ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৫)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৩৭  
আপডেট :
 ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৪৮

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৫)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -৫)

একদিকে ইত্তেফাক সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা। অন্যদিকে বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা সব সংবাদপত্রের চাইতে বেশি। আমার সন্তানেরা স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে। নতুন কোনো পত্রিকায় গিয়ে রিক্স নেয়া আমার জন্য কঠিন। পেছনে থেকে আমার সাধ্যমত সব কাজ করে দিব। বাবুল সাহেব একটু মনঃক্ষুণ হলেও বাস্তবতা বুঝলেন। তবে বললেন, আমার পত্রিকা একদিন ইত্তেফাকের চাইতেও ভাল হবে, সার্কুলেশনও বেশি হবে। আমি তাকে বললাম, আমি যে আসব না সারওয়ার সাহেবকে এখনই জানাবেন না তাহলে তিনি হয়তো ভুল বুঝতে পারেন। কেননা আমি জানি সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে বসলেই আমার যোগদানের প্রশ্ন তুলবেন তিনি। সেদিনও তাই হলো। তবে আমার ধারণা ছিল সাইফুলকে সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে দিতে পারলে ভাল হবে। আমিও সরে যেতে পারব। পত্রিকা বের করারও সমস্যা হবে না। তাই সারওয়ার সাহেব যখন সেদিনের বৈঠকে আমার যোগদানের প্রসঙ্গ আনলেন, আমি বললাম সাইফুলকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। আমি পেছনে থেকে আছি। নাম ঠিক করা, ডিক্লারেশন নেয়া, কি জনবল নিয়োগ ইত্যাদিতে অনেক দিন চলে যাবে। এত আগে অযথা বেশি লোকের প্রয়োজন কী? সে বৈঠকেই সাইফুলকে চিফ রিপোর্টার নিয়োগের জন্য আমি প্রস্তাব দেই। সারওয়ার সাহেব রাজি হন। আমি এলে কী পদ হবে তাও আমি নিজেই বলি। তখনও অবশ্য সারওয়ার সাহেব যোগদান করেননি।

আমার চিন্তা তখন একটি অস্থায়ী অফিসের যেখানে সারওয়ার সাহেব বসবেন। আর স্থায়ী অফিস দেখে পরেও ঠিক করা যাবে। সম্পাদক যোগদান করলে আর অফিস হলে আমার দায়িত্ব লাঘব হয়। এসব বিষয়ে বাবুল সাহেবের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ চলতে থাকে। একদিন সাইফুল আর আমি একসঙ্গে গিয়ে কথা বলি। অফিসে গিয়েই কথা হয়। নাম কী হবে তাও আলোচনায় আসে। এরই মধ্যে নাম চেয়ে সংবাদপত্রেও বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। বাইরে থেকে আমরাও চিন্তা করি। এসময় বাবুল সাহেবের একমাত্র ছেলে শামীম ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। আমরা আলোচনা করে ঠিক করলাম শামীম সাহেব, আমি আর সাইফুল পরদিন অফিস দেখতে বের হবো। কথামতো পরদিন আমরা ধানমন্ডি তিন নম্বরে ডেইলি স্টারের আগের অফিস এবং মতিঝিল একটি অফিস দেখে দুপুরে বাবুল সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। আমি তাকে প্রস্তাব দেই বাইরে অফিস না করে নিজের জায়গায় করলেই ভাল হয়। তিনি বললেন, ভবন করতে অনেক সময় প্রয়োজন হবে। আমি বললাম, না, সময় তত লাগবে না। প্রেস আসার আগেই ভবন হয়ে যাবে। কীভাবে জানতে চাইলেন। বললাম, কমলাপুরে অর্থাৎ ইডেন হোটেলের সাথে আপনার যে জমি আছে সেখানে প্রি-ফেব্রিকেটেড ভবন করেন। আমি এসময় তৎকালীন ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার ভবনের কথা বললাম। তিনি রাজি হলেন। সেনাকল্যাণ ভবন থেকে তার কমলাপুরের জমি পুরোপুরি দেখা যায়। এ জমি ক্রয়ের জন্য যেদিন মালিককে বায়না দেন সেদিনও আমি উপস্থিত ছিলাম। আমার মতামত চাইলে বলেছিলাম ভাল জায়গা। বায়না দেবার দিন সেনাকল্যাণের ১২ তলা থেকে জানালা দিয়ে জমিটি আমাকে দেখিয়েছিলেন। আজও আবার গিয়ে জানালা দিয়ে দেখলাম। বাবুল সাহেব জমি দেখে এসে জামান সাহেবকে ডাকলেন। জামান সাহেব যমুনা গ্র“পের কমাশির্য়াল ডাইরেক্টর ছিলেন। এবং বাবুল সাহেবের ঘনিষ্ঠ। ব্যবসার শুরু থেকে আছেন। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। জামান সাহেবকে ডেকে বললেন, কমলাপুরের জমিতে প্রি-ফেব্রিকেটেড ভবন করতে হবে। কীভাবে কোথা থেকে সামগ্রী আনা যাবে, কত সময় লাগবে খবর নেন। একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সেরে আমি আর সাইফুল ফিরে আসি। বিকেলে বাবুল সাহেব ফোন করে জানালেন, তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই প্রি-ফেব্রিকেটেড ভবন করা সম্ভব। তিনি কালই সবকিছু চূড়ান্ত করবেন।

সারওয়ার সাহেব কয়েকদিনের মধ্যেই ইত্তেফাকে জানিয়ে দিলেন তিনি এখানে আর থাকবেন না। সারওয়ার সাহেবের পদত্যাগের বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। মিডিয়াপাড়ায় খবরটি ছিল বেশ চাঞ্চল্যের। আর আমার ভূমিকাও জানাজানি হয়ে যায়। এরই মধ্যে পত্রিকা প্রকাশের পরবর্তী বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত আলোচনা চলতে থাকে। ক্যাম্প অফিস, নাম ইত্যাদি। অনেক চাকরিপ্রত্যাশী সাংবাদিক কর্মচারীও আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন। কয়েকদিন পর সারওয়ার সাহেবকে নিয়ে আমরা বাবুল সাহেবের অফিসে বৈঠক বসে কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা করি। আমি নিউজপ্রিন্টের প্যাডে লিখে আগেই নামের একটি তালিকা দিয়েছিলাম। যার মধ্যে নতুন সূর্য, যুগান্তর, কালান্তরসহ আরও দু’টি নাম ছিল। আমাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল নতুন সূর্য নামটি নিয়েই আমরা অগ্রসর হব। আর ক্যাম্প অফিস করার জন্য সারওয়ার সাহেব পছন্দমত স্থান ঠিক করবেন। লোকজন নিয়োগের বিষয়, প্রেস ইত্যাদি নিয়েও আলোচনা হলো। অফিস কমলাপুরেই হবে এবং প্রি-ফেব্রিকেটেড ভবন। বাবুল সাহেব জানালেন, ইতোমধ্যেই ভবন তৈরির বিষয় তিনি চূড়ান্ত করেছেন। পরে একজন বার্তা সম্পাদক নিয়ে আমাদের কথা হলো। বাবুল সাহেব বললেন, এসব আপনারা বসে ঠিক করেন। কাদের নিলে ভাল হবে, তা আপনারা জানেন। তবুও সারওয়ার সাহেব বার্তা সম্পাদকের বিষয়টি বাবুল সাহেবের নজরে আনেন। তিনি জানান, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলকে বার্তা সম্পাদক করতে চান। আমরা আগেই এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বাবুল সাহেব আবারও বললেন, লোক নিয়োগের বিষয় আপনাদের, আমার নয়। আমি কারও জন্য বলব না। যেভাবে ভাল হয় তা করেন।

কিছুদিনের মধ্যেই সারওয়ার সাহেব একটি হোটেলে ক্যাম্প অফিস শুরু করেন। জনবল নিয়োগের বিষয়ে মোটামুটি আমরা একটি গাইডলাইন ঠিক করি। সারওয়ার সাহেব ক্যাম্প অফিসে বসার পর থেকে লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। সারওয়ার সাহেবের সাথে সাইফুলও বসেন। তারা পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করেন। আর আমি আস্তে আস্তে যোগাযোগ কমিয়ে দিই। বলতে গেলে বাধ্য হই। কেননা তখন রাজনৈতিক উত্তাপ শুরু হয়। আমি নিজ কাজে বেশি ব্যস্ত হয়ে যাই। তবুও যোগাযোগ থাকে। বিশেষ করে বাবুল সাহেবের সাথে যোগযোগ ছিল নিয়মিত। সব বিষয়েই আমাকে অবহিত করতেন, যেমন প্রেস, ডিক্লারেশন, মার্কেটিং পলিসি ইত্যাদি নিয়েই আমার সাথে তার বেশি আলোচনা হতো। এরই মধ্যে নতুন সূর্য নামে ডিক্লারেশনের জন্য আবেদন করা হয়, কাজ অনেক দূর এগিয়ে যায়। পরে আবার নাম পরিবর্তন করে যুগান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু যুগান্তর নামের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত