ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৪)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৩৫  
আপডেট :
 ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৪০

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৪)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -৪)

এর পরের পর্বে এলো পত্রিকার নাম আর কবে নাগাদ প্রকাশ করা সম্ভব এবং অফিস ইত্যাদি। বাবুল সাহেব বললেন, আপনারা বসে এসব ঠিক করেন। আমার কী করতে হবে শুধু জানাবেন। নৈশভোজ শেষে ওঠার আগে সারওয়ার সাহেব হঠাৎ বলে উঠলেন, শাহজাহান (আমি) কবে যোগদান করবে? আমি বাবুল সাহেবের নতুন পত্রিকায় যোগদান করব কিনা এই বিষয়ে সারওয়ার সাহেবের সাথে আগে আমার কোনো আলোচনা হয়নি। অকস্মাৎই সারওয়ার সাহেব কথাটি তোলেন। আমি অনেকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। কেননা আমার ইত্তেফাক ছাড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। বাবুল সাহেব বললেন, শাহজাহান ভাই আমার পরিবারের সদস্যদের একজন। আমাদের সাথে আছেন এবং থাকবেন। তাকে তো আসতেই হবে। আমি বললাম, সারওয়ার ভাই আগে যোগদান করুক। আমি পরে আসব। আমি তো প্রতি কাজেই আছি। এখানে বলে রাখি, প্রথম যখন পত্রিকা বের করার জন্য বাবুল সাহেব উদ্যোগ নিয়েছিলেন তখন আমাকে বড় পদই অফার করেছিলেন। আমি বিনয়ের সাথে তাকে বলেছি এখনও আমি সে পর্যায়ে যাইনি। যাহোক সেদিন কথায় কথায় অনেক রাতই হয়েছিল। সারওয়ার সাহেবের যোগদানের তারিখ ঠিক করে আলোচনা শেষ করেন। আমরা সবাই ফিরে আসি।

পরদিন শনিবার। সাপ্তাহিক রিপোর্টার্স মিটিং। এখন প্রতি সংবাদপত্রেই হয়। ইত্তেফাকে মিটিং করেন মঞ্জু সাহেব। অর্থাৎ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বার্তা সম্পাদক সারওয়ার সাহেবসহ দুইজন যুগ্ম বার্তা সম্পাদকও থাকেন। সেদিনও ছিলেন। মিটিং শেষে সারওয়ার সাহেব তার কক্ষে যান। আমি নিজ চেয়ারে। কিছুক্ষণ থেকে আমি বাসায় চলে আসি। সন্ধ্যায় আবার অফিসে। সারওয়ার সাহেবও প্রেসক্লাব থেকে লাঞ্চ সেরে অফিসে যান। আমি নিজেই তার কাছে গিয়ে কথা বলি। জানতে চাই কীভাবে অগ্রসর হবেন। ইত্তেফাক থেকে পদত্যাগ করতে নোটিশও দিতে হবে। দীর্ঘদিনের চাকরি। তাছাড়া বার্তা সম্পাদক পদত্যাগ করলে একটা প্রতিক্রিয়া আছে। কেননা সারওয়ার সাহেব এমন এক বার্তা সম্পাদক যার হাতে জাদুকরী কিছু আছে। হাত দিলেই যেন পত্রিকার গেটআপ, মেকাপ, রিপোর্ট অন্যরকম হয়ে যায়। সারওয়ার সাহেব কোনোদিন অফিসে না এলে তখনকার ইত্তেফাকের চেহারাই অন্যরকম হয়ে যেত। সন্ধ্যায় পত্রিকা অফিসে কাজের পিকটাইম। সারওয়ার সাহেব বললেন, কাল সকালে প্রেসক্লাবে আসো, কথা হবে। আমি কাজ শেষে বাসায় ফিরি। এর মধ্যে বাবুল সাহেব ফোন করে জানতে চান সব ঠিকঠাক আছে কিনা। রোববার সকালে আমি ঠিক ৯টার মধ্যে প্রেসক্লাবে পৌঁছি। কয়েক মিনিটের মধ্যে সারওয়ার সাহেবও উত্তরা থেকে এসে পৌঁছেন। আমরা দু’জন তৎকালীন টিভি রুমে (বর্তমানে ডাইনিং রুম) বসে কথা শুরু করি। কাকে কাকে নেয়া যায়। আমার যোগদানের বিষয়, ইত্তেফাকের পদত্যাগ ইত্যাদি। আমি সারওয়ার সাহেবকে বললাম, আপনি আগে বসা শুরু করেন। আর সাইফুলকে (সাইফুল আলম, বর্তমানে যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক) সঙ্গে নেন। সাইফুল তখন ইনকিলাবের সিনিয়র রিপোর্টার। আমার সাথে খুবই ঘনিষ্ঠতা। একসাথে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট কভার করি। চলাফেরাও একসাথে। বাবুল সাহেবের সাথে জানশোনা ছিল সাইফুলেরও। আমিই তকে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। পত্রিকা নিয়ে বাবুল সাহেব সাইফুলের সঙ্গেও আগে-পরে আলোচনা করেছেন বলে শুনেছি। কেননা সাইফুলই একদিন আমাকে বলেছিলেন বাবুল সাহেব পত্রিকা বের করলে তাকে যেন সেখানে যাবার ব্যবস্থা করে দেই। কেননা তার মতাদর্শের সঙ্গে ইনকিলাবের মিলছে না। থাকতেও চাচ্ছেন না। বাবুল সাহেবের সঙ্গে পত্রিকা নিয়ে আগে-পরে কথা হলেও সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে কয়েকদফা সভা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন না। বিষয়টি সঙ্গত কারণেই আমরা গোপন রেখেছিলাম। বাবুল সাহেবও গোপন রেখেছিলেন, সাইফুলের নাম শুনে সারওয়ার সাহেব অমত করলেন না। বললেন ঠিক আছে, কথা বল। আসলে আমি সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে আমার বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে অন্যান্য প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরে থাকতে চেয়েছি। সেদিক থেকে সাইফুলকেই আমার সবচাইতে বিশ্বস্ত ও দক্ষ মনে হয়েছে। আর ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাবের নির্বাচনে একই মতাদর্শের হওয়ায় সারওয়ার সাহেবের সঙ্গেও তার এক ধরনের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেদিন অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে টুকটাক কথা শেষে পরদিন সকালে আবার প্রেসক্লাবে বসার সময় ঠিক করি। সারওয়ার সাহেব অফিসে চলে যান। আর আমি থেকে গেলাম প্রেসক্লাবেই। সে সময় আমি সকাল সকাল প্রেসক্লাবে যেতাম। নাস্তাও সারতাম প্রেসক্লাবে। সাইফুলও আসতেন। আমি আবার অ্যাসাইনমেন্ট না থাকলে দুপুরে বাসায় চলে যেতাম। বাসা থেকে বিকালে আবার অফিস। সারওয়ার ভাইকে বিদায় দিয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি সাইফুল এসে গেছেন। চা পানের পর বাবুল সাহেবের পত্রিকায় সারওয়ার সাহেবের যোগদান প্রক্রিয়াসহ তার বিষয়ে সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে আলোচনার বিষয় জানাই। তিনি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠলেন। আমি তাকে বলি, কাল সকালে প্রেসক্লাবে আসেন। সারওয়ার সাহেবও আসবেন। চূড়ান্ত আলোচনা হবে। পরদিন সকালে আবার প্রেসক্লাবের টিভি রুমে ঢুকে দেখি কে একজন সোফায় শুয়ে আছেন। আমাদের দেখে উঠে চলে গেলেন। আমরা কথা শুরু করলাম। কীভাবে অগ্রসর হওয়া যায় ইত্যাদি। সারওয়ার সাহেব আর আমার সাথে বৈঠকে এ প্রথম যুক্ত হলো সাইফুল আলম। এখানে বলে রাখি, এরই মধ্যে বাবুল সাহেবের সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি জানতে চান আমি কবে যোগদান করব? আমি তাকে বুঝিয়ে বলি, বাবুল সাহেব এখন আমার পক্ষে এমন একটি সময় যাতে পত্রিকা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত