ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

নিঃশেষিত জীবন

  হাবিবা আখতার লাবনী

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:৩৮

নিঃশেষিত জীবন

ঝিমি যে শেষ পর্যন্ত এরকম বদ্ধ পাগল হয়ে যাবে তা কি কেউ কখনো ভেবেছিলো?

সেই ১২ বছর বয়সে ওর বাবা হার্ট স্ট্রোক করে মারা যায়। নয় বছর বয়সী ছোট ভাই জনি আর ঝিমিকে নিয়ে তার মা যেন অকুল সাগরে ডুবতে লাগলো। চাচা-ফুফুরা সবাই তাদের সাথে থাকার জন্য অনুরোধ করলো ঝিমির মাকে। কিন্তু সে থাকতে রাজি হলো না। বাপের বাড়ি চলো গেলো।

এক ধরণের অহমিকার বশেই সে শ্বশুরবাড়ি থাকলো না। আসলে, বিয়ের পর থেকেই ঝিমির মা তার শ্বশুর-ননদ-দেবর কাউকে পছন্দ করতো না। একটু আভিজাত পরিবারের মেয়ে হিসেবে শ্বশুরবাড়ির সবাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করতো। তাই স্বামী মারা যাবার সাত দিনের মাথায় ছেলেমেয়েসহ ঝিমির মা ভাইদের সংসারে উঠে গেলো। তার বাবা-মা জীবিত থাকায় ভাইয়েরা বিধবা বোনকে ভালোভাবেই গ্রহণ করলো।

ছোটবেলা থেকেই ঝিমি খুব সুন্দরী আর মেধাবী হিসেবে বেড়ে উঠেছে। নানার বাড়ি জামালপুর শহরে হওয়ায় সেখানকারই একটা ভালো স্কুলে মামারা ভর্তি করিয়ে দিলো। বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলো বিধায় মৃত্যুর পর ঝিমির মা এককালীন বেশ কিছু অর্থ পেয়েছে সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু তার বিলাসী মনোভাবের কথা না ভেবে ছেলেমেয়েদের পেছনে অহেতুক খরচ করতে লাগলো। তার ধারণা ভাইয়েরা তাকে কখনও ফেলে দেবে না, আর শ্বশুরবাড়ি থেকে স্বামীর নামে সম্পত্তির একটা বড় অংশ পাবে, সে হিসেবে ছেলেমেয়েরা একটু ভালোভাবে বড় হতে থাকুক। পরে ঐ সম্পত্তি দিয়ে বাকি জীবন আরাম আয়েশে কাটিয়ে দেয়া যাবে।

এভার চার বছর কেটে গেলো। ঝিমির মা এর মধ্যে শ্বশুরবাড়ির কারো খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয়নি। ঝিমি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছে। জনিও পড়াশুনায় মনোযোগী। ক্লাস এইটে উঠেছে।

হঠাৎ একদিন ঝিমির মা শ্বশুরবাড়ি এসে উপস্থিত। সবাই তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলো। একেবারে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। এসেই সে তার শ্বশুর এবং চাচাদের ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। আর বলতে লাগলো- “আমার মেয়েকে আমার কাছে এনে দাও। সে আমার মান সম্মান নষ্ট করে দিয়েছে। আমি আমার ভাই-বাবার সবার কাছে ছোট হয়ে গেছি। এখন তোমরা যদি আমাকে সাহায্য না করো তবে আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। আমার মরা ছাড়া হয়তো আর কোনো গতি নাই।”

একসাথে এত কথা শুনে সবাই থ’ হয়ে গেলো। তারপর তার শ্বশুর ধীরে সুস্থে জিজ্ঞেস করলো, “ঝিমির কি হয়েছে। আমাকে খুলে বলো। ঝিমিতো আমার বংশেরই মেয়ে। ওর কোনো ক্ষতি হলে সেটা বংশেরই ক্ষতি। আর সেই ক্ষতি তো আমাদেরকেই পূরণ করতে হবে।”

তখন ঝিমির চাচাও আশ্বসত্ম করে বললো, “ভাবি, আমাদের কাছে সবকিছু নিঃসংকোচে বলুন । আমরা আপনার পাশে আছি। দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই।”

ঝিমির মা তখন কান্না থামিয়ে বললো, “ঝিমি আমাদের এলাকার একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। ছেলের বংশমর্যাদা একেবারেই নেই বললেই চলে। তাছাড়া ছেলের কোনো যোগ্যতাও নাই।”

তখন ঝিমির দাদা বললো, “পালিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত তুমি কি কিছুই জানতে না। মেয়ে কি করছে, কোথায় যাচ্ছে এসব তো মায়েরই বেশি জানার কথা।”

“বিশ্বাস করুন, আমি কিছুই জানতাম না। সবসময় আমার বাবা-মার সেবা আর বাড়ির কাজকর্ম সামাল দিতেই আমার সময় চলে যেতো। আর যেহেতু মেয়ের বাবা নেই, তাই ভেবেছিলাম মেয়েটাতো ভাবতে শিখেছে যে, নিজেকে বড় হতে হবে। তাই ওর ভালো-মন্দ ওর ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি ঘুনাক্ষুরেও ভাবিনি এমন হবে।”

ঝিমির চাচা তখন বললো, “ঝিমি এখন কি অবস্থায় আছে, সেটা কি জানতে পেরেছেন। আর আপনিই বা কি করতে চান।”

“ছেলের বাবা আমাদের ওখানে এসেছিলো। বলেছে বিয়ে করে ফেলেছে। কিন্তু আমি এ বিয়ে কোনোভাবেই মানতে পারব না। ছেলেটা ভবিষ্যতে কিছু করতে পারবে কিনা। আর পরিবারের অবস্থাও ভালো নয়। তাই বলি, ওদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো।”

“যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে, তখন তো ছেলে ঝিমিকে ছাড়বে না। তাই মামলা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নাই।” “তাই করো। তবু আমার ঝিমিকে এনে দাও।”

“ঝিমি যদি পরে আবার ঝামেলা করে, সেক্ষেত্রে কিন্তু আর আমাদের দোষ দিতে পারবে না। আমরা তোমার কথামতোই কাজ করছি।” “আমি আর জামালপুরে ফিরে যাব না। আমি ওদের নিয়ে তোমাদের সাথেই থাকব। এখানেই ওদের মানুষ করবো। এখানে থাকলে হয়তো এমন হতো না।”

“যাক নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন এই অনেক। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব ঝিমিকে ফিরিয়ে আনতে।”

এরপর ঝিমির চাচারা মামলা ঠুকে দিলো ঝিমির শ্বশুরবাড়ির বিরম্নদ্ধে এই মর্মে যে, তারা তাদের নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করে ছেলেকে দিয়ে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছে। ফলে বিয়ের তেরো দিনের মাথায় বিশেষ মুহর্তে স্বামী রানার কাছ থেকে ঝিমিকে পুলিশ জোর করে তুলে এনে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়। অন্যদিকে রানাসহ তার বাবা-ভাইদের পুলিশ কাস্টডিতে নেওয়া হয়।

যদিও রানা নিজে পছন্দ করে ঝিমিকে নিয়ে পালিয়ে এসেছে, তবুও তার বাবা-মা সবাই ঝিমিকে বউ হিসেবে মেনে নিল। সমঝোতায় আসার জন্য তারা ঝিমিকে বেশ কিছু জমি এবং দোকান লিখে দিতে চাইল। কিন্তু ঝিমির মা তাতে রাজী হলো না। মামলা কোর্টে উঠলো। ঝিমিকে রানা কর্তৃক অপহরণের কথা শিখিয়ে দেওয়া হলো। ঝিমি রাজী না হলে তার মা আত্মহত্যার হুমকি দিলো। কোনো উপায় না দেখে ঝিমি আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলো। ফলে রানার চৌদ্দ মাসের জেল হয়ে গেলো। ঝিমিকে ডিভোর্স করিয়ে ফিরিয়ে আনা হলো।

ঝিমির মা শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহ ফিরে আসলো। ঝিমি ম্যাট্রিক পাশ করে সেখানকার একটি মহিলা কলেজে ভর্তি হলো। ঝিমি সেই আগের মতোই পড়াশুনা করতে লাগলো। তাকে দেখে মনে হলো সে স্বাভাবিক আছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে খুব একা হয়ে গেছে। একে তো নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে বেঈমানি। আবার বিয়ে করা স্বামীকে ডিভোর্স। তার ওপর স্বামীর হাজতবাস। সব মিলিয়ে সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না।

অনুতাপে সে যেন পুড়ে যাচ্ছে। কারও সাথে স্বতঃস্ফুর্তভাবে মিশতেও পারছে না। তার ওপর আবার চারদিকের মানুষের সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে তার মা। উঠতে-বসতে সারাক্ষণ কথা শুনাচ্ছে। এতসব যন্ত্রণা আর ভালোলাগছে না তার। কোথাও যেতেও পারছে না। কারণ তার নির্বুদ্ধিতার জন্য সবার কাছেই এখন সে দোষী। কেউ তাকে ভালোভাবে নিতে পারছে না। ফলে ঘরের বাইরে বের হওয়াটাও তার কাছে অপরাধ মনে হয়।

বছর খানেকের মধ্যে রানা জেল থেকে বের হয়ে আসলো। ঝিমি আইএ ২য় বর্ষে পড়ছে। বেরিয়েই সে ঝিমিকে খুঁজে বের করলো। তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার কারণ জানতে চাইলো। সব শুনে এবং ঝিমির বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে রানা আবার ঝিমিকে তার কাছে ফিরে আসতে বললো। একদিকে ঝিমি রানাকে প্রচুর ভালোবেসে অন্যদিকে তার মা আর পরিবারের সম্মান। একবার ভুলের সংশোধন না হয় সবাই করেছে, আবার একই কাজ করলে কেউ ক্ষমা করবে না তাকে।

ঝিমি উভয় সংকটে পড়ে যায়। প্রতিদিন রানা ঝিমির কলেজে আসে তাকে দেখতে এবং তার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ঝিমিকে বুঝায়। ঝিমি একবার বোঝে আবার বুঝতে চায় না। চরম দোটানার মধ্যে কাটছে তার দিনগুলো। রানার বোনের বাসা ময়মনসিংহ হওয়াতে সে এখন এখানেই থাকে। ইদানিং সে নেশা করে ঝিমির সামনে আসে। রানাকে দেখলেই ঝিমির প্রচুর কান্না আসে এবং যথাসম্ভব নিজেকে ধরে রেখে সে রানাকে ফিরে যেতে বলে। এভাবেই দুজনের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়তে থাকে। ঝিমি রানার কষ্ট আর সহ্য করতে পারছে না। তাই সমস্ত মান- সম্মান, নিজের জীবনের উন্নতি সবকিছু পিছনে ফেলে মনস্থির করে ফেললো।

একদিন খুব স্থিরভাবে শান্তকণ্ঠে ঝিমি তার মাকে বললো, “মা রানা ফিরে এসেছে। আমার জন্য একজন মানুষের জীবন নষ্ট হোক, আমি তা মানতে পারছি না। তাই আমি চলে যাচ্ছি তার কাছে। আমাকে বাধা দিয়ে কোনো লাভ নেই।”

এই বলে সে এক কাপড়ে রানার কাছে চলে গেলো। রানা তাকে বোনের বাসায় নিয়ে গেলো। প্রথম কিছুদিন সবাই মেনে নিল রানার মুখের দিকে চেয়ে। কিন্তু কয়েকমাস পরে কেউ আর ওদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে রাজি হলো না। এদিকে রানার আইএ পরীক্ষা দেওয়া হয়নি জেলে থাকার কারণে। তাই ম্যাট্রিক পাস সার্টিফিকেট নিয়ে সে কোথায় চাকরির জন্য যাবে তা ভেবে পেল না। অবশেষে তার দুলাভাইয়ের দোকানে গোমসত্মার কাজ নিলো। বোনের বাসা থেকে বিদায় করে দেওয়াতে অল্প ভাড়ার এক রম্নমের ছোট একটা বাসা নিল। এরই মধ্যে ঝিমি আইএ পাশ করলো।

ঝিমি হাড়ে হাড়ে টের পেলো ভালোবাসার মর্ম। স্বামীর অল্প আয়ে যখন কোনোরকমে থাকা-খাওয়ার খরচটা জুটছে, অন্য চাহিদা মেটানো প্রায় সম্ভব হচ্ছে না, তখন তার টনক নড়লো। কিন্তু বাবা না থাকলেও সে কখনো কোনো কিছুর অভাববোধ করেনি। এখন তা বুঝতে পারছে। এদিকে ঝিমির কারণে তার শ্বশুর কয়েকদিন জেলে ছিল, তার স্বামী জেল খেটেছে, এই জন্যে সেখান থেকেও সব অনুদান বন্ধ। বলতে গেলে, ঝিমিকে তার শ্বশুরবাড়ির কেউ সহ্য করতে পারছে না। এতকিছুর মধ্যে ঝিমি স্থানীয় একটা কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছে।

ঝিমির মা আর তার খোঁজ করেনি। ফলে সে একেবারে একা হয়ে গেছে। রানাকেও তার দৈন্যতার জন্য কিছু বলতে পারছে না। নিজের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোও মিটছে না। এর মধ্যে আকস্মিকভাবে প্রেগন্যান্ট। শেষে আর্থিক সংগতির কথা চিন্ত্মা করে ঝিমি গর্ভপাত ঘটালো। ব্যস একটা দোষ খুঁজে পেল শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যে, তাদের বংশের সম্মান নষ্ট করেছে, তাই সে অলক্ষ্মী। কোনো ভালো মেয়ে অন্তত এটা করতে পারে না।

এরপর তারা ঝিমিকে নানাভাবে তাদের ছেলের জীবনটা নষ্ট করার জন্য কথা শুনাতে লাগলো। আর বলতে লাগলো বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে রানাকে ব্যবসা ধরিয়ে দিতে। এভাবে মানসিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে তারা ঝিমিকে শারীরিক ভাবেও নির্যাতন করতে লাগলো। শেষে টিকতে না পেরে ঝিমি তার মাকে সব জানালো। তার মা প্রথমে তাকে কোনো গুরম্নত্ব দিলো না। কিন্তু পরে হাজার হোক বাপ মরা মেয়ের ওপর এরকম অত্যাচার সে সহ্য করতে না পেরে বাড়ি নিয়ে আসলো। ঝিমির দৈন্যদশার কথা শুনে তার মা রানাকে ডেকে এনে জমি বিক্রি করে দুই লাখ টাকা দিলো ব্যবসা করার জন্য। ব্যবসার নামে টাকা নিয়ে সেটা ঝিমির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এখানে সেখানে ঘুরে ফিরে আনন্দ ফুর্তি করে খরচ করে ফেললো। তারপর আবার সেই পূর্বের আচরণ।

ঝিমি আবার অন্তঃসত্তা। এবার তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জোর করে বাধ্য করলো অ্যাবরশন করাতে। ফলে যে মানসিক চাপ তৈরি হলো তার মনে তাতে সে পাগলপ্রায় হয়ে উঠলো। একে তো স্বামীর দারিদ্র, শ্বশুরবাড়ির শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, তার মধ্যে বাপের বাড়ি থেকে টাকার জন্য অতিরিক্ত চাপ অন্যদিকে বিধবা মাকে কষ্ট দেওয়া সব মিলিয়ে সে একটা ঘোরের মধ্যে দিন কাটাতে লাগলো।

বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি করছে তার স্বামী। যার জন্য সে সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছে, নিজের জীবনের কথা একবারও ভাবেনি। রানার এক কথা, পড়াশুনা ছেড়ে দাও। তার মধ্যে ভয় ঢুকেছে, পড়াশুনা করে বড় হয়ে গেলে সে রানাকে ছেড়ে চলে যাবে। তাছাড়া ঝিমির বন্ধু-বান্ধবের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতেও এক ধরণের হীনমন্যতা কাজ করে তার মনে। কিন্তু ঝিমি কোনো অবস্থাতেই পড়াশুনা বাদ দিবে না। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।

ইদানিং রানা তার পরিবারের সদস্যদের সাপোর্ট করা শুরু করেছে। ফলে ঝিমির আর কোথাও যাবার জায়গা রইল না। মানসিক চাপ দিন কে দিন বৃদ্ধি পেতে পেতে তার সহ্য ক্ষমতা অতিক্রম করলো। ফলে সে আবোল-তাবোল বলা শুরু করলো। সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেমতো চলতে শুরু করলো। বাসায় তার ক্লাসমেট ছেলে বন্ধুদের দাওয়াত করে খাওয়ানোসহ নিয়মিত আড্ডা দেওয়া শুরম্ন করলো। বন্ধুদের জন্মদিনের পার্টিতে আনন্দ করে রাত দশটার দিকে একা ফিরতেও দ্বিধাবোধ করলো না। তার স্বামী এ ব্যাপারে কিছু বলতে গেলে সে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। আর বলে— অনেক সহ্য করেছি।

আমার জীবন নিয়ে কিছু বলবার কারো অধিকার নেই। এখন থেকে আমি নিজের মতো চলব। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে তোমার মতো অযোগ্য একজনকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছি। কিন্তু আমার কোনো গুরম্নত্বই তুমি দাওনি। তাই তোমার মতো স্বামীর আমার কোনো দরকার নেই। তার চেয়ে আমার বন্ধুরা শতগুণে ভালো নেক্সট টাইমে আমার কোনো ব্যাপারে নাক গলাবে না।

এসব শুনে রানা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং ঝিমিকে মারতে থাকে। পরদিন সকালে ঝিমি তার মায়ের কাছে চলে আসে। মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “মা তুমি আমাকে মেরে ফেলো। তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি একটা অমানুষের কাছে গিয়েছিলাম। আমি ফিরে এসেছি। আর কখনও যাব না। তুমি আমায় মাফ করে দাও।”

কয়েকদিন পর ঝিমি নিজে থেকে রানাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এত অল্প বয়সে জীবনে এত কিছু ঘটে যাওয়াতে তার মনে যে একটা স্থির ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা ঘুচবে কি দিয়ে। দুইবার গর্ভপাতের কষ্টও ভুলতে পারছে না। এদিকে বিধবা মায়ের ওপর বোঝা হয়ে থাকা, সব মিলিয়ে আস্তে আস্তে সে মানসিক ডিজ অর্ডারের দিকে যেতে থাকে এবং এক সময় বদ্ধ পাগল হয়ে যায়।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত