের ঘনিষ্ঠতা আছে। রাতেই লিটনকে নিয়ে আশিক ফরাশগঞ্জে যান।

আশিক সরকার জানান, এক বছর ধরে ইমন তার অটোরিকশা ভাড়ায় চালায়। ঘটনার দিন সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়ে দুপুরে ফিরে আসেন। রিকশার ব্যাটারি চার্জে দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে অন্য একটি রিকশা নিয়ে বের হন। রাতে পুলিশ ফোন দিয়ে জানানোর পর রিকশাটি উদ্ধার করা হয়। তখন ইমনকে পাওয়া যায়নি। তবে রিকশার ব্যাটারি খোয়া গেছে। রিকশা উদ্ধারের পর লিটন কদমতলী থানায় গিয়ে ইমনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান।

আরো পড়ুন: পরকীয়া: ব্যাটারির অ্যাসিড পুশ করে স্বামীকে হত্যা

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত