ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

গণশিক্ষা সচিবের ‘সরি’ ও আত্মোপলব্ধি

  খায়রুল হাসান

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৩৪

গণশিক্ষা সচিবের ‘সরি’ ও আত্মোপলব্ধি

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। এমন কথা শুনতে শুনতেই বিগত ২৩ অক্টোবর ঢাকার দোয়েল চত্ত্বরে হয়ে গেল বিশাল শিক্ষক আন্দোলন। কিন্তু শিক্ষকতা মহান পেশা হলে শিক্ষকগণ আন্দোলন করবেন কেন? এ প্রশ্নের উত্তর এ জাতির কাছে আছে কিনা জানিনা। পাশাপাশি দেখলাম এ আন্দোলন দমানোর জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়েছে সেই শিক্ষকের হাতে গড়া দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের অনেক সদস্যকে। আমি পুলিশের কথা বলছি। তারা ভুলে গেছে তাকে শিক্ষিত করে এ পর্যায়ে আনার পেছনে প্রাথমিক অবদান টা এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগনের। তাই হয়তো গুরুদক্ষিনা দিয়ে কিছুটা দায়মুক্ত হতে চেয়েছে।(লাঠি পেটায় কয়েকজন শিক্ষক আহত এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।)

কিন্তু যিনি এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের অভিবাবক হিসাবে রয়েছেন এ দমন পীড়নে উনার ভুমিকা কি? তিনি তো পারতেন শিক্ষকগনের সহমর্মী হয়ে কোন প্রতিবাদ করতে। কিন্তু করলেন না। শিক্ষকরা যখন পুলিশের ভুমিকা নিয়ে বিষোদগার করছেন তখন ও তিনি নীরব। একই সময়ে শুরু হল ক্রিকেট খেলোয়াড়দের আন্দোলন। মাত্র দু-দিন যেতে না যেতেই পাপন সাহেব কড়া হুশিয়ারী দেয়া সত্ত্বেও বিষয়টি নজরে গেল প্রধানমন্ত্রীর এবং খেলোয়াড়দের দাবী মেনে নেয়া হল। তাহলে কি শিক্ষকের দাবীর চেয়ে খেলোয়াড়ের দাবী বড় হয়ে গেল?

এ প্রশ্ন যখন উত্থাপিত হল তখন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অভিভাবক বললেন ক্রিকেট আর মাস্টারি এক নয়। আসলেই খেলার সাথে শিক্ষকতা তুলনীয় নয়। তাই বলে ভাষার ব্যবহার শিক্ষকতার পরিবর্তে মাস্টারি ! যিনি নিজের অধিনস্তদের এভাবে মূল্যায়ন করেন তার দ্বারা শিক্ষকদের দাবী পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। উনার মন্তব্য নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরব হল তখন তিনি আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করলেন ‘সরি’। একটা সরি শব্দেই কি সব ব্যাথা ভুলে যাওয়া যায়? যে শিক্ষক পুলিশের লাঠির আঘাতে যতটা শারিরিক কষ্ট পেলেন তার চেয়ে হাজারগুন মানসিক কষ্ট পেয়েছেন তা কি ওই সরি শব্দে মিটে যাবে? শিক্ষক সমাজের মনের ক্ষত কি ওই সরি শব্দে মুছে যাবে?

শিক্ষকগনের দাবী আদায়ে উনার ভুমিকা কি? তারা বারবার বলে যাচ্ছেন বেতন বৈষম্যের কথা। তিনি জোর দিয়ে বলছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের কথা। উনি দোহাই দিচ্ছেন শিক্ষা নীতির। কিন্তু শিক্ষা নীতিতে যে অষ্টম শ্রেনি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালুর কথা বলা আছে সে ব্যপারে কতটুকু পদক্ষেপ নিতে পেরেছেন? (কয়েকটা বিদ্যালয়ে অনুমতি দিয়ে এখন আবার বন্ধ করে দিয়েছেন)। সেদিকে না এগিয়ে যা শিক্ষকগণ চাচ্ছেন না উনি সেটাই কেন বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন? শিক্ষকদের একজন অভিভাবক হিসাবে উনি শিক্ষক চাহিদা বাস্তবায়ন না করে শিক্ষক চাপ কেন সৃষ্টি করছেন সেটাও ভাবার বিষয়। আমরা বিভিন্ন মন্ত্রীর কার্যকলাপ দেখেছি। আসলে মন্ত্রীদের কাজে সুবিধা করে দেন সচিব মহোদয় গণ। মন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত নিতে সহজ করে দেন সচিব মহোদয়গণ। আমরা সাবেক নৌমন্ত্রী শাহাজান খানের দৃঢ়তা দেখেছি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো: নাসিমের ভুমিকা দেখেছি। উনাদের অধিনস্তরা যখন আন্দোলন করে তখন ওই মন্ত্রীরা তাদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের অনমনীয় অবস্থার কারণে শেষ পর্যন্ত দাবী আদায় হয়েছে। সেখানে সচিবের কি ভুমিকা ছিল? তারা কি বারবার পরিপত্র দিয়ে তাদের কর্মচারীদের হুশিয়ারি দিয়েছে? কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বারবার পরিপত্র দিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু কেন? তাহলে কি শিক্ষকদের আন্দোলন যৌক্তিক নয়? তারা খুব বেশি কিছু দাবী করেনি। তাদের চেয়ে আরো অনেক কম শিক্ষাগত যোগ্যতা এমন কি অভিজ্ঞতা নিয়েও অনেক ডিপার্টমেন্টএ আরো অনেকে উচ্চতর গ্রেডে আছেন। কিন্তু শিক্ষকরা শুধু মাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমানের প্রবর্তিত একই রকম গ্রেডের (১০ ও ১১ তম গ্রেড) জন্য আন্দোলন করছেন। সচিব মহোদয় বলছেন শিক্ষকদের দাবী যৌক্তিক। তাহলে তাদের দাবীর ব্যাপারে আপনার ভুমিকা কেন প্রশ্নবিদ্ধ?

জাতি হিসাবে আসলে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা কে কতটুকু গুরুত্ব দেই? এইযে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের এমন একটা আন্দোলন হয়ে গেল এখানে পুলিশের লাঠির আঘাতে শিক্ষক সমাজ আহত হলো, কারো কি কোন সমস্যা হলো! কেউ কি এগিয়ে এসেছে যে, এটা ঠিক হয়নি? কেউ কি পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায় এ আন্দোলন হল বিশ্ব বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক কি এটা দেখেন নি? (দু এক জনের ভুমিকা সবাই কে নির্দেশ করে না) তাদের ভুমিকা কি ছিল? বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্ররা কি সেটা দেখেনি? তারা কি অনুভব করে নি যে এরা তো তারই অ, আ, ক, খ শেখানো গুরু? সাধারণ জনগনের মনে কি প্রশ্ন জেগেছে, তার সন্তানকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শন করানো এই সব শিক্ষক কেন আজ পুলিশের বুট জুতার নিচে?

একদিকে আঘাত করবেন অন্যদিকে সরি বলবেন। কিন্তু মনে রাখবেন এক সরি দিয়ে সব ক্ষত সারানো যায়না। যতদিন আপনার উপলব্ধি না হবে ততদিন প্রকৃত শিক্ষায় নিজেকে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে প্রজ্জ্বলিত করবেন কিভাবে?

লেখক: সহকারী শিক্ষক

  • সর্বশেষ
  • পঠিত