ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১৩)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:১৬

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১৩)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -১৩)

তিনি বললেন, কাল আমি ব্যস্ত আছি, পরদিন। সেদিন সম্ভবত মঙ্গলবার ছিল। আমরা তৃতীয় এক জায়গায় বসি। আমি নিজেই সারওয়ার সাহেবকে সরাসরি বললাম, কর্তৃপক্ষ রাজি হলে আপনি কি যুগান্তরে ফিরবেন। তিনি হ্যাঁ-না কোনো জবাব না দিয়ে কিছু কথা বললেন। আমি শুনলাম। জানালাম বাবুল সাহেবের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে আবার বসব। পরদিন আবার বাবুল সাহেবের সঙ্গে বৈঠক। সব জেনে বাবুল সাহেব কিছু পরামর্শ দিয়ে বললেন, আপনি আবার কথা বলেন। পরে সারওয়ার সাহেবের সাথে বসব। এভাবেই সারওয়ার ভাইকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সর্বশেষ বাবুল সাহেব, সারওয়ার সাহেব এবং আমি একসঙ্গে বসি। ছিলেন শামীম সাহেবও। আমার মনে হয়েছে শামীম সাহেবই সারওয়ার সাহেবকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা শেষে সিদ্ধান্ত হলো সারওয়ার সাহেব আবার যুগান্তরে যোগ দেবেন। নিজের মেধা, দক্ষতা ও শ্রমে গড়া প্রতিষ্ঠানেই ফিরে আসবেন। এখন আবেদ সাহেবকে কীভাবে কে বলবে? বাবুল সাহেব বললেন, আমিই বলব। সারওয়ার সাহেব কবে যোগদান করবেন তারিখ ঠিক করেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সারওয়ার সাহেব কয়েকদিন সময় নিয়ে যোগদানের তারিখ দিলেন। এরপরের ঘটনা আমার জানা নেই।

এক সন্ধ্যায় আবেদ সাহেব এসে আমাকে ডেকে বললেন, তিনি পদত্যাগ করবেন। আজই। তার বেতন-ভাতা নিয়ে একটু সমস্যা ছিল, এ বিষয়টি যেন আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করে দিই। আমি বাবুল সাহেবকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করি। তিনি জানালেন, আবেদ সাহেব এসেছিলেন। তিনি পদত্যাগ করবেন বলেছেন। আমি বললাম, তিনি আজই পদত্যাগ করতে চান, তবে বেতন-ভাতা নিয়ে একটি সমস্যা আছে, এর আগে তার সমাধান চান। তিনি আমাকে বললেন, যেভাবে ভাল হয় আপনি সেভাবে ব্যবস্থা করেন। আবেদ ভাইয়ের কথামতোই সমস্যার সমাধান করা হলো। তিনি পদত্যাগ করলেন। তখন সন্ধ্যা ৭টা। নিউজ রুমে এলেন আবেদ সাহেব। দাঁড়িয়েই উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে ছোট করে আবেগঘন বক্তব্য রাখলেন। পরে উপস্থিত সবার সাথে করমর্দন করে যুগান্তর থেকে বিদায় নিলেন।

আবেদ খানের বিদায়ের পর দ্বিতীয়বারের মতো সম্পাদক হয়ে এলেন সারওয়ার সাহেব। যুগান্তর পেল চতুর্থ সম্পাদক। আর আমি প্রথমবারের মতো সারওয়ার সাহেবকে সম্পাদক হিসেবে পেলাম। তিনি সম্পাদক হয়ে আসায় আমার কাজ অনেক কমে গেল। কেননা তিনি এই যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। পত্রিকাটি একসময় প্রচারসংখ্যায় শীর্ষে ওঠে তারই নেতৃত্বে। পত্রিকার সবকিছুই তার নখদর্পণে। তিনি আসার পর যুগান্তরে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে আসে। তবে কিছুদিন যেতে না যেতে দেখা দিল একধরনের সমস্যা। আগে সারওয়ার সাহেবের আনা অনেক সাংবাদিক কর্মচারী তার সঙ্গে সমকালে যোগ দিয়েছিলেন। যুগান্তরে এখন নতুনই বেশি, এরা অনেকেই সারওয়ার সাহেবের কাজের সঙ্গে প্রথমদিকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। সারওয়ার সাহেবের গতিও শ্লথ হয়ে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় তিনি তার আস্থাভাজন পুরানো কাউকে কাউকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন।

দ্বিতীয় দফা দৈনিক যুগান্তরে গোলাম সারওয়ার সাহেবের সম্পাদক হিসেবে যোগদানের দিন শুভেচ্ছা জানান যমুনা গ্র“পের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাবুল ও তার ছেলে যমুনা মিডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম। এসময় আমিও উপস্থিত ছিলাম।

কয়জনকে নিয়েও আসেন। আবার তিনি চলে যাওয়ার পর সংকটের সময় আনা কারও কারও চাকরিও গেল। এতে অফিসে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। আর এদিকে একটি ক্ষুদ্র চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। সারওয়ার সাহেব প্রথমবার যাওয়ার সময় যারা সুযোগসন্ধানী ছিলেন তাদের মধ্যে দু’একজন আবার দ্বিমুখী ভূমিকায় আবতীর্ণ হন। মালিক কর্তৃপক্ষেরও কান ভারি করেন। এতে সারওয়ার সাহেব দ্বিতীয়বার এসে আগের মতে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারেননি। তার প্রতিষ্ঠিত যুগান্তরে অনেকখানি কোণঠাসা তিনি বুঝতে পারেন। আর কারণও ছিল। যাদের সংকটের সময় নিয়ে আসা হয় কর্তৃপক্ষের তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। আর কয়েক বছরে সারওয়ার সাহেবের রেখে যাওয়া যুগান্তরের কাঠামোও বজায় ছিল না। মালিকপক্ষও স্বাভাবিকভাবেই সারওয়ার সাহেবের সব পদক্ষেপকে আগের মত মেনে নেয়নি। যে কারণে আবার টানাপড়েন।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত