ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

বেসরকারি শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনতে হবে

  আবুল হোসেন

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৪৮  
আপডেট :
 ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৫০

বেসরকারি শিক্ষকদের পেনশনের আওতায় আনতে হবে

স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে তবুও আজ আমরা বেসরকারি শিক্ষকরা রয়েই গেলাম পূর্ণাঙ্গ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কেউ কি বলতে পারেন আমরা বেসরকারি শিক্ষকরা আর কতকাল অবহেলিত হয়ে জীবনযাপন করব?

বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা ঘোষণা না করেই আরো অতিরিক্ত ৪% কর্তন শুরু হয়ে গেল। কারিগরি শাখায় ইতি মধ্যে জানুয়ারি থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ সহ ১০ শতাংশ হারে কর্তন শুরু হয়ে গেছে যা এখনো চলমান রয়েছে। জেনারেল শাখায় এপ্রিল মাসের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ সহ ১০ শতাংশ কর্তনের আদেশ জারি করা হয়েছে। অবসরে ৬ শতাংশ এবং কল্যান তহবিলে ৪% শতাংশ হারে বর্তমানে কর্তন করা হচ্ছে। সর্বমোট ১০ শতাংশ হারে কাটা হচ্ছে।

পূর্বে এই অবসর ও কল্যাণ তহবিলে ৬ শতাংশ হারে কর্তন করে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হতো ( ৭৫ +২৫) বা ১০০ মাসের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান টাকা। কিন্তু এখন যদি অতিরিক্ত ৪ শতাংশ সহ সর্বমোট ১০ শতাংশ হারে কর্তন করা হয় তাহলে তার সুযোগ সুবিধা দিতে হবে ১৬৩ মাসের বেতনের সমতুল্য সর্বশেষ স্কেলের সমান এটা আমাদের দাবি । নতুবা পেনশনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাড়তি সুযোগ সুবিধা ঘোষণা না করলে বেসরকারি শিক্ষক সমাজ এই কর্তনকে নিন্দা জানাবে। যার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় নেমে আসবে স্থবিরতা এবং দেখা দিবে শিক্ষক অসন্তোষ। এখনি শুরু হয়ে গেছে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ।প্রতিটি জেলা, থানা, বিভাগীয় পর্যায়ে চলছে প্রতিবাদ এবং মানব বন্ধব। যার ফলে বেসরকারি শিক্ষকরা এক পা, দুই পা করে আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যা কোনো মতেই শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কাম্য হতে পারে না।

অবসর ও কল্যান তহবিলকে আপডেটসহ অবসরের সর্বনিম্ন বয়স সীমা ২০ বছর করার জোর দাবি জানাচ্ছি। সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় সমান সুযোগ সুবিধা থাকা উচিৎ । কিন্তু আজ তা তিনটি ভাগে বিভক্ত সরকারি, বেসরকারি, নন এমপিও। শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন বিভাজন থাকলে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে কীভাবে?

অবসরে যাওয়ার পর ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে অবসর ও কল্যাণ তহবিলের টাকা এক মাসের মধ্যে প্রতিটি শিক্ষককের নিজ নিজ একাউন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। কেউ যদি পদত্যাগ অথবা অন্য কোনো কারণে চাকরি ছেড়ে চলে যায় তাহলে তাকে আনুপাতিক হারে যা পাবে তা যথাসময়ে পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করছি।

দেখা যাচ্ছে অনেকেই ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি শেষ করতে পারে না সেক্ষেত্রে অবসর ও কল্যাণ তহবিলের টাকা কত মাস পাবে তার উপর হিসাব করা হয়। এমনটা বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য কল্যাণকর নয়। সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধা থাকা প্রয়োজন।

শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য রেখে উন্নত জাতি গঠন সম্ভব নয়। বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় আনতে হবে তাই আমুল পরিবর্তন। শিক্ষকদের অতিরিক্ত ৪% কর্তন না করে আগে শিক্ষকদের সুস্থ ভাবে জীবনযাপন করতে দেন। আমাদের বেতন থেকে আরও অতিরিক্ত ৪% কর্তন করে যেহেতু অবসরে যাওয়া ফাইল গুলোর সমাধান করতে হবে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলো কেন? তাহলে আগে কি কর্তন করা হয়নি?

এখন বেসরকারি শিক্ষক সমাজের মধ্যে এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে। তার সঠিক সমাধান চাই। পূর্বেই বেসরকারি শিক্ষকদের কাছ থেকে মুল স্কেলের ৬ শতাংশ হারে প্রতি মাসে কর্তন করা হত। অবসরের জন্য ৪ শতাংশ এবং কল্যান তহবিলের জন্য ২ শতাংশ হারে। এই টাকা দিয়েই তো সকল সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত ছিল।

তাহলে অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা ভোগান্তির শিকার হওয়ার কারণ কি ? তাহলে কর্তনকৃত টাকা কোন খাতে খরচ করা হলো শিক্ষক সমাজ তা জানতে চায়।

শিক্ষকদের কর্তন কৃত গচ্ছিত টাকা ফেরত দিতে অবসর ও কল্যান তহবিলে টাকার সংকট দেখা দিবে কেন? শিক্ষকদের কর্তন কৃত টাকা শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর সময় মত পাবে না তাহলে এই কর্তন করা হয় কেন? এই কর্তন কৃত টাকা সাথে সাথে পাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য কতৃপক্ষের নিকট বেসরকারি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবসর ও কল্যাণ তহবিলে টাকা দেওয়ার পর সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। যেহেতু প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন থেকে টাকা কর্তন করা হচ্ছে। সেহেতু সমস্যা থাকার কথা নয় তবুও টাকার অভাবে ফাইলের পর ফাইল জমা পড়ে যাচ্ছে কিন্তু তার সমাধান হচ্ছে না। আর কর্তন কৃত টাকা তাহলে কোথায় গেল শিক্ষক সমাজ তার তথ্য জানতে চায় ? আশা করি কতৃপক্ষ তা বিবেচনায় নিয়ে সমস্যার সমাধান করবেন।

বেসরকারি শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর ফাইল পড়ে থাকে টাকার সংকটে তা কোনো মতেই মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষকদের জমানো টাকা উঠাতে সময় লেগে যায় বছরের পর বছর যা অনেকেই আবার ভোগ করে যেতে পারে না। তখন পরিবারে নেমে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ।যার কারণে করতে হয় মানবেতর জীবনযাপন। যা কোনো মতেই বর্তমান অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পিছিয়ে পড়েছে বেসরকারি শিক্ষক ব্যবস্থা । এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা হওয়া উচিত। অবসরে যাওয়ার পর কোনো শিক্ষককে যেন মানবেতর জীবনযাপন করতে না হয় সে দিক বিবেচনায় করে।

বেসরকারি শিক্ষকরা সাথে সাথে যেন গচ্ছিত টাকা তুলতে পারে সে ব্যবস্থা করা অতীব জরুরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ এই যে, অবসর ও কল্যান তহবিলের প্রাণ সঞ্চার করতে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করি। আপনার দ্বারাই এর সকল সমস্যার সমাধান হবে আমরা বেসরকারি শিক্ষকরা তা বিশ্বাস করি।

লেখক:

সিনিয়র যুগ্ম- মহাসচিব

বাশিস ( নজরুল)

  • সর্বশেষ
  • পঠিত