ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৮)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৫২

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -৮)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -৮)

একই আলোচনায় সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধানের জন্য অর্থাৎ সহযোগী সম্পাদক পদের জন্য দু’জনের নাম নিয়ে আলোচনা হলো। বাবুল সাহেব এবং ওই সিনিয়র সাংবাদিকের কথা শুনে মনে হলো তারা অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের বিকল্প খুঁজছেন। তাদের মুখ থেকে ওই দু’জনের নাম বের হয়ে আসে। আগেই বলেছি, আবেদ সাহেবের সাথে আলোচনার পর থেকে আমার আর যুগান্তর বিষয়ে তেমন খোঁজখবর ছিল না। এবার বাবুল সাহেব জানতে চান, সম্পাদকীয় বিভাগের জন্য যে দু’জন নিয়ে তারা আলোচনা করছেন, তাদের সাথে আমার পরিচয় আছে কিনা? আমি বললাম আছে। একজন মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, অন্যজন সোহরাব হাসান। দু’জনই তখন সংবাদে। মঞ্জু সাহেব প্রথম আলো ছেড়ে মাত্র সংবাদে গেছেন। আর সোহরাব হাসান অনেকদিন ধরেই আছেন। আমি বললাম, তাদের সাথে কথা বলব? দু’জনের একজনকে আনা যাবে। সম্পাদকীয় বিভাগীয় প্রধান পদত্যাগের কারণে এ পদে নিয়োগ জরুরি। আমি বললাম, সমস্যা হবে না, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। একই সঙ্গে বললাম, সম্পাদক নিয়েও আরো চিন্তা করি। কাকে আনা যায়। কে রাজি হন। কাল আবার আসব বলে বিদায় নিয়ে অফিসে এসে কাজ করে বাসায় ফিরি বেশ রাতে। মাথায় তখন যুগান্তরের সম্পাদক কে হলে ভাল হয় এ চিন্তা। আবার সারওয়ার সাহেব যে স্থান থেকে চলে গেছেন সেখানে সিনিয়র কেউ আসতে চাইবেন কিনা ইত্যাদি।

অফিসে ফিরে হাতের কাজ শেষ করে সহযোগী সম্পাদক পদের জন্য প্রস্তাব করা মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুকে ফোন করি। মঞ্জু সাহেব স্বল্পভাষী। মতি ভাইয়ের সঙ্গে (প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান) সাপ্তাহিক একতায় কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। প্রথম আলোতেও ছিলেন মঞ্জু সাহেব। আমিও একসময় একতায় লিখতাম। মতিউর রহমান সাহেব তখন সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক ছিলেন। সেই সুবাধে ভালই জানাশোনা। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর মূলকথা। ঠিক হলো পরদিন সকালে তার বাসায় বসব। রাতে আর যুগান্তর বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। সকালে সময়মতো আমি মঞ্জু সাহেবের বাসায় গিয়ে পৌঁছি। কথা হয়। তিনি তখন যেকোনো কারণে প্রথম আলো থেকে চাকরি ছেড়ে দৈনিক সংবাদে যোগদান করেছেন। আমার প্রস্তাবের পর বিনয়ের সঙ্গে বললেন, নতুন যোগ দেয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই অন্য কাগজে যাওয়া ঠিক হবে না। কাকে সম্পাদক করা যায় এ নিয়েও তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করি। হঠাৎ তিনি মূসা সাহেবের নাম বললেন। এবিএম মূসা, কিংবদন্তী সাংবাদিক। বাংলাদেশ অবজারভারের বার্তা সম্পাদক, সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসের প্রধান সম্পাদক ও এমডি, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, কিছুদিন ডেইলি নিউজে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বিদেশি সংস্থায়ও কাজ করেছেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এমপিও নির্বাচিত হন। মূসা সাহেব তখন কোনো চাকরি করতেন না, নিয়মিত কলাম লিখতেন, প্রবীণ ও অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের একজন। তার নাম শুনে আমি বেশ পুলকিত। কেননা আমার সঙ্গে তার খুবই সুসম্পর্ক ছিল। ভাল কোনো রিপোর্ট ছাপা হলে টেলিফোন করে ধন্যবাদ জানাতেন, মাঝে-মধ্যেই কথা বলতেন। দেশের বিভিন্ন খবরাখবর জানতে চাইতেন। আর প্রেসক্লাবেও নিয়মিত দেখা হতো। মঞ্জু সাহেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে সোজা বাবুল সাহেবের অফিসে গেলাম। তার কাছে মূসা সাহেবের নাম বললাম। তিনি মূসা ভাইয়ের নাম শুনেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না। আমি বিস্তারিত বললাম। তিনি রাজি হলেন। এর আগে দুজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের একজন বর্তমানে মন্ত্রী। অন্যজন এরশাদ জামানায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, মারা গেছেন। এখন প্রশ্ন, মূসা সাহেব এ বয়সে আবার চাকরিতে ফিরবেন কি-না, চাইবেন কি-না সম্পাদক হতে। বাবুল সাহেব বললেন, কথা বলে দেখেন। রাতে অফিসের কাজ শেষ করে গাড়িতে উঠেই মূসা সাহেবকে ফোন দেই। তিনি ফোন ধরেই জিজ্ঞেস করলেন, কী সরদার, কেন ফোন করেছ? তিনি আমাকে সবসময় ‘সরদার’ নামেই ডাকতেন। আমি বললাম, কাল সকালে আপনার বাসায় আসতে চাই। কথা আছে। বললেন, সাড়ে ৯টার মধ্যে আস। এটুকুই কথা। সেদিন অফিস থেকে বাসায় না গিয়ে আমি সোজা গুলশান গেলাম। এক ব্যবসায়ী বড় ভাইয়ের বাসায়। তিনিও মূসা সাহেবের এলাকার লোক। বড় ব্যবসায়ী। একসময় তার সঙ্গে আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শেয়ার করতাম। ঘটনাটি তাকে জানালাম। তিনিও বললেন, মূসা সাহেব রাজি হলে ভাল হবে।

পরদিন ঠিক সকাল সাড়ে ৯টায় মূসা সাহেবের মোহাম্মদপুরের বাসায় গিয়ে পৌঁছি। তিনি অপেক্ষা করছিলেন। যদিও আমি নাস্তা সেরে গিয়েছিলাম তবুও উপায় ছিল না। বললেন, আগে খাও। পরে কথা। পরোটা, মুরগির মাংস ভুনা, ভাজি, হালুয়া খেতেই হলো। এরপর চা এলো। মূসা সাহেব জানতে চাইলেন কী কথা। আমি তার কাছে ভয়ে ভয়ে প্রস্তাবটি তুলে ধরলাম। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। কথা নেই। আমি পড়লাম এক অস্থিরতার মধ্যে। মুখ খুলে সোজাসুজি কথা বলার লোক মূসা সাহেব। মৌনতা ভেঙ্গে প্রথমেই বললেন, সারওয়ারকে (সারওয়ার সাহেব) তো তুমিই নিয়ে গিয়েছিলে।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত