ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১০)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২৬

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১০)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -১০)

মূসা সাহেবের কথাই ঠিক হলো, দুই দিন পর এক রাতে হঠাৎ করে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী পদত্যাগপত্র জমা দিলেন। বেতনের জন্য অপেক্ষা করলেন না। পরে শুনেছি সারওয়ার সাহেব তাদের আগের মাসের বেতনও দিয়েছিলেন। যে কারণে পাওনা বেতন না নিয়েই পদত্যাগ। পত্রিকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ভেতরে ভেতরে কেউ কেউ আবার উসকানিও দিচ্ছেন। মূসা সাহেব-ই জানালেন ভেতরে থাকা কারও কারও কথা। আমি হতভম্ব হয়ে পড়লাম। কথা বললাম বাবুল সাহেবের সঙ্গে। তিনি বললেন, লোক নিয়ে আসুন। যা করতে হয় করুন, সমস্যা নেই। রাতেই কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। কেউ কেউ জানালেন, সামনে ঈদ এখন এলে বোনাস পাওয়া যাবে না। ঈদের পর আসবেন। কিন্তু আমাদের তো একদিনও দেরি করার সুযোগ নেই। মূসা সাহেবকে জানালাম বোনাসের বিষয়। তিনি বাবুল সাহেবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিলেন। বাবুল সাহেব জানিয়ে দিলেন, নতুন যারা আসবে সবাইকে বোনাস দেয়া হবে। আপনারা লোক নিয়ে নিন। অস্বস্তি নিয়ে মূসা সাহেব ও আমি বাসায় ফিরি। ফেরার আগে আমি মূসা সাহেবকে শুধু বলি, আপনি কাল সকালে এসে সারা দিন থাকবেন। তিনি বললেন, কেন? আমি বললাম, কালই বেশিরভাগ লোক নিয়ে নেব। না হলে কাগজ বেরোবে না। নিয়োগপত্রে আপনাকে স্বাক্ষর করতে হবে।

আমি বাসায় ফিরে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলি। আমার অনেক বন্ধুবান্ধবও সহায়তা করেছিলেন। আর ভাগ্যও প্রসন্ন। অনেকেই রাজি হলেন। পরদিন সকালবেলা আমি ওয়েজবোর্ডের একটি কপি এবং অনেক আগে জাপান থেকে আনা আমার ছোট ক্যালকুলেটরটি নিয়ে সাড়ে ১০টায় যুগান্তরের কমলাপুরের অফিসে পৌঁছি। আগেই মূসা সাহেব হাজির। দুইজন বসলাম। কথা হলো। লোকজন আসতে থাকল। আর নিয়োগপত্র তৈরি করে মূসা সাহেবের স্বাক্ষর নিয়ে কাজে বসাতে থাকলাম। সারাদিনই এভাবে চলল। সন্ধ্যায় তবুও কোনো কোনো বিভাগে লোকের অভাব দেখা দিল। সবশেষে সমস্যা পেস্টিংয়ের। মূসা সাহেব বাড়ি যাবার আগে শুধু বললেন, কাগজ যেন বের হয়। কিন্তু আমি তো রিপোর্টার ছিলাম। প্রোডাকশন ইত্যাদি সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। যুগান্তরের পুরনো কয়েকজন সাংবাদিক, প্রেস কর্মচারী সাহায্যে এগিয়ে এলেন। এর মধ্যে পোস্টিং বিভাগের প্রধান আজাদ একজন। ফকিরাপুল থেকে ভাড়া করা পেস্টার এনে কাজ করানো হলো। শতাধিক লোক পদত্যাগের পরও যুগান্তর পরদিন এভাবেই বের হলো। বাজারে গেল, সার্কুলেশনেও কোনো সমস্যা হয়নি। মূসা সাহেবের নামের কারণেই হয়তো এটা সম্ভব হয়। সপ্তাহখানের মাথায় সব বিভাগের শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। সবশেষে সার্কুলেশন। সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে ঢাকার হকার্স সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সারাদেশের এজেন্টদের ভাল যোগাযোগ ছিল। তাই পত্রিকা বাজারজাতকারী সমিতির নেতা ও এজেন্টদের মধ্যেও ধারণা জন্মে এ কাগজ হয়তো আর চলবে না। তাদের বোঝাতে হবে, কাগজ ঠিকমতো বের হবে। ভালোভাবে বের হবে।

এ বিষয়ে মূসা সাহেব বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সবচেয়ে বড় কথা, মূসা সাহেবের মতো বিশাল ব্যক্তিত্ব সম্পাদক হিসেবে যোগদান করায় যুগান্তর রক্ষা পেয়ে গেল। তা না হলে সারওয়ার সাহেবের শূন্যস্থান পূরণ করে যুগান্তর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না। অন্তত আমার এ উপলব্ধি। পরের অনেক ঘটনা। যুগান্তরে মূসা সাহেবের একবছরও কাজ করা হয়ে ওঠেনি। আমি ছিলাম চার বছর। সে কাহিনী পরে বলা যাবে। কিন্তু আমার সম্পাদক মূসা সাহেবকে আমি দেখেছি এক অসাধারণ মানুষ হিসেবে। তিনি যখন প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক তখন একজন প্রশিক্ষণার্থী হয়ে আমি তার ছাত্র হিসেবে শিখেছি। পরে যখন আমি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক হই, উদ্বোধনী সংখ্যায় লেখার জন্য তার বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, তুমি সম্পাদক হয়েছ, আমি খুবই খুশি। অবশ্যই আমি লেখা দেব। বাংলাদেশ প্রতিদিনের উদ্বোধনী সংখ্যায় লেখা দিলেন, প্রথম পাতায় ছাপা হলো। লেখার মধ্যে আমার বেশি প্রশংসায় আমিও বিব্রত ছিলাম। এর ক’দিন পর লেখার জন্য পাঁচ হাজার টাকার বিল নিয়ে আমি তার বাসায় যাই। তিনি বলেন, কেন এসেছ। বিল দিতে। কীসের বিল। লেখার বিল। আচ্ছা দাও। একটা প্যাকেট আর স্বাক্ষরের জন্য ভাউচার। তিনি বললেন, এত টাকা এনেছ কেন? আমি বললাম, আপনার সম্মানী। সব টাকা মূসা সাহেব নিতে চাইলেন না। আমি বললাম, অফিসে বিল, ভাউচার হয়ে গেছে। আমি ফেরত নেব কীভাবে। অবশেষে তিনি রাখলেন। এই হলো মূসা সাহেব। অহমিকা, হিংসা, দ্বেষ কিছুই ছিল না। একজন আপদমস্তক সাংবাদিক। এক বছরের কম সময়ে কাজ করে তার সম্পর্কে আমার যে অভিজ্ঞতা, তা লিখে শেষ করা যাবে না।

এরই মধ্যে মূসা ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছি। লোকজন যারা যাবার সারওয়ার সাহেবের সঙ্গে চলে গেছেন। শূন্য পদ আমরা তাৎক্ষণিক পূরণ করি। সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান হিসাবে সহযোগী সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুর বিকল্প হিসেবে সোহরাব হাসানকে নিয়ে আসি। তিনি তখন সংবাদে ছিলেন। এখন আছেন প্রথম আলোতে। তার সাথে আমি প্রথমে কথা বলে বাবুল সাহেবের কাছে নিয়ে যাই। কয়েক দিনের মধ্যে সোহরাব হোসেন সহযোগী সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন। এরপর ফিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে আরেক সহযোগী সম্পাদক পদ দিয়ে আবু হাসান শাহরিয়ারকে নিয়ে আসি। যুগান্তরে প্রথম দিকেও তিনি ছিলেন। শাহরিয়ার

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত