ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বিরোধী দল চায় আওয়ামী লীগ

  তৌফিক ওরিন

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ২০:২৮  
আপডেট :
 ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৩৭

স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বিরোধী দল চায় আওয়ামী লীগ

একজন পুরোদস্তুর রাজনীতিক আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফরিদপুরে। তবে রাজনীতির হাতে-খড়ি ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৬৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহা হত্যার প্রতিবাদে স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এটি ছিল তার জীবনের প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে গণঅভ্যুত্থান চলাকলীন সময়ে হাটে বাজারে প্রচার-প্রচারণা, ৭০ এর নির্বাচনে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা, ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, দেশ স্বাধীনের পর ফরিদপুর ইয়াসিন কলেজ ছাত্রসংসদে এজিএস-জিএস নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। আদর্শিক পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতে তিনি রাজপথে নামেন। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চলে যান প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে। সেখানে মানবেতর জীবন যাপনের মধ্যদিয়েও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে সংগ্রাম চালাতে থাকেন। দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। তারপর থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৬ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এই নেতা।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুর রহমান ২০০২-এর সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আসেন। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তিনি খুলনা বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৯ সালের সম্মেলনে তাকে কার্যনির্বাহী সদস্য করা হয়। ২০১২ সম্মেলনেও তিনি কার্যনির্বাহী সদস্যই থেকে যান। সর্বশেষ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান আব্দুর রহমান। এছাড়া ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারি উপজেলা থেকে দুইবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

দেশে চলমান উপজেলা নির্বাচন, আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনসহ সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌফিক ওরিন।​

বাংলাদেশ জার্নাল: দেশে এখন উপজেলা নির্বাচন চলছে, আপনি সব সময় শৃঙ্খলার কথা বলে আসছেন। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী দেখছি, বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন? আর ভোটার উপস্থিতি নিয়ে এক ধরণের প্রশ্ন রয়েছে, নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়ে কথা বলেছে। এটা নিয়ে দলের মধ্যে কোন ধরণের অস্বস্তি রয়েছে কিনা?

আব্দুর রহমান: অস্বস্তিতে আমরা নেই, তবে বিষয়টা উদ্বেগজনক যে ভোটারদের অনাগ্রহ বা ভোট কেন্দ্রে না আসা। এটা অনেকে ধরেই নেয় বা এক ধরণের মাইন্ডসেট থাকে যে অমুক তো হবেই, সুতরাং গেলেও হবে বা না গেলেও হবে অথবা তার জনপ্রিয়তা বা তার প্রতিদ্বন্দ্বি যিনি আছেন তার একটা দুর্বল অবস্থান; সবকিছু মিলে এরকম একটা অবস্থা থেকে হতে পারে, ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে। আরেকটা বিষয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল্যবোধ ধারণ করে এমন একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি আজকে মারাত্নকভাবে অনুপস্থিত আছে, এটা অস্বীকার করার কোন কারণ নেই। বিএনপি একটা অশুভ রাজনৈতিক দল বলে আমি মনে করি। এর নেতৃত্বের শূন্যতা বা এর নেতৃত্বের মা-বাপ কেউ খুজে পায়না। জগাখিচুড়ি এবং পাচমিশালি একটা নেতৃত্ব দিয়ে সামনে যে ভিশন এবং সামনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে মানুষকে বলা বা মানুষকে সেই জায়গাটায় আনা এটা তাদের মধ্যে নাই। আর যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী বা তাদের উত্তোরাধিকাররা সেই দলের মধ্যে মারাত্নকভাবে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। সুতরাং এটাও মানুষের মধ্যে এক ধরণের নেতিবাচক ধারণা সেই দলের প্রতি আছে। সেক্ষেত্রে এখন যেটা প্রয়োজন অবশ্যই একটা শক্তিশালী রাজনৈতিক বিরোধী দলের উত্থান হওয়া প্রয়োজন এবং সেটি হতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধারণ করে, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এ রকম একটা রাজনৈতিক শক্তির উত্থান প্রয়োজন। তাতে আজকের যে অভাবগুলো আমরা বোধ করছি, সেই শূন্যতাগুলো থাকবে না। আজকে যদি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হতো তাহলে আজকে এই প্রশ্নগুলো আসতো না। ভোটারদের কেন্দ্রে আসার ব্যাপারে উদাসীনতা, কম উপস্থিতি বা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন যথার্থ অর্থে মানুষ যেভাবে দেখতে চায় সেভাবে অনেক ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় না হওয়া এই সমস্যা গুলো থাকতো না।

এখন দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এখন বিএনপি দলগতভাবে নির্বাচনে আসছে না এবং অনেকেই মনে করে যে তারাই একমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি। কিন্তু তাদেরকে আমি বিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তি বলবো। এই অপশক্তিকে রুখতে হলে একটা গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হওয়া প্রয়োজন, এবং এটা আমাদের নেত্রীও বলে থাকেন, যে হ্যা আমিও চাই যে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি থাক। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে তার অনুপস্থিতিটা এখনো আছে। তবে বিশ্বাস করি কালক্রমে এবং প্রয়োজনের খাতিরে এরকম একটা বিষয় আমরা দেখতে পাবো এবং এক সময় না এক সময় একটা বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি দাড়াবে যারা আজকে এই সরকার দলীয় ভুলভ্রান্তি বা গঠনমূলক সমালোচনা তারা করতে পারবে। কিন্তু অবশ্যই রাজনীতির দর্শনগত জায়গাটা যেন একই ধারায় চলে। রাজনীতির দর্শনের জায়গাগুলো বলছি আমি এই কারণে যে অবশ্যই সেই রাজনৈতিক শক্তির ভিত্তি হতে হবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। রাজনৈতিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধটা ধারণ করা, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে উর্ধ্বে তুলে ধরা এবং দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক শক্তির ভাবনা নিয়ে দাড়ানো। এই অর্থে রাজনীনির মূল অর্থ ঠিক রেখে একটা বিকল্প শক্তির উত্থান হোক তাতে বরং সামগ্রিক রাজনীতি উপকৃত হবে।

যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে যাইনি সেহেতু কিছুটা উদাসীনতা ভোটারদের মধ্যে আছে সেটা আমরা অস্বীকার করিনা। তবে খুব বড় উদ্বেগও লক্ষ্য করিনা এই কারণে যে, যেভাবেই হোক একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যে কারণে আমরা দলীয়ভাবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যারা দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করছেন তাদের ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নেইনি। আামদের মূল লক্ষ্য যে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন থেকে যেন হানাহানি মারামারি রক্তপাত এগুলো যেন না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের একটা সতর্কতা আছে। প্রশাসনকে সরকারের পক্ষ থেকে সেই ভাবে নির্দেশনা আছে যে কোন অবস্থাতে এই ধরণের প্রাণহানী ঘটে বা একটা রক্তপাত হয় বা মারামরি,হানাহানি, কাটাকাটি হয় এগুলো কোন অবস্থাতেই এলাউ করা যাবে না। তবে একটা ভালো দিক আমি বলবো যে অতিচমৎকার ফেয়ার ইলেকশন হচ্ছে। সুতরাং এই জায়গা থেকে আমাদের একটা আশার সঞ্চার হয়েছে যে মানুষ তাদের ইচ্ছা বা মতামত প্রকাশ করে তাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: এ বছরই শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। আসন্ন ২১তম জাতীয় সম্মেলন নিয়ে আলোচনাও বেশ জমে উঠেছে। অতীতের কমিটি গঠন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই নতুন চমক সৃষ্টি। সম্মেলনে এবার কেমন চমক থাকবে এবং সম্মেলনের প্রস্তুতি কতটুকু?

আব্দুর রহমান: চমক কি থাকবে সেটা যিনি চমক দেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন। চমকের ব্যাপারটা আমরা আগাম বলতে পারবো না। তবে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হবে এটা নেত্রীর মুখ থেকে নিজেই শুনেছি, তিনি কাউন্সিল করতে চান। সেক্ষেত্রে সম্মেলন যথা সময়েই হবে। চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরেই সম্মেলনের যে সব পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে সেগুলোর কাজ শুরু করবো। যেমন দীর্ঘ দিন কমিটি না থাকা জেলা ও উপজেলা চিহ্নিত করে সে গুলোর সম্মেলন শেষ করা। সত্যি বলতে আওয়ামী লীগ যেহেতু একটা বড় দল, সেহেতু এখানে বিভিন্ন ধরণের মতভেদ মতনৈক্য থাকে। যদি কোন মতভেদ বা নিজেদের ভেতর কোন্দল থাকে সেগুলো চিহ্নিত করে নিষ্পত্তি করার বিষয় রয়েছে। তাছাড়া কাউন্সিলর তালিকা প্রস্তুত করা। প্রথমত সম্মেলনের তারিখটা নির্দিষ্ট করা এবং এটি যথার্থ অর্থেই আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি ঠিক করবেন। তারখি ঠিক করার পর সম্মেলন প্রস্তুতি নিতে তিন চার মাস যে সময়টা লাগে সেই সময়টা আমরা এই সমস্ত কাজে ব্যয় করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল: যে কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সম্মেলনের আগে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগ যেহেতু উপমহাদেশের প্রাচীন এবং দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন সেহেতু নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা এখানে বেশিই হবে। সামগ্রিকভাবে বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?

আব্দুর রহমান: নেতৃত্ব নির্বাচন বা কমিটি গঠন যাই হোক আমাদের সংবিধানে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা সমস্ত ক্ষমতাই আমাদের নেত্রী দলীয় প্রধানের কাছে ন্যাস্ত করে থাকেন। সুতরাং তিনিই ঠিক করবেন কিভাবে কি হবে। তবে আমি আমার জায়গা থেকে বলতে পারি আমাদের দলের জন্য কেবলমাত্র শেখ হাসিনাই অনিবার্য ও অপরিহার্য এবং আমরা আশা করি তিনি যতদিন শারীরিকভাবে সমার্থ থাকবেন ততদিন দলের জন্য কন্ট্রিবিউট করবেন। আমরাসহ সারা দেশের নেতাকর্মীরাও এটাই আশা করেন। আমাদের সামগ্রিক রাজনীতি, পরিকল্পনা, কার্যক্রম বা ভাবনা সবকিছুই আমাদের নেত্রীকে ঘিরেই। ১৯৮১ সালে উনি যদি দেশে না আসতেন তাহলে আজকের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবার কথা দূরে থাক, নানা ধরণের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, দ্বিধা-বিভক্তি, কোন্দল, উপ-কোন্দল সবকিছূ মিলে দল বিলিনের পথে চলে যেত। উনি সংগঠনের হাল ধরেছেন বলেই আওয়ামী লীগ চার বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসছে। সুতরাং তার নেতৃত্ব খুবই অপরিহার্য। তার পরেই যে নেতৃত্বগুলো উনি ঠিক করে থাকেন, উনার সুবিবেচনাপ্রসুত সিদ্ধান্ত সকলেই মেনে নেন। সেক্ষেত্রে কোন নেতৃত্বে কাকে আসবেন, কোন নেতৃত্ব পরিবর্তন করবেন সেটা একান্তই নেত্রীর মনস্থির করার বিষয়। এজন্য আমি বলবো উনার উপর নির্ভর করাটাই মঙ্গলজনক এবং স্রেয়। তাতে সংগঠনের উপকার হবে এবং দলের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধও অটুট থাকবে। আমি মনে করি এই দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা বা কেউ কোন নেতৃত্বে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই না। সুতরাং উনিই সব কিছু ঠিক করবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল: আওয়ামী লীগ টানা তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। রাষ্ট্রপরিচালনাকারী দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আপার উপদেশটা কি হবে?

আব্দুর রহমান: কোন রাজনৈতিক দল আদর্শিক জায়গা ধরে রাখতে না পারলে সেই দল আর থাকে না। পাঁচমিশালী বিএনপি পাঁচ জায়গা থেকে পাঁচজনকে এনে দল গঠন করেছে এবং সেই দলের অস্তিত্ব আজ সংকটাপন্ন। সুতরাং আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন আমাদের আদর্শ এবং শেখ হাসিনার সততা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আমাদের উচিত হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করে আমরা লোভ ও পাওনা দাওনার হিসাব থেকে উর্ধ্বে উঠে নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করা। এই লক্ষটি রাজনৈতিক সকল নেতাকর্মীর মনে রাখা দরকার। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সহায় সম্পদ, বিত্ত বৈভবের আকাঙ্খা থেকে নিবৃত্ত হতে হবে। এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশের ভৌগলিক সীমানার বাহিরেও সারা বিশ্বে প্রমাণ হয়েছে আমাদের নেত্রী একজন সৎ রাষ্ট্রনায়ক। সুতরাং তার আদর্শও অনুসরণ করতে হবে। তাহলে এই দলের উপর কেউ কোন দিন আঘাত হানতে পারবে না। এই দলের নেতাকর্মীরা সত্যিকার অর্থে তাকে অনুসরণ করে চলে, তার দর্শনকে অনুসরণ করে চলে তাহলে দল উত্তোরত্তর এই দলের সমৃদ্ধি বা আরো মজবুদ কাঠামো তৈরি হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল: দেশে সড়ক দুর্ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত কেড়েি নিচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীর বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। সড়ক আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের পারফমেন্সে দলের মূল্যায়ন কি?

আব্দুর রহমান: আমাদের দুর্ভাগ্য যে যখন কোন ইস্যু তৈরি হয়, তখন এই ইস্যু নিয়ে একটিভ হয়ে যাই। এবং কিছুদিন পরে এতে ভাটাও পড়ে। কিন্তু আমি বলবো যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থ অর্থেই এটির প্রতি তার সদিচ্ছা রয়েছে এবং তিনি নিরাপদ সড়ক করবার জন্য যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন বা হাত দিয়েছেন সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে তিনি কথাবার্তা বলেছেন। নীতিগতভাবে কিছু সিদ্ধান্ত হওয়া জরুরী। যারা চালক রয়েছেন, তাদের লাইসেন্স বিহীন অনেক গাড়ি রয়েছে, এমনকি যিনি চালক তারও পরিপক্ক চালক হিসেবে গাড়ির স্ট্রিয়ারিংটা ধরবে তার আগেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে যত্রযত্র তাকে ড্রাইভার বানানো হচ্ছে, এবং সে বেপরোয়াভাবে চালায়। এই জায়গা গুলো এড্রেস করা দরকার। সম্প্রতি একজন শ্রমিক নেতা বলেছেন যে আবরারের হত্যাকারীর শাস্তি হলে কোন আপত্তি নেই। এই স্টেটমেন্টটা একটি ইতিবাচক দিক। সব সময় জোর জবর দস্তি করে দাবি আদাইয়ের লক্ষকে সামনে নিয়ে আইন অমান্য করা, নিয়ম শৃঙ্খলা না মেনে চলার যে প্রবণতা সেই জায়গাটাকে শক্তভাবে ধরা। আমি মনে করি এটা শক্তভাবে ধরলে সামাজিকভাবে কিছু অসুবিধা হলেও সেটা করা দরকার। কারণ এই নিরাপদ সড়কের দাবি যারা ভিক্টিম হয় শুধু তাদের না, আমাদের সর্ব শ্রেণীর সব পর্যায়ের মানুষের নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। আর একটা বিষয় আমরা যারা পথে ঘাটে চলাফেরা করি, আমাদেরও একটু সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার, নিজের নিরাপত্তার কথাটা চিন্তা করে ট্রাফিক আইনটা মেনে চলা। নিজের নিরাপত্তার কথাটা আগেড় নিজেকেই বিবেচনা করতে হবে। এই জায়গা থেকে সচেতনতামুলক কর্মসূচিও সরকারের পক্ষ থেকে যেমন নেয়া উচিত, এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও প্রশাসনকে সহযোগিতা করা উচিত।

বাংলাদেশ জার্নাল: এরই মধ্যে আপনার দলের একজন শীর্ষ নেতা সরকারের সড়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে একটি মন্তব্য করে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। সড়ক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়য়ের কার্যক্রমে আপনি কতটুকু সন্তষ্ট?

আব্দুর রহমান: সন্তুষ্ট-অসন্তুষ্ট একটা আপেক্ষিক বিষয়। আমি এভাবে কথাটা না বলে বলছি যে, মন্ত্রণালয়, ডিপার্টমেন্ট বা অধিদপ্তর তারা আরো যদি আন্তরিক হন বা শৃঙ্খলা বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসেন তাহলে আমরা সকলেই উপকৃত হবো এবং তাদের এগিয়ে আসা উচিত। নিরাপদ সড়কের দাবিটিকে নিশ্চিত করার জন্য অধিকতর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।

বাংলাদেশ জার্নাল: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন পরিচলান কমিটিতে আপনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাছাড় গত ১১ মার্চ যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে ছাত্রলীগের যে প্যানেলটা ছিল সেখানে নির্বাচন পরিচালনায় অন্যতম দায়িত্বে ছিলেন। তবে অতীত পর্যালোচনা করলে এই প্রথম ছাত্রলীগের বূমিধ্বস বিজয় অর্জিত হয়েছে। দলেরে নেতাকর্মীদেরও এখন দাবি আছে আগামীতে আপনাকে আরো অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেখার। এই বিষয়গুলো আপনি কিভাবে দেখছেন?

আব্দুর রহমান: বিষয়টা হচ্ছে, যে ফলাফল অর্জিত হয়েছে, সেটা একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের একটা সন্তোষজনক অবস্থান হয়েছে সে বিষয়টা বিবেচনায় নেবো। সাধারণত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজ, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা থাকে এবং তাদের প্রতিবাদের ভাষা একটা এন্টি স্টাবলিস্টমেন্টের বিরুদ্ধে সব সময় যায়। আমারা যারা ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলটা দেখভাল করছিলাম সেখানে আমাদের মূল বক্তব্যের স্পিডটাই ছিল, যেহেতু একটা এন্টি স্টাবলিস্টমেন্ট সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ডাকসু বা হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে পক্ষে নিতে চায় সেই শক্তিকে পরাজিত করতে হলে বর্তমান স্টাবলিস্টমেন্টের যিনি মূর্ত প্রতীক আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে অভাবনীয় উন্নয়ন এবং তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা ছাত্র সমাজের মাঝে নিয়ে তাদেরকে আকৃষ্ট করতে হবে। আজকে ছাত্র সমাজের যে অভাব-অভিযোগ বা দাবি দাওয়াগুলো আছে এটাকে এড্রেস যিনি করতে পারবেন তাকেই সেখানে প্রজেক্ট করতে হবে। এবং এই প্রজেকশন হলো এন্টি স্টাবলিস্টমেন্ট ফোর্সের বিরুদ্ধে রাজনীতি। সুতরাং সেই কাজটি ছাত্রলীগ করতে পেরেছে এবং প্রতিপক্ষরা বিচ্ছিন্নভাবে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে তেমন সুবিধা করতে পারিনি।

বিছিন্ন বিক্ষুদ্ধভাবে কোটা আন্দোলন বা অন্য সব কিছু ‍মিলে তারা একটা প্যানেল দিয়েছে যদিও। আমরা একটা ভিপিও হারিয়েছি। তবে ভিপি হারানোর বিষয়ে আমার ভেতরে একটা বেদনার সুর আছে, আমার ভেতরে একটা হতাশার সুর আছে, সেই জায়গা থেকে এক কথায় বলবো যে ছাত্রলীগ যদি ঐক্যবদ্ধ ও সম্মেলিত প্রয়াস যদি আন্তরিকভাবে রাখতে পারতো তাহলে এই পদটিও আমরা হারাতাম না। এই জায়গায় আমাদের একটি হতাশা বা বেদনার সুর আছে। তবে মনে করি এর পরেও একটি অসামন্য বা অসাধারণ সাফল্য ছাত্রলীগ অর্জন করেছে। এজন্য ছাত্রলীগের নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাবো এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তিনি ছাত্রলীগের সার্বোক্ষণিক মনিটরিং করেন তাকেও আমি অভিনন্দন জানাবো। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল সাধারণ শিক্ষার্থী যারা ভোট দিয়েছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাবো।

আর একটি বিষয়ে বলবো যে নেত্রী আমাদেরকে যখন যেখানে দায়িত্ব দেন সেই দায়িত্বটা সুষ্ঠূভাবে পালন করবার যে স্বীকৃতি মেলে এটিই আমাদের বড় পাওয়া, এটিই আমাদের বড় পদ, এটিই আমাদের অধিকতর সম্মান। সুতরাং উনার দেয়া দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি সেজন্য আমি গর্বিত এবং মনে করি এটিই আমার জীবনের বড় পাওয়া।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত