ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

গোল্ডেন মনিরের এতো সম্পদ!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১০ মে ২০২১, ২১:৪১

গোল্ডেন মনিরের এতো সম্পদ!
গ্রেপ্তার গোল্ডেন মনির। ফাইল ফটো

সোনা চোরাচালানের অর্থ রাজউকের কাজে লাগিয়ে অবৈধ সম্পদ বাড়িয়েছে গোল্ডেন মনির। ঢাকায় ২০টি সরকারিসহ ২৩ প্লট, সাত ভবন ও ব্যাংকে গোল্ডেন মনিরের রয়েছে ৭৯১ কোটি টাকা। এ সব কিছুই তিনি করেছেন সরকারি কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আতাঁত করে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সিআইডির পরিদর্শক মো. ইব্রাহিম হোসেন গত জানুয়ারি থেকে পাঁচ মাস এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছেন। সিআইডি বলছে, মনিরের সব সম্পদই অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত।

গত বছরের ২০ নভেম্বর গোল্ডেন মনিরের বাড্ডার বাড়িতে রাতভর অভিযানের পর সকালে সংবাদ সম্মেলন করে তাকে গ্রেপ্তারের খবর জানায় র‌্যাব। র‌্যাবের অভিযানে ওই বাড়ি থেকে নগদ এক কোটি ৯ লাখ টাকা, ৯ লাখ টাকার বিদেশি মুদ্রা, আট কেজি স্বর্ণ, একটি বিদেশি পিস্তল, কয়েক রাউন্ড গুলি ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়।

সিআইডির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, প্লট বাগানো শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। রাজউকের বাড্ডা প্রকল্প থেকেই সে শতাধিক প্লট বাগিয়ে নেয়। যারা ওই প্রকল্পের জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিক হিসেবে প্লট পাওয়ার কথা সেই প্লটগুলো নানা কৌশলে বাগিয়ে নেয় গোল্ডেন মনির।

এই কাজে রাজউকের একটি চক্রের পাশাপাশি তাকে সহযোগিতা করে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ, মন্ত্রী, এবং একজন প্রভাবশালী ওয়ার্ড কাউন্সিলর। পরে তিনি রাজউকের আরো কয়েকটি প্রকল্পে বরাদ্দপ্রাপ্তদের ফাইল গায়েব করে আরো ২০টির মত প্লট নেন।

এছাড়াও গোল্ডেন মনির ছেলে রাফি হোসেনের নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান ও দুটি গাড়ির শোরুম দিয়েছে। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে তিনি আরো এক একর জমির মালিক। বাড্ডার ডিআইটি প্রকল্পে আড়াই কাঠা করে পাঁচটি প্লটে পাঁচটি ভবন নির্মাণ করে গোল্ডেন মনিরের স্ত্রী রওশন আরা তা ভোগদখল করছেন।

মনির হোসেনের দুই বোন ও দুই ভগ্নিপতি রাজউকের প্লটগুলো দেখাশোনা ও ভোগদখল করে আসছিলেন।

গোল্ডেন মনির ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অপরাধলব্ধ আয়ে করা অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদের তথ্য–প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। মনিরের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, গোল্ডেন মনিরের প্রধান সহযোগী সিরাজগঞ্জের জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ মনিরের স্ত্রী, ছেলে, দুই বোন ও ভগ্নিপতিকে আসামি করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হবে।

তবে এর আগে ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মনিরের বিরুদ্ধে এক কোটি ৬১ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করেছিল। সে সময় দুদক বলেছিলো, সেই মামলার তদন্ত এখনো চলছে৷ তাদের অনুসন্ধানে মনির ও তার স্ত্রীর তিন কোটি ৮৪ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, অপরাধলব্ধ আয় দিয়ে গোল্ডেন মনির উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডে গ্র্যান্ড জমজম টাওয়ার এবং উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সাফা টাওয়ারের মালিক হন।

সিআইডি আরো বলেছে, গোল্ডেন মনিরের নামে ১২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭৯১ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৩ টাকা পাওয়া গেছে। তিনি এই আয়ের একটি অংশ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের পরস্পর যোগসাজশে যৌথ ও একক নামে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে রূপান্তর করেছেন। তার মালিকানাধীন অটো কার সিলেকশন লিমিটেডের হিসাব থেকে রাজউক কর্মচারী বহুমুখী কল্যাণ সমিতির হিসাবে পাঁচ কোটি টাকা পাঠানোর তথ্য পাওয়া গেছে, যা সন্দেহজনক।

সিআইডি জানায়, ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোল্ডেন মনিরের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সহযোগী। ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলর ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পার্কিং ইজারা নিয়ে মনির হোসেনের সোনা চোরাচালানে সহযোগিতা করেছেন। সোনা চোরাচালানে অবৈধ আয় দিয়েই গোল্ডেন মনির ও তার সহযোগীরা উত্তরায় ১৪ তলা জমজম টাওয়ার নির্মাণ করেছেন, যার একাংশের মালিক ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলর। মাদক ও চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তার নামে রাজধানীর উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানায় তিনটি মামলা রয়েছে।

সোনার দোকানের সেলস্যম্যান থেকে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ে মনির। ২০০১ সাল পর্যন্ত সোনা চোরাচালানই ছিল তার মূল কাজ। তখনই তার নাম হয় গোল্ডেন মনির। এরপর সে রাজউকের প্লট বাগানোর কাজ শুরু করে। সে রাজউকের একটি সিন্ডিকেটের সদস্য হয়ে যায়। তারপর তার উত্থান শুরু হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত