ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিশুর ডেঙ্গু হলে মায়ের করণীয় কি?

  মনির হোসাইন

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২২, ১০:৫১  
আপডেট :
 ২০ আগস্ট ২০২২, ০৯:১০

শিশুর ডেঙ্গু হলে মায়ের করণীয় কি?
ছবি: ডা. আহমেদ নাজমুল আনম

ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪ হাজার ১৭৪ জন। এর আগে ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়। বছরের এই সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশুদের মাঝে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। প্রতিদিনই হাসপাতালে ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে অসংখ্য শিশু। এতে মায়েরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন।

তাই আজ শিশুদের ডেঙ্গু হলে মায়েদের কি করণীয় এ বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সাথে কথা বলেছেন- শিশু, কিশোর, নবজাতক এবং শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আহমেদ নাজমুল আনাম (এফসিপিএস, এমডি)। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনির হোসাইন

জার্নাল: ডেঙ্গু কি?

চিকিৎসক: ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ। এটি এডিস মশার কামড়ে হয়। এ মশা মূলত গোধূলী সময়ে আমাদের বিশেষ করে শিশুদের কামড়ায়। এই মশার কামড়ে ভাইরাস শরীরে ঢুকলে জ্বর ও জ্বর পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়। এবং শরীরের অণুচক্রিকা বলে যে একটি কণা আছে সেটি কমে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন বিপত্তি হয়, এটিই ডেঙ্গু।

জার্নাল: একজন মা কিভাবে বুঝবেন শিশুর ডেঙ্গু হয়েছে?

চিকিৎসক: সুন্দর প্রশ্নের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সাধারণত শিশুরা তাদের সমস্যার কথা মুখে বলতে পারেনা এটাই মূল সমস্যা। ডেঙ্গুতে প্রচন্ড জ্বর আসে এবং হাইফিভার থাকে। যেটা নরমাল ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরে এত বেশি হয়না। আমরা একে বলি ব্রেক বোন ফিভার বা হাড় ভাঙা ব্যাথার মত ব্যাথা। শিশুরা বলতে না পারায় অত্যাধিক কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন আপনি বুঝবেন তার হয়ত হাতে পায়ে ব্যাথা করছে। সংক্ষেপে বললে এসময় বাবুর হাড় ভাঙা ব্যাথা হয়, অত্যাধিক জ্বর থাকে। সেই সাথে যদি কোনো র‌্যাশ হয় মা সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন। কারণ এই সময়ে জ্বর হলে আমাদের মাথায় ডেঙ্গুর বিষয়টা থাকে।

জার্নাল: জ্বর হলেই কি ডেঙ্গু?

চিকিৎসক: না, একদমই এমন না। ওই যে বললাম এটা একটা ভাইরাসবাহিত জ্বর। এখন, ইনফ্লুয়েঞ্জাও একটা ভাইরাস এবং অন্যান্য আরও ভাইরাসের কারণেও জ্বর হতে পারে। তবে আমি বলবো, যদি হাইগ্রেড জ্বর থাকে এবং দুইদিনের পরও যদি জ্বর থেকে যায় তাহলে আমি মনে করছি ডেঙ্গু টেস্টটা করে নেয়াই ঠিক হবে। বিশেষ করে এই সময়ে। এখন চারিদিকে আমরা ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি।

জার্নাল: শিশুর ডেঙ্গু হলে মায়ের করণীয় কি?

চিকিৎসক: দেখুন, যে কোন ভাইরাস জ্বরেই চিকিৎসা আসলে একইরকম। সেটা আপনি করোনা ভাইরাস বলুন, ইনফ্লুয়েঞ্জা বলুন আর ডেঙ্গু বলুন। আমরা বলবো মায়েরা শিশুদের প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াবেন, টক জাতীয় ফল যেমন- লেবু, মাল্টা, কমলা খাওয়াবেন, পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখবেন, অযাচিত কোনো এন্টিবায়োটিক দিবেন না। আর যদি সম্ভব হয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ব্লাড প্রেশার টা মনিটরিং করতে যে কমে যাচ্ছে কিনা, তার পেটে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে কিনা এবং সে অসংলগ্ন কথা বলছে কিনা। এগুলো হলে তার একদমই ঘরে বসে থাকা উচিত হবেনা। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

জার্নাল: ডেঙ্গু হলে কি ধরণের খাবার খাবে আর কি খাবেনা?

চিকিৎসক: আমি যেটা বলছিলাম, ডেঙ্গু হলে আপনি প্রচুর পানি খাবেন, শিশুর হলে তাকেও বেশি পরিমাণে পানি খাওয়ান। আপনি জানেন ভাইরাসের কোনো ঔষুধ নেই তবে টক জাতীয় ফল যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা, আঙুর এগুলো ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি কমায়। তাই এ সময়ে টক জাতীয় ফল খাওয়ান বেশি করে। যতটা সময় পারবেন শিশুকে বিশ্রামে রাখবেন। যদিও শিশুদের ক্ষেত্রে এটা একটু কষ্টকর। সেই সাথে বাবুদের হাত পা ব্যাথা করলে হালকা করে টিপে দিতে পারেন।

জার্নাল: ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?

চিকিৎসক: খুবই সুন্দর প্রশ্ন। আসলে আমরা বলবো যে, ডেঙ্গু হলে আপনাকে যেটা খেয়াল রাখতে হবে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে যাচ্ছে কিনা। যদি প্লাটিলেট স্থিতিশীল থাকে তাহলে ঘরেই রাখতে পারেন। তাই প্রতিনিয়ত প্লাটিলেট পর্যবেক্ষণে রাখুন। তবে যদি প্লাটিলেট দেড় লাখের নিচে নেমে যায় তাহলে আপনি আপনার চিকিৎসককে জানান। আর প্লাটিলেট এক লাখের নিচে নামলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত বলে আমি মনে করি।

জার্নাল: আপনার ব্যস্ততম সময় থেকে বাংলাদেশ জার্নালকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

চিকিৎসক: বাংলাদেশ জার্নালকেও অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি আয়োজন করার জন্য। সর্বশেষ আমি সকল মায়েদের উদ্দেশ্যে বলবো- ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে একটু সচেতন থাকুন। বাসা এবং আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। আপনার সচেতনতাই পারে বাবুদের সুস্থ রাখতে। মনে রাখবেন আজকের বাবুরাই আগামীর ভবিষ্যত, তাই বাবুরা সুস্থ থাকলে সুস্থ থাকবে আমাদের আগামীর পৃথিবী। ধন্যবাদ।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক:

ডা. আহমেদ নাজমুল আনাম

এফসিপিএস, এমডি

সহকারী অধ্যাপক (শিশু)

শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতাল, ঢাকা

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত