ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আপডেট : ৪২ মিনিট আগে
শিরোনাম

ব্যালিস্টিক ট্রমা

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ১৬:৪৪  
আপডেট :
 ০৫ মে ২০২৪, ১৬:৫১

ব্যালিস্টিক ট্রমা
রাজীব কুমার দাশ। ফাইল ছবি

সুগন্ধি চন্দন বৃক্ষ। শ্বেত চন্দন। মর্ত্যের

বিবিধ উপকার করেন। স্বর্গলোকের

দেব দেবী চরণে নিজের সুগন্ধি বিলিয়ে বৃক্ষজনম স্বার্থক করেন। হঠাৎ হলো কী! মনের অফুরন্ত কষ্টে ভবঘুরে হলো এক চড়ুইপাখি। চন্দনবন নিবাসী হয়ে থাকার আর্তি অনুমতি চাইলো। বৃক্ষে থাকা প্রকাণ্ড জাত গোখরো পুষ্পক বেঁকে বসল। তার যুক্তি, সঙ্গদোষে লোহাও ভাসে। মানুষের ধারেকাছে থাকা পশুপাখিও ধীরে ধীরে মানুষের মতন ভয়ঙ্কর ভণ্ড অকৃতজ্ঞ বনে যান। মানুষ খারাপ তম গুণের প্রভাবে অমানুষের মতন আচরণ করেন। দৈব গুণ সম্পন্ন চন্দন বৃক্ষটি মানবজীবনে দস্যু বীরাপ্পনের সাথে তামিলনাড়ু স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অপারেশন 'কোকুন ' অভিযানে নিহত ব্যালিস্টিক ট্রমা সাগরেদ ছিলেন। মরলোলের নাম ছিল সেথুকুলি গোবিন্দন। মৃত্যুর পরে গোবিন্দন ধর্মরাজের কাছে এক অদ্ভুত বায়না ধরে বসলেন। বললেন,হে ধর্মাবতার! একবার হলেও আমার প্রতি কৃপা করেন। আমার কিছু কথা দয়া করে শুনুন। মরলোকের মানুষের মতন নিষ্ঠুর হবেন না।

: বলো। শোন গোবিন্দন। বেশি সময় দেয়া যাবেনা। পৃথিবীতে তোমরা ছিলে অত্যাচারী দস্যু। পুত্র বীরাপ্পনকে স্বপ্নে কত কত নিষেধ করেছি। অ্যারেস্ট হবার পরে জেলে বসে বার বার আমায় ডাকত। আমার কাছে শপথ করে বলত, জেলবন্দী জীবন তার ভালো লাগেনা। পোড়া রুটি মোটা ভাত পানসে ডাল সবজি বটি ব্লেড অপারেশন পাতলা মৎস্য খেতে বসে আমার প্রতি সমর্পণ ভক্তির ক্লাউড সিডিং ছিটানো পাউডার ছাড়া দর দর করে দু'চোখে কাপ্তাই ফারাক্কা বাঁধের অসময়ে খুলে দেয়া গেটের পানির ঢল নামত। একবার সুযোগ পেতে ভষ্মাসুর চালাকি কান্নাজলে গড়াগড়ি দিত।

বাছাধন! তোমাদের মনের কথা প্রাণের কথা সবই জানি বুঝি। দেখ, আমিত তোমাদের রক্ষাকর্তা। তোমাদের প্রাণ পুষ্টির যোগান দেয়। তোমাদের মা মুখের মতন যা যা বল তা তা করি। যা চাও তাও পূরণ করি। তোমাদের দেখভাল করতে আমার কোনো ঘর বাড়ি করিনি। তোমাদের হৃদয়ে আমার মসজিদ মন্দির প্যাগোডা বসতবাড়ি বাগানবাড়ি আশ্রম। মাঝে মাঝে তোমরা যখন মনে করতে থাক - নিজে নিজেরাই এক একজন একেশ্বর সর্বেশ্বর কংস ফেরাউন বারণ; কেবল তখনি প্রথমবারের সুযোগ শূণ্যস্হান দ্বিতীয় সংখ্যা দিয়ে পূরণ করি।

তোমাদের এত্তোসব জোচ্চুরি চালাকি মনভোলানো স্তুতিবাক্য, ' প্রথম বারের মতো ক্ষমা করে দিন।' না বুঝে কত কত সুযোগ করে দিয়েছি । কিন্তু বাপু! তোমরা এত এত চালাকি করে ইতরামি ফাতরামি করে কালক্ষেপণ কর যে, বিচার করতে গিয়ে বার বার দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আত্মশুদ্ধির দশ নীতি দোবারা দোষ নীতি মানবাধিকার প্রহসন মনে তোমাদের বিচার পর্যন্ত করতে পারিনা ঠিকঠাক মতন।

এই যে ধর - তোমরা তিনজন। যেদিন ক্রসফায়ারে নিহত হলে!? সেদিনও তোমাদের শোকে আমরা অমৃত সুধা পান করিনি। স্বর্গে দুন্দুভি বাজেনি। অপ্সরাগণ নৃত্য করেনি। আহা! বৎস। মনে করে দেখ,মর্ত্যে যেদিন তোমাদের চোখ বেঁধে টাস্কফোর্স আলাদা গাড়ীতে তুৃলল,কেউ একজন তোমাদের জিজ্ঞেস করল,' তোমরা নির্দোষ কিনা? ' তোমরা নিজেরাই বললে, ' আমরা বীরাপ্পন গুরুজীসহ মিলেমিশে কমপক্ষে চারশোর কম বেশ মানুষ খুন করেছি। মন্ত্রী মেরেছি। পুলিশ মেরেছি। বন প্রহরী মেরেছি। চন্দন কাঠ পাচার করেছি। হাতি মেরে দাঁত পাচার করেছি।' তারপরেও তোমরা প্রথমবারের মতো ক্ষমা চেয়েছিলে আমার কাছে। মনে করে দেখ বৎস! মর্ত্যের ফরিয়াদি কাঠগড়া প্রথম মুখে তোমাদেরও আমি ক্ষমা করেছি অসংখ্যবার। নিজেরা পরিশুদ্ধ হতে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছি। তোমাদের প্রহরী পুলিশদের কংস কারাগারের এক একজন প্রহরী বানিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি। মনে করে দেখ। তোমরা পালিয়ে গিয়ে সেদিন বিন্দুমাত্রও আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করনি; উপরন্তু তুমিত্বভারে চাম্বলের নতুন বিয়ে করা বউ নিয়ে মাস্তি করেছিলে সেইদিন। অসহায় মেয়েটি গলা দড়ি দেবার আগে নিষ্ঠুরতম অভিশাপ দিয়ে বলেছিল,' পরের জনমে চন্দন বৃক্ষ, ভয়ঙ্কর গোখরো, চড়ুই পাখি হয়ে তোমাদের জন্মাতে হবে। '

প্রায় বছর বাইশ পেরোনোর পরে দস্যু রত্নাকরের মতন পাপের ঢিবি ক্ষয়ে শ্বেত চন্দন বৃক্ষের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে কর্ণাটকের আগুম্বে গহীন অরণ্যে। বিষধর ভয়ঙ্কর সাপদের তীর্থ এখানে। বেধড়ক হিসহিস ছোবল বিষ হিংসে জ্বালা মেটাতে সুদূর আফ্রিকা আমাজন হয়ে চীন ভিয়েতনাম হতে নদী সাগর পাহাড় পেরিয়ে সাপেরা চন্দন বৃক্ষ বক্ষে পূর্ণ্যি সেরে যান।

তামিলনাড়ু কর্ণাটক কেরালা অপরাধের স্প্যান - দস্যু সর্দার মুনুসামি বীরাপ্পন তার সহযোগী সেথুকুলি গোবিন্দন, চন্দ্রে গৌদর এবং

সেথুমনি - তামিলনাড়ু স্পেশাল টাস্ক ফোর্স অফিসার বিজয় কুমারের

সক্রিয় নেতৃত্বে এন কে সেন্টমারাই কান্নান হাতে ব্যালিস্টিক ট্রমাতে চিরতরে ঘুমিয়ে যান।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কবি, মেইল: [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পঠিত