বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারে তথ্যমন্ত্রীর সতর্কতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:২২
সরকারের অনুমতি ছাড়া ও কর না দিয়ে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যাপারে দেশের কেবল অপারেটরদের সতর্ক করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী এই সতর্কতার কথা বলেন। টেলিভিশন সাংবাদিকদের নবগঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র’র উদ্বোধন ও সম্প্রচার সম্মেলন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে কর্মরত কর্মীদের কাজের নিরাপত্তা, ঝুঁকি মোকাবিলাসহ গবেষণা ও নীতি সহায়তায় কাজ করবে এই কেন্দ্রটি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের কেবল অপারেটররা ডাউনলিংক করে বিদেশি চ্যানেল প্রদর্শন করছেন৷ বিদেশি চ্যানেল প্রদর্শন কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু সরকারের অনুমতি ছাড়া ও কর না দিয়ে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করা আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ। যারা এই কাজগুলো করছেন, তারা আইন লঙ্ঘন করছেন৷ তিনি আশা করছেন, সরকার কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করার আগেই তারা এই কাজ থেকে বিরত হবেন।
দেশের গণমাধ্যম এখন যথেষ্ট স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী। আত্মপ্রত্যয়ী প্রজন্ম তৈরিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান তৈরির ক্ষেত্রে সমাজের অসংগতির পাশাপাশি দেশ গঠনের লক্ষ্য মাথায় রাখতে হবে। সমাজকে সঠিক পথে চালিত করার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে স্বপ্নের বাংলাদেশের বার্তা দেওয়ার অনুরোধ জানান মন্ত্রী।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছি। এগুলো সমাধান করবো। আপনাদের মতামত নিয়ে এগুলো সমাধান করা হবে।
নতুন সরকার গঠনের পর মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় নবম ওয়েজ বোর্ডের নিয়ে আলোচনা হয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, প্রথম বৈঠকে নতুন করে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী সেটির অনুমোদন দিয়েছেন। নবম ওয়েজ বোর্ডের ভেতরে সম্প্রচার সাংবাদিকদের বেতনের ক্ষেত্রে আলাদা নীতিমালা করার কথা বলা আছে। টেলিভিশনগুলোতে যেন সঠিক সময়ে বেতন হয়, সে বিষয়ে মালিকদের নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশে প্রাইভেট চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয়েছে। ১৯৯৬ সালে যখন তিনি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তখন প্রথম প্রাইভেট চ্যানেল যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে দেশে ৩০টিরও বেশি সম্প্রচারমাধ্যম কাজ করছে, ৪৪টি সম্প্রচারমাধ্যম লাইনে আছে। এই সংখ্যা পশ্চিম বাংলার থেকেও বেশি।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। উদ্বোধনকালে তিনি প্রত্যাশা করেন, কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড, ঝুঁকি মোকাবিলা, পেশাগত ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানো, গবেষণা ও নীতিসহায়তার লক্ষ্য সামনে রেখে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র কার্যকরভাবে এগিয়ে যাবে।
সম্মাননা পর্বে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র গঠনে ভূমিকা রাখায় তিনজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক সংগঠনের চেয়ারম্যান ও একাত্তর টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ সদস্যসচিব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
সম্মাননা পর্ব শেষে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের বার্তাপ্রধান মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় শুরু হয় মূল আলোচনা। ‘সম্প্রচার শিল্প: একটি সম্ভাবনার সংকট’ শীর্ষক ঘণ্টাব্যাপী এই আলোচনায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বাবু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
এই সম্মেলনে সাংবাদিকদের অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে কল্যাণমূলক ও ঝুঁকি মোকাবেলা স্বাস্থ্যবীমা, অসুস্থতা সহায়তা প্রকল্প, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, সম্প্রচার কর্মীদের ওয়েজ বোর্ড এর আওতায় আনা ইত্যাদি। সম্মেলনে অভিযোগ তোলা হয়, দেশের বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে বিদেশি চ্যানেলে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না এসব কার্যক্রম। এজন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রচার গণমাধ্যম কর্মীদের কল্যাণ, পেশাগত, আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ঝুঁকি মোকাবেলা ও নিরাপত্তা বিধান এবং পেশা ও শিল্পের উন্নয়ন সাধনে ইতোমধ্যে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের উদ্যোগের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।