ঢাকা, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষাক্রম নিয়ে নানামুখী গুঞ্জন ও সত্যান্বেষণ

  মো. জাহিদ হাসান (জয়)

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:১৬

শিক্ষাক্রম নিয়ে নানামুখী গুঞ্জন ও সত্যান্বেষণ

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে জন-জীবনে হাজির হয় নিত্য নতুন চাহিদা, যে চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে মানুষকে সংযুক্ত হতে হয় শিক্ষার নতুন নতুন দিকপালের সাথে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও এসডিজি'কে মাথায় রেখে শিক্ষার সর্বশেষ যুগান্তকারী সংস্করণ নতুন শিক্ষাক্রম ফ্রেমওয়ার্ক, তবে বর্তমান সরকারের অন্যান্য ভালো পদক্ষেপের মত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়েও চলছে নানামুখী গুজব ও গুঞ্জন।

বলা হচ্ছে গ্রামের স্কুলের উপকরণ কেনার সামর্থ্য নিয়ে বৈষম্য তৈরি হবার কথা অথচ বর্তমান সরকার ‘গ্রাম হবে শহর’ স্লোগানে এগিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে বাণিজ্য, চিকিৎসাসহ গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকীকরণের প্রতিনিয়ত পদক্ষেপ নিচ্ছেন বর্তমান সরকার। তাছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকদের অধিক কার্যকরী করা এবং কোচিং এর উপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা যা, গ্রামের শিক্ষার্থীদের সুবিধা প্রাপ্তিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।

শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হয় শুধু মুখস্থ নির্ভর বিদ্যা অর্জনের জন্য নয় বরং শিক্ষার সাথে দেশ ও সমাজের জন্য দলগত হয়ে কাজ করার মানসিকতাও তৈরি করা। বর্তমান শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদেরকে দেয় হচ্ছে দলগত কাজ, যা তাদেরকে যেমন ব্যক্তি সৃজনশীলতা জাগ্রত করতে সাহায্য করে সাথে সাথে সামাজিকীকরণের হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করে।

বর্তমানে শিক্ষার্থীদেরকে পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক লিখতে হচ্ছে যার কারণে পূর্বের মত ব্যাকরণের শুধু নিয়ম মুখস্থ করলেই কাজ শেষ হচ্ছে না বরং নিয়মের প্রায়োগিক দিক দেখা হচ্ছে সেই সাথে দক্ষতাও অর্জিত হচ্ছে।

শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া একটি চলমান পদ্ধতি, এখানে শিক্ষণপূর্ব, শিক্ষণকালীন ও শিক্ষণ পরবর্তীতে শিক্ষকদেরকেও নানামুখী জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন হয় যেন শিক্ষণ প্রক্রিয়া সর্বাধিক কার্যকরী হয়।

বর্তমান শিক্ষাক্রম মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের পূর্বেই শিক্ষকদেরকে অনলাইন-অফলাইনে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, শিক্ষক সহায়িকা, লিখিত নির্দেশনা, মূল্যায়নের জন্য ভিডিও টিউটরিয়ালসহ নানামুখী সহায়ক কার্যক্রমের সমন্বয় করা হয়েছে। এমনকি প্রতিনিয়ত মনিটরিং এর মাধ্যমে উদ্ভূত চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

শ্রেণিকক্ষে অধিক শিক্ষার্থী শিক্ষায় একটি আলোচিত সমস্যা যা শুধু আমাদের দেশেই বিষয়টি এমন নয় বরং বিশ্বের একাধিক দেশেই এই সমস্যা আছে। তবে অধিক বিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হবার সাথে সাথে আমাদের এই সমস্যা বর্তমানে অনেক কমে এসেছে।

বর্তমান শিক্ষাক্রমে সমস্যা সমাধান ভিত্তিক পদ্ধতি, দলগত কাজ প্রদান সংযুক্ত থাকায় শিক্ষার্থী কিছু সংখ্যক বেশি হলেও সকলকে কার্যকর করতে খুব বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না।

শিক্ষা যেমন একটি চলমান প্রক্রিয়া তেমন শিক্ষা একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়াও বটে। শিক্ষা শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝেই সীমাবদ্ধ নয় বরং শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে; শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান, পরিবার, সমাজ, সহপাঠী, অভিভাবকসহ অন্যান্য।

যা সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে বর্তমান শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে। এখানে শিক্ষার্থী মূল্যায়নে অংশ নিতে হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবককে যা শিক্ষার সামগ্রিক দিকটি প্রতিস্থাপিত হচ্ছে সাথে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীর সাথে সংযুক্ত সবাইকেই কার্যকর করে তুলছে। তাছাড়া বছরে দুইবার পরীক্ষার মাধ্যমে নয় বরং বছরব্যাপী শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে যা যেকোনো বিষয়ের জ্ঞানকে টেকসই করে তুলছে।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানামুখী গুঞ্জনের মাঝে একটি হচ্ছে বিদেশী শিক্ষাক্রমকে অনুসরণ করা। যা একেবারেই ভিত্তিহীন, কারণ শিক্ষাক্রমে যে বিষয়গুলোর উপর জোর নজর দেয়া হচ্ছে সেগুলো হলো- দেশীয় চাহিদার ভিত্তিতে বিষয়ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করা, দেশপ্রেম ও দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মানবোধ জাগ্রত করা, অঞ্চলভেদে সহজলভ্য উপকরণের ব্যবহারসহ সবকিছুই দেশীয় নিয়মতন্ত্রকে অনুসরণ করে।

একটি কক্ষে বিভিন্ন বুদ্ধাংকের শিক্ষার্থী অবস্থান করে তাই শিক্ষককে সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হয়। এক্ষেত্রে বর্তমান শিক্ষাক্রম নিজ থেকেই এই বিষয়টি সহজ করে দিয়েছে। এখানে দলগত কাজের মাধ্যমে সহপাঠী শিখনের সুযোগ তৈরি হয় যা কক্ষের সকলেই গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং শ্রেণিকক্ষের দুর্বল শিক্ষার্থীকেও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই।

শিক্ষাক্রমের আরও একটি যুগান্তকারী দিক হচ্ছে- শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রায়োগিক দিক। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার যেন বৈষম্যের তৈরি না করে সেদিক মাথায় রেখে করা হয়েছে হাই টেক, লো টেক ও নো টেক শ্রেণী যার মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানে যে রকম প্রযুক্তি আছে তার উপর ভিত্তি করে শিখন যোগ্যতা অর্জন করবে। সুতরাং, প্রযুক্তির ব্যবহার শহর বা গ্রামভিত্তিক কোন বৈষম্য তৈরি করবে না।

বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানকে ল্যাব থেকে বের করে পরিবার ও সমাজে কিভাবে প্রয়োগ করা যায় সেদিকে নজর দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে- একটি রান্নাঘরও একটি ল্যাবরেটরি হতে পারে। যা একাধারে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি ভীতি দূর করা ও উৎসাহ তৈরি করাকে প্রমোট করে হাতেকলমে শেখার প্রতি শিক্ষার্থীকে উৎসাহী করে তুলবে।

লেখক: প্রভাষক, শিক্ষা প্রশাসন বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত