ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেই ‘প্রতারক লেডি টিউটর’ এবার ‘জালিয়াত’ হিসেবে আটক!

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ২৩:৫৯

সেই ‘প্রতারক লেডি টিউটর’ এবার ‘জালিয়াত’ হিসেবে আটক!

ফেসবুকে তিনি পুলিশের এএসপি! মেডিকেলে গিয়ে বিএমএ নেতা। আবার আদালতে তার পরিচয় তিনি বড় অ্যাডভোকেট! তিনি ফয়েজ আলী। অবশ্য তাকে সবাই মাহি নামেই চেনেন। বয়স আর কত হবে ৩৯ কি ৪০।

কথিত এই তুখোড় মেধাবী ব্যক্তিটির বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ জোয়ারা গ্রামে। এই মাহি একই সঙ্গে কখনো ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো নারী ম্যাজিস্ট্রেটের স্বামী, কখনো বা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র। পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত!

অসহায় মেয়েদের টিউশনি দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করায় ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীর পাচঁলাইশ হাসপাতালের সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ‘বহুরূপী’ এই প্রতারক। গ্রেপ্তারের পর প্রতারণার কৌশল অকপটে স্বীকার করেন তিনি। তখন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘লেডি টিউটর প্রতারক গ্রেপ্তার’ শিরোনামে তাকে নিয়ে সংবাদ ছাপা হয়।

এবার সেই প্রতারক লেডি টিউটর আটক হলেন জালিয়াত হিসেবে। মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মোকাররম ভবন এলাকা থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নেন। আটকের পরে ঢাবি প্রক্টরিয়াল টিমের সাহায্যে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়।

সূত্র জানায়, ফয়েজ আলী থাকেন রাজধানীর কমলাপুরের নুরজাহান হোস্টেলে। এর আগে সে ‘লেডি টিউটর আবশ্যক’ এ ধরনের সাইনবোর্ড লাগিয়ে মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। পরে টিউশনিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের নগরীর একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে ছবি তুলত ফয়েজ। ছবিগুলোকে পরে এডিট করে ‘আপত্তিকর’ করা হতো। এসব ছবি ফাঁস করার হুমকি দিয়ে টাকাও আদায় করতো সে।

এদিকে জালিয়াতি করে টাকা নেওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী আহসান হাবীব বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ফয়েজ আলী তাকে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পরিচিত লোকজনের মাধ্যমে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে জানায়। কিন্তু খরচপাতি বাবদ দুই লাখ টাকা দাবি করে। এছাড়া এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পিএসও তার পরিচিত বলে জানায় সে।

হাবিব বলেন, প্রথম দফায় সে ৩০ হাজার টাকা নেয়। এরপর আরেকদিন ২০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। বলে যে, এ টাকা না দিলে রোল আসবে না। জজ কোর্ট, রাজমনি হোটেল এসব এলাকায় গিয়ে টাকা দিতে হয় তাকে। ১২তম জুডিশিয়ারিতে দ্বিতীয় হয়ে সে জজ হয়েছে বলে জানায়।

তিনি বলেন, এরপর ফয়েজ আলী মেসেজের মাধ্যমে আইডি ও রোল পাঠায়। ব্যাংক থেকে এভাবে হয় না জানালে সে মেইল করে জানিয়ে দিবে বলে জানায়। এরপর সে ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের প্রথম অক্ষর দিয়ে একটি মেইল আইডি খুলে সেখান থেকে মেইল পাঠায়। তখন আমার মনে হলো যে, ব্যাংক থেকে মেইল আসলে ব্যাংকের নিজস্ব একাউন্ট থেকে এইচআরের মাধ্যমে আসবে।

হাবিব বলেন, বিষয়টি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত বড় ও ছোট ভাইদের জানালে তারা ফয়েজ আলী একজন ফ্রড বলে জানায়। এরপর তাকে আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে বলি। দুপুরে সে টিএসসি আসে। পরে সে আমাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে কথা হয় জালিয়াত ফয়েজ আলীর সঙ্গেও। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি এলএলবি ও এলএলএম ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন ইউনির্ভাসিটি অব লন্ডন থেকে। এর আগে তিনি পুলিশের ৩০ তম ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন বলে জানান।

বাংলাদেশ জার্নালের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি এসব কিছুই ঘটে নি বলে জানান। বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে আমি অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করছি।

টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সরাসরি টাকা নেই নি। টাকা নেওয়ার জিম্মাদার ছিলাম।

টাকা নেওয়া এবং তার জিম্মাদার হওয়া দুটোই সমান অপরাধ কিনা- জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেন নি।

লেডি টিউটর হিসেবে প্রতারণার অভিযোগে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কিছুই ঘটেনি। তখন আমার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। আমি সে মামলা থেকে খালাস পেয়ে গেছি।

তাকে আটকের পর শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, পরবর্তীতে রমনা থানায় শিফট করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এটা রমনা থানা দেখবে, তাই তাকে রমনা থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত