রওশন হাসান এর তিনটি কবিতা
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২২, ০১:৩৮
।। কোথাও কেউ জেগে আছে।।
প্রতিমুহূর্তে কোথাও না কোথাও কোনোনা কোনো শঙ্কা তৈরি হচ্ছে
সন্ধ্যা জড় হয়ে নামছে রাত্রি সকাল সন্নিহিত দিনে
এভাবেই সুখ,ক্রন্দন, শোক, আহাজারি, ইনসোমনিয়ার ক্রমাগত আবর্তন
এই আপতিত ধ্বনি প্রতিধ্বনিগুলো সংজ্ঞাহীন দখল করে আছে চেতন-অবচেতনায়
জেগে আছে চাঁদ, প্রতিহত জল, আহত পাখি অরণ্যের ক্রোড়ে
আঁধারের পাঁজরে অন্ধ বৃক্ষবোধি, সমাগত মেঘ, উদ্বিগ্ন চোখ, বৃত্ত ক্যামোফ্লেজ
গৃহহীন, অনাহারী যকৃৎ, জঠরশিশু, বিদগ্ধ আত্মা জেগে আছে
জেগে আছে যুদ্ধ, রক্ত, প্রতিশোধ, প্রতিশ্রুতি, প্রতারণায় দুরত্ব ভালোবাসা
কালো হাত, অত্যাচারী, নিপীড়িত জেগে আছে
জেগে আছে পুরুষতন্ত্র জেগে আছে পরাজিত নারী
উত্তাল ঢেউ, অনাহুত বৃষ্টি, চারণভূমি, পুষ্পপরাগ
জেগে আছে বিক্ষুব্ধতা, অপারগতা, ব্যাধি, অমা
জেগে আছে সৌধ, শহীদমিনার, মানচিত্র
একাকীত্বে কোথাও জেগে আছে অসীমের পানে আপোষহীন ধ্যানী বিক্ষিপ্ত এক ব্রতচারী।।। অব্যক্ত প্রার্থনা।।
ভাবনাগুলো আমার মনকে বিক্ষিপ্ত করে রাখে
দিন-রাতের ক্রমাগত আবর্তনে
আমরা কি সত্যিই নিজেকে মানুষ ভাবি ?
পরন্তু আমরা শুধুমাত্র মানুষের আদল নিয়ে চলি।আমরা দেশ, অঞ্চল, যুদ্ধ সৃষ্টি করেছি
আমাদের অস্তিত্ব, জাতীয়তা, পরিচয়, নিয়ম, ব্যবস্থা, জয়-পরাজয় গঠন করেছি
আমরা সম্প্রদায়, ধর্ম, সংস্কৃতি, বর্ণবাদ, শ্রেণি, ঘৃণা নির্মাণ করেছি
আমরা কি বুঝতে পারি না যে আমরা মানবিকতা ভুলে বিভেদ তৈরি করেছি?
মহাদেশ, ধনী, দরিদ্র, সভ্যতা, ক্ষমতা, অবস্থান
এইসব অসমতা উদযাপন করে চলেছি ?
আমরা কি চিরতরে অনৈক্য নির্মূল করতে পারি না?
বদলে শান্তি, সান্ত্বনা এবং ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত করতে কি পারি?আমরা বিভক্তির গন্ডিতে বসবাস করছি
সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
আত্মার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
জীবনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ
মানবিক ও অতিমানবিক হতে অব্যক্ত প্রার্থনা আমার
ওহ সৃষ্টিকর্তা ! মানবতার বিজয় রক্ষা করুন।।। অক্সিজেন।।
শুনতে পাচ্ছি, দূর থেকে ভেসে আসা
অস্পষ্ট থৈ শব্দ, সবুজ শেকড় টান
দৃশ্য হতে অপর দৃশ্য, দৃশ্যকাব্যের দৃশ্যলোক
কাকে তুমি জাগ্রত করো, কাকে মুমূর্ষুমান ?
আলোর প্লাবন, আঁধার-গন্তব্যের অন্তর্গত আমি, আমাদের ভ্রমণপথ আগলে দাঁড়িয়ে একটি প্রফুল্ল আদ্র দিন, অপার মহিমায়
এভিনিউ থেকে স্ট্রিট পল্লবহীন ভ্রুভঙ্গির বৃক্ষসারি
নিশ্চিত জেনেছি সময় নিমগ্ন স্বাগতিক বারতার দিকে
মৃত্যু, বিভীষিকা, ব্যাধির স্রোত পশ্চাতে ফেলে
সমুখের জল ব'য়ে যায় নৈসর্গ চক্রে
ভেতরে মগ্নলোক কি ভীষণ যতিহীন !
আদিম আকাশের উদাসীনতা!
মানুষের মাঝে এক টুকরো অসীম মানুষ !কবিতার জন্ম, সৌগন্ধ্যে এক ভবিষ্য আহবান
বিচ্ছেদে দূরত্ব, নবশিশুর জন্মে সংশ্লেষ
স্কন্ধে স্কন্ধে রিষ, অন্তর্দাহ অনসূয়া অমা
প্রীতি, নেহ, সম্মান, বোধের ঋজুরেখ থেমে থাকে না
স্বপ্নশিয়রে খসে পড়া শুকনো বীজ মাটির পৃথিবীর
রোদ-বৃষ্টি-মেঘে কালের তরবারি
রোমে রোমে জমে থাকা অরুণ শতাব্দী
আবারও গর্ভবতী হবে সূর্য, চাঁদ, সুনীল ঢেউ
প্রজাপতির অভিধানে একতার শপথ নেবে বিভেদী মানুষেরা
সকল ধ্বনিতে জীবনাচার পাবে দুয়ারী আস্বাদ
পাখির পালকে গীতস্নানে জানাই অভিবাদন
মৌসুমের পুষ্পে ফুটুক ওষ্ঠের বসন্ত, ব্যপ্ত বৈশাখ, ঘ্রাণের কোলাহল
ভালোবাসা অক্সিজেন
হে নতুন বর্ষ, মার্কিনী আকাশে অরোরা উঁকির নৈবেদ্য সহচর !বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ