ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

দিনটি শিক্ষাগুরুর: যে কথা হয়নি বলা

  মনির হোসাইন

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৩৮

দিনটি শিক্ষাগুরুর: যে কথা হয়নি বলা

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা শিখছি। জীবন অতিবাহিত করছি কোনো না কোনো শিক্ষার মাধ্যমে। যেখানে অবদান আছে ভিন্ন পর্যায়ের, ভিন্ন চেহারার, ভিন্ন পরিবেশের কিছু মানুষের। মানুষগুলো ভিন্ন হলেও তাদের পরিচয় একই, শিক্ষক। যাদের অবদানে চলছে জীবনের নানা ধাপ।

এই তো জন্মের পরপরই অঘোষিত পাঠশালায় ভর্তি হওয়া। যেখানে শিক্ষক মা। কিছু না জানা, না বোঝা আমি তখনই শিক্ষক পেয়ে গেছি। যদিও এ পাঠ কখনোই চুকে যায় না।

মায়ের পাঠশালা পেরিয়ে পদচারণা শুরু ভিন্ন এক জগতের ভিন্ন এক প্রতিষ্ঠানে- প্রাথমিক শিক্ষা। যেখান থেকেই শুরু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন। সেই কি মুহূর্ত! শিক্ষকের ভালবাসা, স্নেহ। পড়াশোনাটা ঠিক বুঝে ওঠার আগেই প্রেমে পড়ে যাই শিক্ষকের। ভুল করে যখন নিজেই কেঁদে ফেলেছি, বুকে টেনে নিয়েছেন তারা। ধীরে ধীরে শিখিয়েছেন, ভাল-মন্দ, সাদা-কালো, আলো-অন্ধকার। যেখান থেকেই তৈরি হল শক্ত ভিত।

সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই পরবর্তী ধাপ। যেতে হবে মাধ্যমিক। অনেক কিছুই জানার আছে, বোঝার আছে৷ হাজারো প্রশ্ন আছে মনের মাঝে। সব প্রশ্নের জবাব নিয়েই প্রস্তুত শিক্ষক।

কখনও অনুশাসন, কখনও স্নেহ, আবার কখনও তার চেয়েও কঠোর হয়ে দেখিয়েছেন জীবন চলার পথ। কারণ তখনও যে নিজেরটা ঠিক করে বুঝে ওঠা হয়নি। যা ভাল মনে হত তাই করতাম কিন্তু সেটা যে ভালো ছিল না তা বলার জন্যই যমদূতের মত হাজির হতেন শিক্ষকরা।

তখন অনেক বেশি রাগ হলেও এখন মনে হয়, সে মানুষগুলো যদি সেদিন যমদূতের চেহারায় না আসতেন তাহলে আজকের দিনটি এমন হতোনা। পৃথিবীর মর্মটায় ওলট-পালট হয়ে যেত।

সেদিনের অভিযোগগুলো এখন ক্রমশই শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় রূপ নিচ্ছে। এখন তো মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে হয়- একটু চোখ রাঙান না স্যার! তাহলে হয়ত ভুলটা করবোনা আমি।

এই মাধ্যমিকের মানুষগুলো আসলেই অদ্ভুত। জীবনের একটা মাপকাঠি ঠিক করে দিয়ে এক সময় প্রাকৃতিক নিয়মেই যেন হারিয়ে যান। চাইলেও এ মানুষগুলোকে ধরে রাখা যায় না। কারণ আমাকে তো চলতে হবে, আর তাদেরও যে আরও অনেককে চালাতে হবে। অনেক স্বপ্ন বুনবেন তারা। একেকজন স্বপ্নের কারিগর।

যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা নিয়েই উচ্চমাধ্যমিকে পদচারণা। যদিও তখনও বিশাল একটা অংশজুড়ে থেকে যায় মাধ্যমিক।

উচ্চমাধ্যমিক- জীবনের বাহিরের আরেক দুনিয়া। মাধ্যমিকে বোনা স্বপ্ন পূরণের একটি ধাপ বলা যায়। এখানেও সেই চরিত্রের উপস্থিতি। কাঁধে হাত রেখেই দেখিয়ে দেন স্বপ্ন পূরণের সঠিক পথ। নিজের মাঝে লালিত স্বপ্নগুলোকে কেমন যেন জাগিয়ে তোলে তারা।

একেকজন স্বপ্নবাজ, যেন একেকজন স্বপ্নের জাদুকর। নিজের জন্য কোন সিদ্ধান্তটা ঠিক সেটা নিজে না বুঝলেও দুই বছরের পথচলায় অনেকটাই তারা বুঝিয়ে দেন কোন পথটা আমার জন্য।

এরপর উচ্চশিক্ষার কেবিনে। এ যেন ভিন্ন এক পৃথিবী, ভিন্ন এক আমি। জীবনের বাস্ববতাগুলো সাথে নিয়ে চলতে হয়। ঠিক তখনও বাস্তবতার কঠিন সময়ে পাশে কোনও এক শিক্ষক। বুঝিয়ে দিয়েছেন বাস্তবতার হালচাল। এই মানুষগুলো আসলেই কেমন জানি, সব কিছু কিভাবে যেন বুঝে যান।

প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সব পর্যায়ে অবদান রেখে যারা আমাকে মানুষ করেছেন তারা শিক্ষক। জীবনের প্রতিটি সংকটে আমার তাদের প্রয়োজন পড়ে।

এত এত অবদান রাখা মানুষগুলোর জন্য আসলে কিছু করার সৌভাগ্য আমাদের খুব কম মানুষেরই হয়।

বাদশা আলমগীর পুত্রের মত পা ধুয়ে দেয়ার সুযোগ হয়ত আমরা পাবো না ৷ তবে কখনও পেলে সেটা হাতছাড়াও করবোনা। এত কিছুর ভিড়ে কখনও বলা হয়নি- হে শিক্ষাগুরু! ভালবাসি আপনাকে। আপনাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন।

শিক্ষাগুরুদের এই দিনে পৃথিবীর সকল শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। ভলো থাকুন সবসময়। আপনার ছত্রছায়ায় গড়ে উঠুক নতুন বিশ্ব।

আমার যে শিক্ষক লেখাটি পড়ছেন, আপনাকে বলছি- খুব খুব ভালবাসি আপনাকে। আমার বিনির্মাণে আপনার কি অবদান সেটা একান্ত আমিই অনুধাবন করছি। দোয়ায় রাখবেন সবসময়। সর্বোপরি ভালো থাকবেন প্রিয় শিক্ষাগুরু।

লেখক: মনির হোসাইন, সাংবাদিক।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত