ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইরাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রবাসী‌কে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ৮

  নিজস্ব প্রতি‌বেদক

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ২৩:২৮

ইরাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রবাসী‌কে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ৮

ইরাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাংলাদেশি এক যুবককে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পু‌লিশ ব্যুরো অব ইন‌ভে‌স্টি‌গেশ‌ন (পিবিআই) ঢাকা জেলা।

গ্রেপ্তারকৃতরা হ‌লেন- আলী হোসেন (৪৯), মো. শামীম (২৫), শিরিন সুলতানা (৩৫), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১), রবিউল ঘরামী (২৪), শাহিদা বেগম (৫২), সাহনাজ আক্তার লিপি (৩৮) ও মো. আকবর সরদার (৫৫)। পি‌বিআই সোমবার জা‌নি‌য়ে‌ছে বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনা থেকে তা‌দের গ্রেপ্তার করা হয়ে‌ছে।

পি‌বিআই জানায়, নবাবগঞ্জের দড়িকান্দা গ্রামের মোসলেম মোল্লা (৩০) ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ২০১৬ সালে জীবিকার তাগিদে ইরাক পাড়ি জমান। ইরাকে অবস্থানকালে বাংলাদেশি কয়েকজন তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের নিকট পাঠিয়ে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। নাহলে মোসলেমকে হত্যা করা হবে বলে তার পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। ছেলের নির্যাতনের ভিডিও সহ্য করতে না পেরে মোসলেমের মা খতেজা বেগম ১২টি বিকাশ নাম্বারে ৬ লাখ টাকা দেন।

সোমবার রাজধানীর ধানম‌ন্ডি‌তে পি‌বিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ইরাকে অবস্থানকালে সেলিম মিয়া ও শামীমসহ আরও কয়েকজন মোসলেমকে কাজের কথা বলে তার বর্তমান কর্মস্থল থেকে অন্যত্র অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে কল দিয়ে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে,নাহলে তাকে হত্যা করবে বলে হুমকিও দেয়।

এ ঘটনার পর খতেজা বেগম তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য নবাবগঞ্জ থানার পাড়াগ্রাম বাজার থেকে ১২টি বিকাশ নাম্বারে ৬ লাখ টাকা দেন। প‌রে আসামীরা ভুক্তভোগী যুবককে মুক্তি না দিয়ে আবারও তার মায়ের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে। এই ঘটনায় খতেজা বেগম বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। এরপর অভিযান চা‌লি‌য়ে আসামিদের ‌গ্রেপ্তার করা হয়।

২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, ৬ অক্টোবর, ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট ও ২৩ আগস্ট বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনা থেকে গ্রেপ্তার হয় আটজন।

পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, ইরাকে অবস্থানকালে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি সেলিম মিয়া নামের একজনের সঙ্গে ভুক্তভোগী মোসলেমের পরিচয় হয়। সেলিম মোসলেমকে ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আসামি আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বিরের হাতে তুলে দেয়। মোসলেমকে নিয়ে গিয়ে আসামিরা একটি আবদ্ধ রুমে আটকে রাখে এবং তার সঙ্গে থাকা ২ হাজার ডলার ও দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে নির্যাতন করতে থাকে। ৩ দিন ধরে নির্মম-বর্বর নির্যাতনের পর সেই নির্যাতনের দৃশ্য ইমো অ্যাপের মাধ্যমে খতেজা বেগমকে দেখায় এবং মোট ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

খতেজা বেগম ছেলের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আসামিদের পাঠানো ১২টি বিকাশ নাম্বারে ২৬টি ট্রাঞ্জেকশনের মাধ্যমে মোট ছয় লাখ টাকা দেন। আসামি আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বির ইরাকে অবস্থান করলেও দেশে তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মুক্তিপণের টাকা বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকান ও নিজেদের বিকাশ নাম্বার থেকে ক্যাশ আউট করে নেয়।

তিনি আরও জানান, শাহনেওয়াজ অপহরণ চক্রের দলনেতা। গ্রেপ্তার ৮ জন আসামীকে আদালতে সোপর্দ করা হলে ৬ জন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে বলে জানা গেছে। আলী হোসেন, মোহাম্মদ ঘরামী ও রবিউল ঘরামীর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রয়েছে। মুন্সিগঞ্জের সদর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রয়েছে। এছাড়াও আসামি মো. আকবর সরদারের বিরুদ্ধে মাগুরার মহম্মদপুর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আইজে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত