ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষকের দাবি

  আবু ফারুক

প্রকাশ : ০৪ মে ২০১৯, ১৬:২৪  
আপডেট :
 ০৪ মে ২০১৯, ১৬:২৯

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষকের দাবি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীন সোনার বাংলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষকের পক্ষ থেকে অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও সালাম, আসসালামুয়ালাইকুম। মাননীয় বঙ্গবন্ধু কন্যা, আপনার কর্মব্যস্ত জীবনের ভিত্তি সুদৃঢ়করণের মূল আয়োজক আপনার সম্ভ্রান্ত পরিবার। তারপরের দাবিদার নিঃসন্দেহেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও শিক্ষাগুরুদের সামাজিক ও আর্থিক উন্নতিতে আপনার পিতা স্বাধীন বাংলার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদান ও কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা নিরন্তর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাঁরই আদর্শকে চেতনায় লালনের ধারাবাহিকতায় গত এক দশকে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বগুণ ও সময়োপযোগী নির্দেশনায় একটা উল্লেখযোগ্য পর্যায় অতিক্রম করেছে তা সর্বজনবিদিত। প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, শিক্ষাবর্ষের সূচনা দিনেই রঙিন পাঠ্যপুস্তক প্রদান, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু, শতভাগ উপবৃত্তি প্রদান, অনগ্রসর এলাকায় স্কুল ফিডিং, আধুনিক অবকাঠামো, বিদ্যালয়ের উন্নয়নে নিয়মিত বার্ষিক অনুদান, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে মাল্টিমিডিয়া ও ল্যাপটপ প্রদান সহ আরো নানাবিধ সিদ্ধান্ত ও তার কার্যকর বাস্তবায়নে আজ দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিঃসন্দেহেই প্রশংসাযোগ্য। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে জাতির জনকের পর কেবল আপনার নামই চিরস্মরণযোগ্য।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ‘ঊষর মরুর ধূসর বুকে, ছোট্ট যদি শহর গড়ো। একটি শিশু মানুষ করা তার চাইতেও অনেক বড়...’ প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে শিশুদের মননে ও মেধায় সুগঠিত করে আগামীর দক্ষ, স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনের মূল কাজটি করছি আমরা তথা দেশের ৬৩ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক সহকারী শিক্ষক। যার শতকরা ৬০ ভাগই নারী। সমৃদ্ধ ও উন্নত আগামী বিনির্মাণে রূপকল্প ২০২১ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’ বাস্তবায়নে দক্ষ ও শিক্ষিত জনসম্পদের বিকল্প নেই। আর এই দক্ষতা ও সুশিক্ষার বীজ রোপিত হয় দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই। শিক্ষার মানোন্নয়নে অন্য অনেক কিছুর সাথে শিক্ষকদের পেশাগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মানোন্নয়ন আবশ্যক। একই পেশার, একই প্রতিষ্ঠানের প্রায় সমান দুই পদে চরম বৈষম্য প্রত্যাশিত মান অর্জনের অন্তরায় এটা নিশ্চিত।

হে মমতাময়ী, আজ অত্যন্ত দুঃখ ও আশা ভঙ্গের বেদনা নিয়ে আপনার কাছে লিখছি! এই দুঃখ ও বেদনা দেশের সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষকের মনে বসত করছে আজ ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের নেপথ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনালগ্নে যে শিক্ষাগুরুদের হাতে প্রতিটি মানুষের মানসিক ভিত সুগভীরভাবে সুদৃঢ় হয় আজ সেই শিক্ষাগুরুরাই মর্যাদার বৈষম্যে নিষ্পেষিত! প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেডের ব্যবধান আজ লজ্জাজনক ও অপ্রত্যাশিত। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রধান ও সহকারী শিক্ষক একে অন্যের পরিপূরক হলেও প্রাপ্ত মর্যাদায় সহকারীরা যোজন যোজন পিছিয়ে। আপনার পিতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থনীতির দৈন্যদশায় দুই পদের বেতনের পার্থক্য রেখেছিলেন মাত্র দুই অংকের। সেখানে আজ আপনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সুষম উন্নয়ন পরিকল্পনায় উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লেখাতে যাওয়া দেশে অদৃশ্য শক্তির অপতৎপরতায় দুই অংকের সেই ব্যবধান দাঁড়িয়েছে হাজার হাজার টাকায়! আর গ্রেড ব্যবধান ৪ ধাপ! বর্তমানে মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণ বিহীন উভয় ধরণের প্রধান শিক্ষকরা ২য় শ্রেণির পদ মর্যাদায় ১০ম গ্রেডে বেতন পেলেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১৪তম ও প্রশিক্ষণবিহীনরা পাচ্ছেন ১৫তম গ্রেডে! অথচ, পদের ক্রমানুসারে, যোগ্যতা ও শিক্ষক মর্যাদার সমতায় উভয় ধরণের সহকারী শিক্ষকের বেতন গ্রেড হওয়ার কথা প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেড তথা ১১তম। কিন্তু বাস্তবতা নিষ্ঠুর বিপরীত। সেই সাথে আরো নানা বঞ্চনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজও দেশের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী মাত্র! কিছুদিন আগেই এক অনুষ্ঠানে আপনার মুখে জীবনের শুরুতে আপনার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ও ইচ্ছের কথা শুনেছিলাম। কিন্তু সমযোগ্যতা ও মেধা এবং অক্লান্ত আন্তরিক পরিশ্রমের পরেও প্রধান শিক্ষকের সাথে মর্যাদা ও বেতনে অপমানজনক বৈষম্য ও তার ন্যায্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি পূরণে দীর্ঘসূত্রিতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকতা আজ কেবলই তথাকথিত মহান, মর্যাদাসম্পন্ন, সর্বশ্রেষ্ঠ ইত্যাদি চকচকে বিজ্ঞাপনের সাদা-কালো ব্যানার মাত্র! অথচ, আমরাই সরকারের অধিকাংশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সরাসরি অংশীদার।

মাননীয় বিদ্যানন্দিনী, সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার দলের ইশতেহারে ন্যায্যতার ভিত্তিতে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন করা হবে বলে লিখিত প্রতিশ্রুতি প্রদানের পাশাপাশি মোবাইল ফোনে কল করেও একই প্রতিশ্রুতির কথা আমাদের জানানো হয়েছে। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধের দায় বাড়ানোর পাশাপাশি এই প্রতিশ্রুতি আমাদের সবার মনে প্রাপ্য মর্যাদা প্রাপ্তির অফুরন্ত আনন্দ ও বিশ্বাসের আলো ছড়িয়েছে। কিন্তু সরকার গঠনের আজ চার মাস পরে আমরা আপনার মনোনীত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহোদয় এবং মাননীয় সচিব মহোদয়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পূরণের যে আশ্বাস পাচ্ছি তা বিদ্যমান বৈষম্যকে চিরস্থায়ী রূপে প্রতিষ্ঠিত করারই! তবু আমরা আপনার এবং আপনার নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের সরকারের উপর সত্যিই বিশ্বাসী। আমরা বিদ্যালয় ছেড়ে রাস্তায় যেতে চাইনা। রাজপথে অবস্থান করে আমাদের প্রাপ্য মর্যাদার দাবী পূরণে আপনার দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা আপনাকে অপ্রত্যাশিত মাধ্যমের মাধ্যমে জানিয়ে লজ্জিত করতে আমরা রাজি নই। কিন্তু সময়ের অনিশ্চয়তাকে আশ্রয় করে আমাদের প্রাপ্য মর্যাদার দাবীকে কাফন পরানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করতেও আমরা অপারগ। তাই, বিনীত অথচ দৃঢ় স্বরে আমরা আমাদের প্রাপ্য মর্যাদার দাবী পূরণের কথা উচ্চারণ করছি। প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেডে তথা জাতীয় বেতন গ্রেডের ১১তম গ্রেডেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নির্ধারণের ঘোষণা আমরা শুনতে চাই। ইনশাআল্লাহ, আপনি নিরাশ করবেন না। কারণ আপনি কথা দিয়ে কথা রাখার নেত্রী। আপনি আপামর মর্যাদা বঞ্চিত বাংলার জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের পরীক্ষিত প্রতীক। আপনি বিচক্ষণতার সাথে মর্যাদা হারা সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষকের প্রাণের দাবীর যথার্থতা অনুধাবন করে অনতিবিলম্বে সেই মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন এই প্রত্যাশা করছি। আমরা বেতন বৃদ্ধির নয় আমাদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করছি। যে মর্যাদা জাতির জনক আমাদের দিয়েছিলেন সেটা কোন এক দুষ্ট চক্রের প্রভাবে আজ আমাদের সাথে নেই। তাই আমরা সাড়ে তিন লক্ষাধিক সহকারী শিক্ষক ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে আমাদের প্রাপ্য, ন্যায্য ও যৌক্তিক মর্যাদার দাবী পূরণের বিনীত অনুরোধ করছি। আমরা মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই। আমরা মর্যাদার স্বাদ আস্বাদন পূর্বক দেশকে বহির্বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দর্শনের সারথী হয়ে দেশ ও জাতি গড়ার মহান লক্ষ্যে অবিচল থাকতে বদ্ধপরিকর। প্রয়োজন আপনার সদয় দৃষ্টি, যথাযথ নির্দেশনা ও ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহান আল্লাহর কাছে আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করছি। আপনার সময়োপযোগী সাহসী সিদ্ধান্তে আমরা সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষক প্রাপ্য মর্যাদা পূরণের কালজয়ী কারিগর হিসেবে আপনার নাম ও ছবি চিরকৃতজ্ঞটায় ছড়িয়ে দিতে চাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। যে নাম ও ছবি হবে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং প্রকৃত মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী হওয়ার প্রেরণা ও আদর্শ। যাদের মেধা, শিক্ষা, আন্তরিকতা ও পবিত্র আদর্শে সুখী, সমৃদ্ধ, দুর্নীতি মুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

লেখক: আবু ফারুক, সহকারী শিক্ষক, ভাগ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, বান্দরবন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত