ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

তিতুমীরে থাকা জেকেজির কর্মীরাও করোনার ভুয়া রিপোর্ট দিত?

  হৃদয় আলম

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২০, ১৪:১৬  
আপডেট :
 ২৬ জুন ২০২০, ১৬:১৭

তিতুমীরে থাকা জেকেজির কর্মীরাও করোনার ভুয়া রিপোর্ট দিত?
ফাইল ছবি

জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের পর পরেই তিতুমীর কলেজ থেকে পালিয়েছে তাদের কর্মীরা। তারাও অবৈধ ভুয়া রিপোর্ট দিতো বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে, এখনও বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানা নেই উল্লেখ করা হলেও জোর তদন্ত চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে অন্তত ৩৭ জনকে ভুয়া ফল দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে জেকেজির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল চৌধুরীসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। সে বিষয়টি তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ খান নিশ্চিত করেন।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানের ল্যাপটপে করোনাভাইরাস পরীক্ষার বিপুল পরিমাণ সার্টিফিকেটের কপি পাওয়া গেছে, যেগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইইডিসিআরের মতো প্রতিষ্ঠানের প্যাডে করা। এগুলো ভুয়া।’

এদিকে বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কলেজটিতে মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই, ব্যবহৃত জামা-কাপড়সহ করোনা পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপকরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু জেকেজির কোনো কর্মী সেখানে নেই। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের তারা কিছু জানায়নি।

তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ২৩ জুন তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেছে। আমি এ বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়কেও জানিয়েছি। এছাড়াও আমাদের সচিব মহোদয় এবং ডিজি মহোদয়কে জানিয়েছি। এর আগে এই মাসের শুরুর দিকে যখন আমার কলেজ কর্মচারীদের উপরে হামলা করে তখনও আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও জানিয়েছিলাম। তারা রাতের আধারেই আমার এখানে আমাদের কর্মচারিদের উপরে হামলা করে। যেখানে তাদের মালিক আরিফুল চৌধুরী ছিলেন। চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীও সেদিন কলেজ ক্যাম্পাসে ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে সেবা দিতে আসলেও মাঝে মাঝেই নাঁচ-গানের আসর জমাতো জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মীরা। উচ্চশব্দে বাজতো সাউন্ড বক্স। স্থানীয়রা এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও কোনো লাভ হয়নি।

তিনি বলেন, দেশের স্বার্থেই তাদের আসলে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখানে প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই সাউন্ড সিস্টেমসহ গান বাজনার আসর বসতো। এ বিষয়ে এখানকার স্থানীয়রাও অভিযোগ দিয়েছিল রোজার মাসে ও পরবর্তী সময়েও। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলতো এমন। যেদিন হামলা করে তার পর দিন এখান থেকে তারা সাউন্ড সিস্টেম সরিয়ে নিয়ে যায়। হয়তোবা তদন্ত হবে ভেবেই এমনটা করে তারা। তারা যদি সৎ হতো তবে তাদের উচিত হতো অন্তত ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে আমাকে বা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানানো। আমাকে জানায় নাই। আমি তাই আজ সকালে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি।

তিতুমীর কলেজের কর্মচারী মো. মুসা বলেন, তাদের মালিক আর কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের খবর শুনে তারা মঙ্গলবার রাতেই এখান থেকে পালিয়ে যায়। আমরা সকালে এসে দেখি এদিকে আর কেউ নাই। আমাদের এইদিকে আসা নিষেধ কিন্তু কাউকে না দেখে এদিকে আসি। এসে দেখি রুমগুলোর মধ্যে কিছু কাপড়-চোপড় ছাড়া আর কিছু নেই।

তিনি বলেন, শুনছি তারা কোথাও কোনো জায়গা পাচ্ছিল না প্রশিক্ষণের জন্য। পরে আমাদের এখানে আসে। দেশের উপকারের কথা বিবেচনা করে তাদের এখানে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। পরে তারা আমাদের উপরেই হামলা করে এই মাসের শুরুর দিকে। তাদের চেয়ারম্যান, মালিক সবাই ছিল সেদিন রাতে। গত শুক্রবারও দেখা যায় তারা তিনটা খাসি জবাই করে এখানে পার্টি করে। এখনো সেখানে লাকড়ি পড়ে আছে। ময়লা পড়ে আছে। প্রশিক্ষণ নিতে আমরা কখনো কাউকে দেখিনি। অথচ কাল যখন তাদের কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হয় তখন এরা রাতেই পালিয়ে যায়।

বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, জেকেজির কর্মীরা পালিয়ে গিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। তবে, তারা ভুয়া রিপোর্ট দিতো কিনা সে বিষয়টি আমাদের জানা নেই।

গত ২ জুন (মঙ্গলবার) রাতে তিতুমীর কলেজের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সাথে জেকেজি হেলথ কেয়ারের স্বাস্থ্যকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত তিতুমীরের কর্মচারীরা। ফাইল ছবি

এর আগে তেজগাঁও থানা পুলিশের একটি দল সোমবার রাতে আশকোনা থেকে হুমায়ুন কবীর ও তানজিনা পাটোয়ারী নামের এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে করোনাভাইরাসের বেশ কিছু ভুয়া সার্টিফিকেটও পাওয়া যায়। তারা নিজেরাই এসব সার্টিফিকেট তৈরি করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তারা জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মী ছিল। সেখান থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট বানানো শিখেছে।

এরপর মঙ্গলবার ওই অফিস থেকে চারটি ল্যাপটপ, দুটি ডেক্সটপ, করেনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা নেয়ার বিপুল সংখ্যক স্টিকও জব্দ করে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেকেজি হেলথকেয়ার করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ শুরুর পর মহাখালীর তিতুমীর কলেজে তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের রাখার সুযোগ পেয়েছিল।

সম্প্রতি ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তিতুমীরের কর্মচারীদের মারামারি বাঁধলে কলেজটির অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন বলেছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি পেয়ে তারা কলেজের নির্মাণাধীন নতুন ভবন ছাড়াও অডিটোরিয়াম এবং আরেকটি ভবন জেকেজি হেলথকেয়ারের কর্মীদের থাকতে দিয়েছেন।

সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদ বলেন, তারা (জেকেজি) নামমাত্র নমুনা সংগ্রহ করে কোথাও কোনো টেস্ট না করিয়ে নিজেরাই নেগেটিভ-পজেটিভ প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। এজন্য প্রবাসীদের জন্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা এবং অন্যদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে থাকে।

আটক জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল চৌধুরী

বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে এখন করোনাভাইরাস ‘নেগেটিভ’ সনদ থাকা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। এছাড়া অন্য রোগীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সনদ চাইছে।

এদিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদের জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মীরা সন্ধ্যায় তেজগাঁও থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সহকারী কমিশনার মাহমুদ বলেন, আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। কোনো জমায়েত করতে দিইনি।

জেকেজি হেলথ কেয়ারের অন্যতম কর্ণধার হিসেবে আরিফুল চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা খাতুনের নাম এলেও তিনি দাবি করছেন, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত দুই মাস ধরে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন আমাকে জড়িত করা হবে কেনো? আমি তো অনেকদিন ধরেই এর সাথে নেই।

তিতুমীরে থাকা জেকেজির স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

তিতুমীর কলেজের হামলার সময় তিনি সেখানে ছিলেন কিন্তু দুইমাস ধরে নেই কেন দাবি করছেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, তিতুমীরের ঘটনার পর থেকে আমি আর এর সঙ্গে নেই। আমার স্বামীর এর অন্যতম কর্ণধর হলে আমি এর সাথে নেই। আমি যে এর সাথে নেই সেটা সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানেন। আমি অনেককে এটা জানিয়ে রেখেছি। আমি দুইমাস ধরে আমার বাবার বাসায় অবস্থান করছি। আমি আসলে দুইমাস ধরেই নাই। কিন্তু তিতুমীরে যখন ঘটনাটা ঘটে আমি সেখানে যাই। কারণ এই স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে আমি ট্রেনিং দিয়েছিলাম। তাই তাদের সাথে একটা ঘটনা শুনতে পেরে আমি ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু তখনও আমি আমার বাবার বাসায় ছিলাম।

জাল সনদের বিষয়ে কিছু জানেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আসলে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে সেবা দিতাম। স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ শেখানো বা পড়া বা প্লানিং করে যে, কী করবো- স্যারদের সাথে আলোচনা করা কীভাবে কী করবো- এগুলো আমি করতাম। ওদের ম্যানেজমেন্টের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কাগজ কলমে আমি কোথাও নেই। কোনো মালিকানাতেও আমি নেই। কিছুতেই আমি নেই। আমি এমনি খাটতাম। কিন্তু এটা দুঃখজনক। আমার মনে হয় না কেউ এতো খারাপ কাজ করতে পারেন।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ৩ জুন (বুধবার) নিজেকে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের আহ্বায়ক দাবি করে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেছিলেন, তিতুমীর কলেজে আমরা একটা ক্যাম্প চালিয়ে আসছি এবং ট্রেনিং সেন্টার গত দুইমাস ধরে। কোভিড-১৯ রোগীদের যারা স্যাম্পল সংগ্রহ করে আমরা তাদের ট্রেনিং দিয়ে থাকি। এখানে আমাদের প্রায় ১৭৫ জনের মতো স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করেন। সেচ্ছাসেবীরা। এখন এখানকার যারা বসবাস করেন (তিতুমীরের) ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তা তারা সব সময়ই একটু ঝামেলা করতো। তারা চাইতো না যে, এখানে ক্যাম্প থাকুক। কারণ তাদের আক্রান্ত হওয়ার ভয় ছিলো। তাই তারা নানাভাবে মেয়েদেরকে ইভটিজিং করতো। তারপর নামাজ পড়তে যেতে দিতো না, মাঝে মাঝে পানির লাইন বন্ধ করে দিতো। এরকম সমস্যা চালিয়ে আসছিলো, আমরা অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলেছি। উনি বলতেন যে, ব্যাপারটা দেখি। গতকালকে (মঙ্গলবার) ওরা আমাদের মেয়েদের ওপর হামলা করে। মেয়েদের সাথে অশোভন আচারণ করে। দশ জনের মোবাইল নিয়ে গেছে। ছেলেদেরকে রড দিয়ে মেরেছে।

এছাড়া একজনের হাতও ভেঙে গেছে এ ঘটনায়। আমাদের পক্ষের বেশিরভাগই মেয়ে। তারা মারধর করতে পারে না। ছেলে কর্মীও যারা আছে তারা মারামারি করার মতো না।

রিমান্ডে জেকেজি’র সিইও আরিফসহ ৫

বুধবার রাতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ খান বলেন, জেকেজি) হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল ইসলামসহ পাঁচকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

জেকেজিকে বাদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

বুধবার (২৪ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ, কেন্দ্র স্থাপন ও প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেকেজি হেলথ কেয়ারের অনুমোদন বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়।

এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষার জন্য অনুমতি পায় জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা (জেকেজি) হেলথ কেয়ার।

সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা

তিতুমীর কলেজের কর্মীদের ওপর জোবাদা খাতুন হেলথ কেয়ারের কর্মীরা হামলা চালানোর পর সে ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে গত ২ জুন দুই সংবাদকর্মীর ওপর হামলা চালায় জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের স্বাস্থ্যকর্মীরা। আহত সংবাদকর্মীরা সে সময় বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, প্রথমে আমরা তিতুমীর কলেজ কর্মচারীদের কাছে বিস্তারিত জেনে অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেনে সাথে কথা বলে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে কথা বলতে যাই। এসময় তারা বরকত মিলনায়তে থাকেন শুনে আমরা ডাকাডাকি করে কারো সাড়া-শব্দ না পেয়ে ভেতরে ঢুকি। এসময় হঠাৎই প্রায় ৫০ জনের মতো লোক এসে আমাদের ধাক্কা এবং কিল ঘুষি দিতে থাকে। তাদেরকে সংবাদকর্মী পরিচয় দিলেও তারা বলেন, তোরা কিসের সংবাদিক, তোদের আসতে বলছে কে, দেইখা নিমু। সবাইকে পিটামু।

সে সময় এ বিষয়ে সাবরিনা আরিফ বলেছিন, তারা (সংবাদকর্মীরা) আমাদের জানিয়ে যাননি। তাই তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি সংবাদ সংগ্রহ করতে যান তাহলে আমাদের জানিয়ে যাবে। হঠাৎ করেই যাবে না। আমাকে বলে যদি কেউ দশবারও আসে তাতে সমস্যা নেই।

ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ

রাজধানী মিরপুরের এক ভুক্তোভোগী নাম প্রকাশ না করা শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। তার বৃদ্ধ মায়ের পর সহধর্মিনীরও জ্বর আসে। একইসঙ্গে ঘ্রাণশক্তি লোপ পায়। নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের আশঙ্কায় তিনি নমুনা পরীক্ষা করাতে চান। বৃদ্ধ মা’কে নিয়ে বুথে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করানোর বিষয়ে খোঁজখবর করেন। জানতে পারেন, জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা (জেকেজি হেলথকেয়ার) নামের একটি সংগঠন সরকারের অনুমতি নিয়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।

পারভেজ যোগাযোগ করে জেকেজি হেলথকেয়ারের সঙ্গে। গত ৭ জুন তাদের পক্ষ থেকে পারভেজের বাসায় নমুনা সংগ্রহের জন্য লোক যায়। দু’জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১০ হাজার টাকা বিল নেন তারা। তবে এর জন্য কোনো রশিদ দেননি। তারা জানান, তাদের ওয়েবসাইটে তিন দিনের মধ্যে ফল দেয়া হবে। এসএমএস দিয়েও সিরিয়াল নম্বর ও কিট নম্বর জানিয়ে ফল জানার জন্য ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেয়া হয় সেই এসএমএসে। তবে তিন দিন নয়, পরীক্ষার ফল পাওয়া যায় ১৫ জুন। তারা দু’জনই পজিটিভ আসেন। তবে ফল পাওয়ার আগেই পারভেজ আহমেদের মা প্রায় সুস্থ, স্ত্রীও সুস্থও হয়ে উঠছেন।

পারভেজ আহমেদ বলেন, জেকেজি তো সরকারের অনুমতি নিয়ে বুথে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে থাকে। কিন্তু তাও যখন তারা বাসায় এসে নমুনা নেবেন বলে জানায়, কিছুটা অবাক হয়েছি। ভেবেছিলাম বিনামূল্যেই পরীক্ষা হবে। পরে টাকা চাইলেও পরীক্ষা করানো দরকার বলে সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করিনি।

কেবল পারভেজ নয়, এমন আরও কয়েকজন একই ধরনের অভিযোগ করেন। কেউ কেউ জানান, পরীক্ষার ফল জানার জন্যও তাদের কাছ থেকে বিকাশে ৫০০ টাকা করে চাওয়া হয়েছে।

বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে জেকেজি ৪৪ বুথ

আইইডিসিআরের অনুমতি সাপেক্ষে জেকেজি বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করত জেকেজি। শর্ত ছিল, সরকার–নির্ধারিত করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে। জেকেজি হেলথকেয়ার, ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন।

তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিনামূল্যে কার্যক্রম শুরু করলেও একপর্যায়ে জেকেজি অর্থের সংকুলান করতে পারছিল না। তখন তারা বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম চালু করে। এ দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে তারা।

মাহমুদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হুমায়ুন ও তানজীনা বলেছেন, সংগ্রহীত নমুনা তারা ফেলে দিতেন। এরপর নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী আইইডিসিআরের প্যাডে ফল লিখে তা মেইল করে পাঠিয়ে দিতেন।

আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তারা ৩৭ জনের করোনা নমুনা সংগ্রহ করে মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছেন। বাসায় গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করতে জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা তারা নিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জে কার্যক্রম বন্ধ

করোনার রিপোর্ট জালিয়াতি ও সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগে শীর্ষ কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে জেকেজি হেলথ কেয়ারের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মো. ইমতিয়াজ স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে জেকেজির সকল কার্যক্রম স্থগিত করে বন্ধের নির্দেশ দেন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জেকেজি হেলথ কেয়ার নামক প্রতিষ্ঠানটি নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ও এম ডব্লিউ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে নমুনা সংগ্রহের কাজ পরিচালনা করছেন। আপনাদের নমুনা সংগ্রহের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মতামত চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোন প্রকার সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তাই পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জেকেজি হেলথ কেয়ারের সন্দেহজনক করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করা হল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত