ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাক্ষাৎকারে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

সুলতান-মোকাব্বিরকে জেতানো হয়েছে

  কিরণ সেখ

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:০১  
আপডেট :
 ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:১৮

সুলতান-মোকাব্বিরকে জেতানো হয়েছে

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য। সরকারবিরোধী নানা আন্দোলনে অগ্রগামী একজন হিসেবেই তাকে গণ্য করে তার দল বিএনপি। দলের জাতীয় কাউন্সিল, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তিসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে কথা বলেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কিরণ সেখ।

বাংলাদেশ জার্নাল: গত ১৯ মার্চ বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কবে নাগাদ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: জাতীয় কাউন্সিল নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর। ইচ্ছে করলেই কাউন্সিল করা যায় না। কারণ জাতীয় কাউন্সিলের আগে দলের অনেক কাজ থাকে। যদি পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনুকূলে থাকে, তাহলে সেই কাজগুলো করা যায়। কিন্তু দলের পুনর্গঠনের কাজ সব সময় চলে। যখন যেখানে পুনর্গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন সেখানেই করা হয়। কিন্তু গত ১২ বছর ধরে আমরা এক সাথে বসতে এবং সাংগঠনিক কাজ করতে বাধার সম্মুখিন হচ্ছি। সেই কারণে যেভাবে চাচ্ছি, সেভাবে করা যাচ্ছে না। বাস্তবতা হলো, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ নেই এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাবের কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথভাবে সংগঠিত হতে পারছে না। একমাত্র ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর একই অবস্থা। আর এক্ষেত্রে প্রশাসনও তাদের পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছে। আমার মনে হয় যে, অলিখিতভাবে ক্ষমতাসীন দল পরিচালনার দায়িত্বে প্রশাসন।

বাংলাদেশ জার্নাল: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পরে দলের ভেতরের দুর্বলতা ও দ্বন্দ্বের বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে কথা বলছেন, এই দুর্বলতা ও দ্বন্দ্ব বিএনপি কি কাটিয়ে উঠতে পারবে?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আক্ষরিক অর্থে হয়েছে বটে; বাস্তবে কোনো নির্বাচন হয়নি। আগে দিন রাত ১২টায় ভোট দেয়া হলো। ওই নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। কাজেই এই যে তথাকথিত একাদশ নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত, এই কথাটি ঠিক নয়। পরাজয় যদি হয় তাহলে ক্ষমতাসীনরা পরাজিত, প্রত্যেকটা ভোটার পরাজিত এবং গণতন্ত্র পরাজিত। আর ৩০ তারিখে যে ভোট, এই ভোটে কেউ জয়ী নয় এবং কেউ পরাজিতও নয়।

বাংলাদেশ জার্নাল: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোটের বাইরে নতুন জোট গঠন করে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কি সঠিক ছিলো? এবিষয়ে আপনার মতামত কী?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: সময়ের ব্যবধানে একটা সিদ্ধান্ত কখনো কখনো মনে হয়, সিদ্ধান্তটা ভুল ছিলো। তবে এই ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা ভুল ছিলো না। আর যথারীতি নির্বাচন হলে এই ঐক্যকে যথার্থ মূল্যায়ন করা সম্ভব হতো।

বাংলাদেশ জার্নাল: একাদশ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে দুই জন নির্বাচিত প্রার্থী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন, এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: আমরা জোট গঠন করেছি বিজয়ের আশা নিয়ে। কিন্তু এই দুই-চার জন অনেকটা অতিরিক্ত। আর তারা মনে করে যে, তারা বিজয়ী। কিন্তু আমরা মনে করি তারা বিজয়ী নন। এসব জায়গায় সরকার মনে হয় একটু নজর কম দিয়েছে। আমার মনে হয়, সরকার তাদেরকে ছাড় দিয়েছে। তাদের হয়তো কাজে লাগিয়েছে (সরকার)। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন। কাজেই তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নন। তাই এটা আমি অস্বাভাবিকভাবে নয়, স্বাভাবিকভাবে দেখি। আর এখন তিনি (সুলতান মনসুর) যে ধরনের কথা বলছেন, তাতে মনে হয় না যে, তিনি বর্তমান সরকারের ভাবনার বাইরের কেউ! অপরদিকে আরেকজন (মোকাব্বির খান) আমি তাকে চিনতাম না- এখন চিনলাম। সে এই দেশে রাজনীতি করতো কি না এবং জন্মের পর এদেশে কতদিন বসবাস করেছেন, সন্দেহ হয়। আর যার সংসদ ভবনে হাঁটা-চলার কথা না...। সুতরাং তার রাজনীতি আদর্শভিত্তিক নয়।

বাংলাদেশ জার্নাল: রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবেন। এজন্য সরকার ও বিএনপির মধ্যে একটা সমঝোতা হচ্ছে- এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: এই গুঞ্জনটা মনে হয় মিডিয়ার তৈরি। আর যারা লিখছেন, তারা সদ্বিচ্ছায় লিখছেন না। সরকারের কারো কারো নির্দেশে এ ধরনের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ বিএনপি কোনো গোপন সংগঠন নয়। বিএনপি একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। সুতরাং বিএনপির কর্মকাণ্ড গোপন থাকবে কেন? বিএনপির কাজ হবে প্রকাশ্যে। আর আমি দল করি, কিন্তু বিষয়টি আমি জানি না! এই বিষয় নিয়ে এই মুহূর্ত পর্যন্ত এক বা একাধিক ব্যক্তির (সরকার-বিএনপি) সঙ্গে আলোচনা হয়নি। পত্রিকা কোথা থেকে পায়? তাদের সোর্সটা কী? তাদের সোর্স সরকার। কারণ বিএনপি সাথে আলোচনা করবে, আর বিএনপির উল্লেখযোগ্য কেউ কথা বলবেন না। এক বা একাধিক লোক কথা বলবেন।

এছাড়া দলের অনুমোদন ব্যতিত আলাপ-আলোচনা না করে এককভাবে কারো সিদ্ধান্ত নেয়ার তো সুযোগ নেই। সুতরাং আলোচনাটা কে করেছেন এবং কার সঙ্গে করেছেন? আর প্যারোলে মুক্তি দিলে কে দেবে, সরকার? আর আবেদন করবেন কে, বেগম খালেদা জিয়া? আর উনি করবেন কি করবে না, এটা কি জানার চেষ্টা করা হয়েছে? কিংবা আমাদের কি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, উনাকে রাজি করান?

আমরা বিভিন্নভাবে বিষয়টি জানার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দলের কেউ এই বিষয়ে অবগত নয়। তবে আমাদের দাবি দুটি। প্রথম, বেগম জিয়ার মুক্তি চাই। অপরটি হলো, আমরা খালেদা জিয়ার জামিন চাই।

বাংলাদেশ জার্নালের পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: আপনাকেও এবং বাংলাদেশ জার্নালের পরিবারকে ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএস/আরকে/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত