ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষকতাকে ‘মহান পেশা’ বললেই শিক্ষকদের দুর্দশা দূর হবে না

  মাহফিজুর রহমান মামুন

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০১৯, ১০:২২  
আপডেট :
 ০২ জুলাই ২০১৯, ১০:৫৫

শিক্ষকতাকে ‘মহান পেশা’ বললেই শিক্ষকদের দুর্দশা দূর হবে না

আমাদের দেশে কর্তৃপক্ষ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে যতটা সচেষ্ট ,কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও এটাই সত্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের আসল কারিগর প্রাথমিক শিক্ষকদের ব্যাপারে ততটা সচেষ্ট নয়।

গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে আগায় পানি দিয়ে গাছকে যেমন কখনো পরিপূর্ণ করে গড়ে উঠানো যাবে না, তেমনি প্রাথমিক শিক্ষকদের যথাযোগ্য মূল্যায়ন না করে কখনো মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। উন্নত দেশের কথাতো বাদই দিলাম, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-পদমর্যাদাই ধরা যাক। ভারতে একজন ব্যাংকারের চেয়ে একজন প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন-পদমর্যাদা অনেক বেশি। শ্রীলংকায় প্রাথমিক শিক্ষকরা ১ম শ্রেণির মর্যাদা পায় অথচ আমাদের দেশে পাঠদানের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যারা সম্পন্ন করেন, যাদের উপর নির্ভর করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা সেই সহকারী শিক্ষকরা এখনো ৩য় শ্রেণির কর্মচারী।

৩য় শ্রেণির কর্মচারী পদমর্যাদার একজন শিক্ষকের কাছেতো আমরা ৩য় শ্রেণির মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাই আশা করতে পারি। তাদের কাছ থেকে ১ম শ্রেণির মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা আশা করা কি আমাদের যৌক্তিক হবে?

একজন প্রাথমিক শিক্ষককে যে নিম্ন বেতন-পদমর্যাদা দেয়া হয় তাতে কি সেই শিক্ষক কখনো নিজেকে উজার করে দিয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করতে সচেষ্ট হবে? অনেকে হয়তো বলবেন, শিক্ষকতা মহৎ পেশা, এই পেশাকে টাকা দিয়ে বিচার করা যায় না। হা,এই কথার সাথে একমত যে শিক্ষকতা পেশা টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। কিন্তু তারমানে এই না যে মহৎ পেশার দোহাই দিয়ে শিক্ষকদের সবচেয়ে নিম্ন বেতন-পদমর্যাদা দিয়ে সবচেয়ে অবহেলিত জীবন যাপন করতে হবে।

শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে আপনারা মুখে যে সস্তা কথাগুলো বলেন তারচেয়ে ভারত, শ্রীলংকার মত দেশগুলোতে শিক্ষকদের বাস্তবে অধীক বেশি মর্যাদা দেয়া হয়, সেই সাথে সমাজ,রাষ্ট্র প্রাথমিক শিক্ষকদের সম্মানের সাথে মূল্যায়ন করে। তারপরও তো ঐ দেশগুলো শিক্ষকদের নিম্ন বেতন-পদমর্যাদা দিয়ে অবহেলিত করে রাখেনি। তাহলে আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের সত্যিকার অর্থে মানসম্মত বেতন-পদমর্যাদা দেয়ার মাধ্যমে যথাযোগ্য মূল্যায়ন না করে কেন শুধু বক্তৃতা,ভাষণে শিক্ষকের মর্যাদা সবার উপরে বলে চিৎকার করা হয়।

শিক্ষকতা মহৎ পেশা বলে কি শিক্ষকদের খাবার খেতে হয় না,তাদের পরিবার নেই, তাদেরকে সমাজে চলতে হয় না? নাকি শিক্ষকদের জন্য আলাদা বাজার আছে,আলাদা সমাজ আছে যেখানে টাকার কোন দরকার হয় না? বিদ্যালয়ের প্রাণ বলে অভিহিত প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা যখন দেখে স্নাতক শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি ডিপ্লোমাধারী (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারী এডুকেশন কোর্স) হয়েও সে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে মূল্যায়ন পাচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের সমযোগ্যতার অনেক পেশাজীবী অথবা তাদের চেয়ে কমযোগ্যতার অনেক ডিপ্লোমাধারী ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত, তখন তাদের মানসিক অবস্থা কী হয় তা কি কর্তৃপক্ষ কখনো বুঝতে চেয়েছেন?

এই অবহেলিত শিক্ষকদের যদি তাদের মানসম্মত বেতন-পদমর্যাদা দিয়ে যথাযোগ্য মূল্যায়ন না করে, হাজারও তদারকি করা হয়,জবাবদিহি করানো হয়,কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয় তবু কি তাদের আন্তরিকতা পাওয়া যাবে? শিক্ষকতা অন্য পেশার মত নয়,এটি একটি ব্রত। তাই শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা হওয়া উচিত অন্য পেশাজীবীদের থেকে বেশী। কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ প্রাথমিক শিক্ষকদের বিশেষ করে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের নায্য ও সামান্য দাবী ১১তম গ্রেডসহ শতভাগ পদোন্নতি প্রদান করে যথাযোগ্য মূল্যায়ন করুন,তাহলে শিক্ষকরা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করতে এমনিতেই নিজেদেরকে বিলিয়ে দেবে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, বোদা,পঞ্চগড়।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত