সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের তিনটি কবিতা
শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:৩২ আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:০৮
।। এক টুকরো টাটকা টকটকে ।।
তখন হ্যান্ড কম্পোজ,
তখন লেটার প্রেসে কাঠের ব্লকে ছাপা হতো প্রচ্ছদ।*
তখন ভাতের পর আয়েশ করে পান চিবানোর সময়,
মুদ্রণশিল্পে তখনও আসেনি ধ্রুব এষ।*
ভুলে যাওয়া বই,
মন কাড়া এবং নাড়া নেয়া একটি কভার।
জমিন জুড়ে মাটি রঙের মাঠ, সবুজ মাঠ
নাম, শিরোনাম নদীর মতো
নৈঋতে ছিলো এক টুকরো টাটকা টকটকে!*
আপনি একবার ‘তুমি’তে এসেছিলেন।
তা ছিলো- সেই প্রিয় প্রচ্ছদের নান্দনিক লাল!
।। আরবি কবিতা এবং কন্টাক্ট লেন্স ।।
মামা আব্দুস সাত্তার আরবি কবিতা অনুবাদ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তেন। নিদ্রাভ্রমণে চলে যেতেন প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায়। প্রতিদিনই একটি মাত্র স্বপ্ন দেখতেন; খুব ঝাপসা-ঝাপসা দেখতেন একটি মিশরীয় নারী। তাকে কাছে এবং স্পষ্ট দেখার জন্য মামা আব্দুস সাত্তার একবার চশমা পরে ঘুমালেন। কারণ, চশমা ছোট জিনিসকে দেখার দূরত্ব কমিয়ে দৃষ্টিসীমায় নিয়ে আসে।
মামা আব্দুস সাত্তারকে বাংলা অনুবাদে অভিবাসী সেই মিশরীয় নারী এখন বেসরকারি বাংলা কলেজের অনুবাদের অধ্যাপিকা। তিনি জিওর্দানো দা পিসা’র আবিস্কৃত চোখের রক্ষাকবচ অর্থাত চশমার চেয়ে সানগ্লাসের দৃষ্টি এবং দৃষ্টভঙ্গি নিয়ে আগ্রহী।
মামা আব্দুস সাত্তার জানেন না যে, মিশরীয় অধ্যাপিকার চোখে কোনো রঙ্গিন চশমা নেই। তার চোখে এখন কন্টাক্ট লেন্স!
।। জীবনের অংশ ।।
যিনি প্যারিসে আমাদের ছবি তুলে দিয়েছিলেন, তাকে মনে রাখিনি।
দাউদকান্দিতে যার কাছ থেকে গামছা কিনে ছিলাম,
চশমা নিয়ে ছিলাম এলিফেন্ট রোড থেকে,
যে রিকশাওয়ালা নামিয়ে দিয়েছিলেন শাহবাগে; কাউকেই না!*
স্টকহোমের নীলবারে স্কটিস মেয়েটি কচকচ করে ঢেলে দিয়েছিলো স্কচ-
নান্দিনা ফেরিঘাটে যে ছেলেটি চমৎকার চা দিয়েছিলো,
যে পাঠক আটোগ্রাফ নিয়েছিলো; তাকেও না,
কুড়ি বছর আগের ভাড়াটেও না।।*
চানাচুরওয়ালা, ফেরিওয়ালা, ফল বিক্রেতারা
...ডাকতে ডাকতে চলে যান দৃশ্যের আড়ালে
যারা দুর্যোগে ত্রাণ দেন; চুল ছেঁটে দেন; রান্নাঘর ঝাঁড়ু দেন,
যারা স্বপ্নের সিঁড়ি দেন; তাদের কথাও মনে থাকেনা।* অথচ ছবি, গামছা, চশমা, চা, ত্রাণ, পাঠক আমাদের জীবনের অংশ!
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে/আর