প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:০২
সমাজ, সংসার, অসম প্রেম এবং একটি অনুরোধের প্রেমপত্র
তোমার দাবি তোমাকে একটা চিঠি লিখতেই হবে। আমি প্রতিদিন কত হাবিজাবি লিখি; কবিতা, গান, নীতিকথা থেকে সমকালীন চিন্তা; ফেসবুকে আমার দেয়াল ভর্তি সে সব লেখায়। আর ভাবি যে কোন সময় তোমার জন্য একটা কিডনি বা কলিজার একটা অংশ দিয়ে দেয়া যায়; সে হিসেবে তোমার চাওয়া একটা চিঠিতো খুবই মামুলী। এই চিঠিটা লেখার দরকার ছিল অনেক আগেই; কিন্তু লিখতে গিয়ে আমি বারে বারেই থেমে গেছি। এখনো এটা নিয়ে আমি অনেকটাই বিভ্রান্ত আর দ্বিধাগ্রস্ত! তুমি আমার মনের ভেতরের এমন কেউ, যাকে আমার দুর্বল লেখার ভাষা দিয়ে সুবিচার করতে পারব কিনা- সেটাও অনেক ভাবনার বিষয়। আরেকটা অসুবিধা আছে, তুমি বিবাহিত; পরিচয় জানাজানি হলে এই তথাকথিত সমাজে কেলেঙ্কারির চূড়ান্ত হতে কতক্ষণ? এই কোটি মানুষের ঢাকা শহরে টেলিভিশন আর টকশোর দৌড়াত্তে আমাকেও কম লোক তো চেনে না?
আমার চোখে শুধু না, অনেকের চোখেই তুমি অসম্ভব সুন্দরী আর দুধে আলতা গায়ের রং কন্যা। সেই তোমাকে নাকি কেউ কোনদিন চিঠি লেখেনি, কথাটা শুনে অনেক অবাক হয়েছি।সেবার ভ্যালেন্টাইন ডেতে বউ’র জন্য ফুল কিনছিলাম। রাস্তায় হঠাত দেখা আর তোমাকে একটি ফুল দেয়া। আমার দেয়া সেই ফুল নাকি তোমার জীবনের প্রথম; আগে তোমাকে কেউ কখনো একটি ফুলও দেয়নি- শুনে আমার সত্যি ভীষণ অবিশ্বাস আর অবাক লেগেছে, সাথে সাথে নিজেকে ভাগ্যবানও! মনে হয়েছে জগতের কত ফুল অনাঘ্রাতা রয়ে যায়, কে তার খোঁজ রাখে?
মাঝেমাঝেই শুনি পৃথিবীর কিছু যায়গা না দেখে মরা উচিত না। এগুলো না দেখলে পৃথিবীতে জন্ম নেয়া অপূর্ণ থেকে যায়। সেরকম একটা যায়গা সারংকোট; পোখারা নেপালের অন্নপূর্ণা রেঞ্জে সূর্যোদয়। সেখানেই আমার তোমাকে প্রথম চোখ খুলে দেখা। সেদিন কিন্তু একবারের জন্যও মনে হয়নি সেই তুমি কখনো আমার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা হবে, আমার কবিতার ছন্দ হবে। কি অদ্ভুত; জীবনের দেনা আর বেদনাগুলো আমাদের এক করেছে; তোমাকে আমার চোখে অপূর্ব করেছে! যদি তোমার সম্পর্কে আমার কিছু বলতেই হয় তাহলে বলব তোমার আগে আমাকে কেউই ভালবাসেনি। তাই যদি চারপাশে এতো প্রতিকূলতা নিয়েও তোমার প্রতি অবসেসড হয়ে যাই, আমার আর দোষ কী?- এটা একটা দুর্ঘটনা, সেও নিয়তির একটা খেলাই!
আমি জানি, আমাদের দেখা অধিকাংশ স্বপ্নই অধরা থেকে যাবে। আমার হাত ধরে তোমার চাঁদের পাহাড় দেখার ইচ্ছাও শুধু কল্পনাতেই থেকে যাবে। তোমার নিজস্ব পুরুষ ঘৃণা করবে তোমার তৈলাক্ত চুল, কথায় কথায় চরিত্র নিয়ে খোঁটা দেবে; তবুও সেই আমৃত্যু তোমার শ্যাম্পু করা সিল্কি চুল ছোঁয়ার অধিকার রাখবে। তুমি এই পৃথিবীতে তার জন্য রজনীগন্ধা, গোলাপ, বেলী হয়ে ফুটে যাও; আমার জন্য না হয় জংলী ভাঁট ফুল। আমাদের জীবন চলবে তথৈবচ, পদে পদে হয়রানি, নির্ঘুম রাত আর দীর্ঘশ্বাসে; তোমার ‘Will you marry me’ কথাটা চিরদিন কথার কথাই থেকে যাবে। আমাদের তবুও থাকতে হবে হাসি হাসি মুখ করে, অভিশপ্ত সমাজ আর লৌকিকতায় সুখের অভিনয়েই কেটে যাবে সারাটা জীবন।
আমি জানি তোমাকে চিরদিনের জন্য কাছে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। তোমার সন্তান, পরিবার, সমাজ আর পারিপার্শ্বিকতা তোমাকে বেঁধে রেখেছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিশ্ছিদ্র কারাগারের ভেতর। তারপরও তোমার ভালবাসার সৌরভ সেই কারাগারের দেয়াল ভেদ করে আসে অহরহ। আসলে পৃথিবীর কোন কারাগারের সাধ্য কি ভালোবাসার শক্তিকে আটকে রাখে? সেজন্যই হয়তোবা আমি হতাশ হই না, ক্লান্ত হই না; জীবন থেকে বিতৃষ্ণও না। আমি নিশ্চিত জানি পৃথিবীতে কোন শক্তি যদি তোমাকে এই কঠিন কারাগার ভেঙে বের করতে পারে সে আমার ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই না।
তবুও মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাসগুলো আছড়ে পরে তোমার স্বপ্ন নদীর কূলে। মনে হয়, কি লাভ একটা নদীর মালিক হয়ে, যখন তার স্রোতই অবাধ্য হয়ে কূল ভেঙে দেয়।এই ভ্যালেন্টাইন ডে’তেও তোমার সাথে দেখা হবে না মনে হয়। তবুও তোমাকে বলি-
তোমার সাথে দেখা হলে মন্দ হয় না,
নীলশাড়ী, নীলটিপ,
হাতজুড়ে রেশমি কাঁচের চুড়ি!
ভুলেও কিন্তু গহনা পড়ো না ভারি;
তাহলে? আমি বেমানান হবো-
নিয়ে নিতেও পারি, দেমাগী আড়ি!!দেখা হচ্ছে না বলে-
ভুলেও ভেবো না, ভুলে গেছি;
বরং উল্টোই হয়েছে, জানো?
তোমার চেহারা ভুলতেই ভুলে গেছি!
সেজন্যেই-
দেখা হওয়াটা জরুরি, সত্যিই!!
এই কবিতাটি লিখেছি তোমাকে মনে করেই। দেখা হওয়াটা সত্যিই জরুরি। আজকের মতো শেষ করি; ভালো থেকো আমার ভালবাসা। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন! ইতি তোমারই- মোটু
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্পোরেট পরিচিত মুখ, এই চিঠিটি লিখেছেন তার প্রেমিকাকে। এখানে স্থান, কাল, পাত্র-পাত্রী, ঘটনা চরিত্র সবই বাস্তব, কোথাও কাল্পনিক কিছু নেই!)
বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ