ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪০ মিনিট আগে
শিরোনাম

লাইকি-বিগো লাইভে শতকোটি টাকা পাচার

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২১, ১৮:৪৫

লাইকি-বিগো লাইভে শতকোটি টাকা পাচার
সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার বিদেশি এক নাগরিকসহ পাঁচজন। ছবি সংগৃহীত

লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘লাইকি ও ‘বিগো লাইভ’ এর ডিজিটাল কয়েন সদৃশ (ডায়মন্ড) বিক্রির মাধ্যমে শতকোটি টাকা পাচারের অভিযোগে বিদেশি এক নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোস্তাফা সাইফ রেজা, মো. আরিফ হোসেন, এস এম নাজমুল হক, আসমা উল হুসনা সেজুতী। তবে গ্রেপ্তারকৃত বিদেশি নাগরিকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাদের কাছ থেকে আটটি মোবাইল, পাঁচটি ল্যাপটপ, একটি প্রাইভেটকার ও ব্যাংকের চেক উদ্ধার করা হয়।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় সিআইডির উপ-​মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জামিল আহমেদ।

সিআইডি সূত্র জানায়, অনেকেই সাপোর্টার বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে ভিডিও স্ট্রিমিং করতো। এর বিনিময়ে তাদেরকে ডিজিটাল কয়েনসদৃশ ডায়মন্ড গিফট করা হতো। এই ডায়মন্ড গিফট টাকায় রূপান্তর করে বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে চক্রটি। যুব সমাজ ও বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাই ছিল তাদের মূল টার্গেট। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢুকতো সাধারণ ব্যবহারকারীরা।

ডিআইজি জামিল আহমেদ জানান, গ্রেপ্তার বিদেশি নাগরিক বিগো লাইভ ও লাইকির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাংলাদেশি নাগরিক মোস্তফা সাইফ রেজা বিগো লাইভের বাংলাদেশি এডমিন। আরিফ হোসেন বাংলাদেশে বিভিন্ন মেয়েদের মাসিক বেতনে চাকরি দিয়ে বিগো লাইভের সঙ্গে যুক্ত করতেন। এস এম নাজমুল হক ভার্চুয়াল মুদ্রা-ডায়মন্ড বিক্রির অন্যতম প্রধান বাংলাদেশি এজেন্ট এবং আসমা উল হুসনা সেজুতী বিগো লাইভের প্রধান এডমিন। এডমিনরা মাসিক এক লাখ টাকা করে বেতন পেতেন।

এসব অ্যাপসে ডিজিটাল কয়েনসদৃশ (ডায়মন্ড) বিক্রির মাধ্যমে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করছে এমন একটি অভিযোগ সিআইডির সাইবার পুলিশের নজরে আসে। এছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন অপরাধের তথ্য প্রকাশ হয়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডির সাইবার পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগো লাইভ ও লাইকিতে সাধারণত দেশের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিডিও স্ট্রিমিং করেন। বিগো লাইভে অ্যাপে দুই ধরণের আইডি রয়েছে। একটি ব্রডকাস্টার আইডি ও অন্যটি সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডি। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভিডিও লাইভ স্ট্রিম করেন। এই ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে কথিত বিনোদনের আড়ালে বিভিন্ন ধরণের অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়া হতো।

এছাড়াও সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করতো, বিনিময়ে তাদেরকে ডিজিটাল কয়েনসদৃশ ডায়মণ্ড গিফট করা হতো। পরবর্তীতে এই ডায়মন্ড টাকায় রূপান্তরের মাধ্যম অবৈধভাবে বিপুল অর্থ উপার্জন করতো। তাদের টার্গেট মূলত দেশের যুব সমাজ এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য ডায়মণ্ড নামে একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় ব্যবহারকারীদের। সাধারণত বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই ডায়মন্ড কেনা যায়। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা। যে যতবেশি ডায়মন্ড উপহার পেতেন লাইভে তিনি ততবেশি অশ্লীলতা করতেন।

সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডায়মন্ড পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন নামে এজেন্সি রয়েছে জানিয়ে জামিল আহমেদ বলেন, ডায়মন্ড সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এজেন্সি। এরকম একাধিক এজেন্ট বাংলাদেশে রয়েছে। এসব এজেন্সির প্রত্যেকের একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ প্রদান করে ডায়মন্ড কেনেন।

ডিআইজি জামিল বলেন, বাংলাদেশি লক্ষাধিক এসব অ্যাপ ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছেন। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এসব এজেন্সি বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো অনেকের নাম এসেছে এবং তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শত কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।

সিআইডির উপ-​মহাপরিদর্শক আরো বলেন, এসব অ্যাপস বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা অ্যাপসগুলো ও নিয়ন্ত্রণকারীদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। যারা অশ্লীল ভিডিও দিচ্ছেন, তাদেরকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত