ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১৫)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:০৯

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -১৫)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -১৫)

আমি বললাম, কেউ কেউ বলছেন, গ্রেফতারের আশঙ্কা আছে। কেননা তখন ওয়েন ইলেভেনের চূড়ান্ত উত্তেজনা। তিনি আমার কথা উড়িয়ে দিয়ে বললেন, উপরে আমার সাথে কথা হয়েছে। কোনো সমস্যা হবে না। গাড়িতে বসেও তিনি কার সাথে যেন কথা বললেন। এসময় তার সঙ্গে গাড়িতে আরও ছিলেন তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ। বর্তমানে মেজর জেনারেল (অব.)। টিভি ও সভা-সেমিনারে তিনি এখন নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে সুপরিচিত। বিএনপি সরকারের আমলে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে তিনি আবার চাকরি ফিরে পেয়ে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান। সে-সময় ছিলেন যমুনা গ্র“পের পরিচালক (প্রশাসন)। কথা শেষ করে আমি আবার আমার গাড়িতে উঠলাম। বাবুল সাহেবের গাড়ি সেগুনবাগিচার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সঙ্গে রশিদ সাহেব। আমার গাড়ি পেছনে। খবর নিলাম দুদক কার্যালয়ের সামনে কী অবস্থা। সেখান থেকে আমাদের কয়েকজন রিপোর্টার জানালেন, পুলিশ-গোয়েন্দায় ভর্তি দুদক। এ পরিস্থিতিতে মনে হয় বাবুল সাহেব এলে গ্রেফতার হতে পারেন। আমি বাবুল সাহেবকে ফোনে জানালাম অবস্থা। তিনি বললেন, কিছু হবে না। আমার সাথে যোগাযোগ আছে।

বাবুল সাহেবের গাড়ি দুদকের প্রধান ফটকের কাছে যেতেই দেখলাম ইউনিফর্মধারী পুলিশ, গোয়েন্দা, সাদা পোশাকধারী সবাই সতর্ক। তার ওপর টিভি’র ক্যামেরা, ফটো সাংবাদিক ও রিপোর্টারদের ভিড়। বাবুল সাহেবের গাড়ি ফটকের ভিতর গেল। আমার গাড়ি বাইরে। গাড়ি থেকে নেমে বাবুল সাহেব দুদুক অফিসের ভিতরে গেলেন। যুগান্তরের অন্য যারা গিয়েছিলেন তারাও আছেন। আমিও গেলাম। বাবুল সাহেব নিচতলারই একটি রুমে গেলেন। তখন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনসহ সাংবাদিকদের ভিড়ে পুরো দুদক কার্যালয় এলাকা যেন তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। দুদকের এক কর্মকর্তার রুমে বাবুল সাহেব বসে আছেন, পুলিশও আছে। অপেক্ষা করছেন। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে আমার শ্বাসবন্ধ হওয়ার উপক্রম। আমি বাইরে আসি। হঠাৎ শুনি দুদকের মূল ভবনের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাইরে থেকে বাবুল সাহেবকে ফোন করি। কিন্তু ফোন ধরছেন না। পরে ফোন করি আমাদের এক রিপোর্টারকে। তিনি জানান, বাবুল সাহেবকে গ্রেফতার করা হবে। প্রক্রিয়া চলছে। আধাঘণ্টার মধ্যেই দুদক অফিস থেকে তাকে ডি বি পুলিশ নিয়ে যায় মিন্টু রোডে। আটক হন বাবুল সাহেব। ওয়ান ইলেভেনে ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রথম আটক। পরে তার কাছ থেকে শুনেছি যার সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে তিনি সম্পদের হিসাব দিতে গিয়েছিলাম সেই উচ্চপদস্থ কর্তা দুদক অফিসে প্রবেশের পর আর তার ফোন রিসিভ করেননি। তখন তিনি বুঝতে পারেন তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। এসব নিয়ে অনেক কথা আছে। সে বিষয়ে আর না। সত্য হলো, বাবুল সাহেব জেলে গেলেন।

জেলে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই বাবুল সাহেবের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরিবার-পরিজন দেখা-সাক্ষাৎ করেন মাঝে মধ্যে। তাদের মাধ্যমে খবরাখবর পাই। সেনাসমথির্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তখন জোরদার কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে বাবুল সাহেব একদিন খবর পাঠালেন তার মুক্তির ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করার জন্য। তখন সময়টি এমন ছিল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন বটে। কিন্তু কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে তারা নিজেদের অপারগতার কথা অকপটে বলে দেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ফায়দা হয় না। তারা নিজেরাও জানতেন না কে গ্রেফতার হচ্ছে, কেন হচ্ছে। অন্য কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতেন। তাই কার সাথে কীভাবে যোগাযোগ করব বুঝে ওঠতে পারছিলাম না। কিন্তু পত্রিকার মালিক বলেছে, চেষ্টা তো করতেই হবে।

আমার জানা-শোনা তখনকার সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখা করলাম। জানতে চাইলাম কিছু করা যায় কিনা। আমার সঙ্গে অন্য এক পত্রিকার আমার অনুজ এক সাংবাদিক বন্ধুও ছিলেন। উপদেষ্টা আমার কথা শুনলেন। মনোযোগ দিয়েই শুনলেন। ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের ঢালাওভাবে হয়রানি তিনিও সমর্থন করেন না জানালেন। কিন্তু করার কিছু নেই। সুস্বাদু খাবার খাইয়ে সান্ত্বনা দিয়ে আমাদের বিদায় দিলেন। রাতেই বাবুল সাহেবের পরিবারের সদস্যদের জানালাম উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার কথা। তারা জানালেন, বাবুল সাহেব বলেছেন আরও চেষ্টা করতে। সম্পাদকসহ আমরা যেন সবাই তার জন্য চেষ্টা করি। এরপর আমি তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ আরো কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করি। ফল আসেনি। সর্বশেষ এক সেনাকর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক। সে সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও কঠিন ছিল। সেই সেনাকর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমি আমাদেরই আরেক সাংবাদিকের দ্বারস্থ হলাম। তার সঙ্গেই ভাল পরিচয় ছিল।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত