ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

প্রসঙ্গ: চসিক নির্বাচন-বিএনপির অভিযোগের ফর্দ

  মোস্তফা কামাল পাশা

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৫৫

প্রসঙ্গ: চসিক নির্বাচন-বিএনপির অভিযোগের ফর্দ
ছবি: সংগৃহীত

হ্যাঁ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট কম পড়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও দাবি, এটা কোন নির্বাচন নয়। পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ধরপাকড়, প্রচুর মারধর, ইভিএম জালিয়াতিসহ বহু অভিযোগ করেছেন দলের মুখপাত্র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

নির্বাচনের দিন বিকালে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে কয়েক আহত কর্মীকেও উপস্থাপন করেন দলীয় অফিসে। তাঁর প্রচুর অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধেও। বছরের পর বছর নিত্য অভিযোগের ফর্দ পেশকারি কেন্দ্রীয় দপ্তরের আবাসিক প্রধান রিজভী সাহেবের কথা বাদ। কারণ, অভিযোগের সেফটি ট্যাঙ্কের বিশাল মজুদ হামেশা খালাস করেন তিনি। টাঙ্কিটা এতো বিশাল, শুধু জমতেই থাকে!

তুলনায় আমির খসরু ভদ্র নেতা। কিন্তু এদিন তিনি ওসব নম্রতার ধারে কাছে ছিলেন না। মুখস্থ অভিযোগ নামা শোনান টানা। তুলনায় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সংক্ষিপ্ত বৈরি অভিজ্ঞতা টানেন। নির্বাচনে ভোটার অনুপস্থিতির দায় নির্বাচন কমিশনের। তারা চট্টগ্রামে অন্তত ভোটের দিন ছুটির ব্যবস্থা করতে পারত। ইভিএম মেশিনে ভোট এখনো বেশির ভাগ ভোটারের কাছে জটিল। তাই ছুটিটা জরুরি ছিলই। আরো বেশি মানুষ সময় নিয়ে ভোট দিতে পারতেন।

কিন্তু সবচেয়ে বড় দায় খোদ বিএনপি'র। তাদের দাবি, ‘দেশের ৮৫ ভাগ মানুষ তাদের সাথে। গণতন্ত্রের আসল মা, খালেদা জিয়া’! সম্ভবত প্রাচীন গ্রীসের নগর রাষ্ট্রে তিনি গণতন্ত্র প্রসব করেছিলেন এবং সহস্রাধিক বছর এই মা জননী বেঁচেও আছেন! আরো দাবি, ‘নিরপেক্ষ ভোট হলে আওয়ামী লীগ ১০/১৫ আসনও পাবে না’!

বিদেশে পলাতক সাইবার ক্রিমিনাল চক্র আরো জোরে শোরে হুক্কাহুয়া ডাকে। গলার রস যোগাতে কড়া পানিও গিলে ঘড়া ঘড়া। অথচ দাবি, তারা ইসলাম দরদী! তাদের ইসলাম মনে হয়, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার নুরুল ইসলাম সাহেবেরা! তো, এত জনসমর্থন থাকা সত্বেও ভোটে মানুষ আনতে পারে না কেন তারা? অভিযোগ করে, ‘আওয়ামী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, মাস্তান তাদের ঘর থেকে বেরোতে দেয় না। মামলা দিয়ে, হামলা করে আটকে রাখে’।

মানলাম সব ঠিক। কিন্তু দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষকে আটকে রাখে এমন সাধ্য কার? এত ক্ষমতা পৃথিবীর সব বাহিনীরও নেই। জনস্রোতের প্লাবনে এসব ঠুনকো বাধা খড়কুটোর মত উড়ে যায়। উদাহরণ প্রচুর। তাই বিস্তারিত অনাবশ্যক। বাস্তবতা হচ্ছে, খসরু সাহেব নিজের নির্বাচনেও ভোট দেননি। মেয়র নির্বাচনেও সম্ভবত তাই করেছেন। তো, শীর্ষ নেতা প্রার্থী হয়ে ভোট না দিলে কর্মী বা সমর্থক কোন দুঃখে ভোট দেবেন! তাদের কী এমন গরজ! সর্বস্তরে বিএনপি নেতাদের হাস্যকর স্ববিরোধীতা সরকারি দল নেবেই। আওয়ামী লীগ হোক বা জাতীয় পার্টি এমন কী প্রতিপক্ষ যদি তাদের বিশ্বস্ত মিত্র জামাতও হয়, তারাও তাই করবে। আপনি হা করে বসে থাকবেন, আর কর্মীরা গালে ভাতের লোকমা ঠেসে দেবে, হয় নাকি জনাব? হয় না, সব নির্বাচনে তাই হচ্ছে। টিভি, পত্রিকার মিডিয়া রাজনীতি কী ভোটে জয় সম্ভব! কখনো না।

তাছাড়া এমন অভিযোগ করার মত নৈতিক শক্তি কি বিএনপির আছে? জিয়ার আমলে হাঁ-না ভোটের নামে কী হয়েছিল? দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা শতভাগ ‘হ্যাঁ’ ভোটে বাক্স ভরে দিয়েছে। এভাবে ‘৭৫ এর আগস্ট ট্রাজেডির পর '৯১’র আগে সব নির্বাচন হয়েছে। এখন একটু মাত্রা বদল হয়েছে মাত্র।

তো, আপনারা ঘরে বসে ৮৫% সমর্থনের স্বপ্ন দেখে যদি নির্বাচনে জিততে চান, দেখুন। মানুষতো আর ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না! আওয়ামী লীগের উন্নয়ন বা বিএনপির কর্মকীর্তির বিশাল কাহিনী ফাঁদার ইচ্ছে নেই। এসব বিচারের মালিক জনতা। জনতা যা করার তাই করছে, আপনারা নাকে কাঁদুন যত খুশি-যত ইচ্ছে!

আপনার আমার ভাগ্য শিকারের কাঁচামাল হতে মানুষ মোটেই রাজি না। এটা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। আপনারা যতবার ভোটে অংশ নেবেন, আরো বেশি বেশি হতেই থাকবে। কাজেই নাকি কান্না নয়, পারলে মাঠে নেমে প্রমাণ দিন ৮৫% মানুষ আপনাদের সাথেই আছে। আপাতত অনুরোধ, এসব বাসি ফেনা বন্ধ রেখে চট্টগ্রামকে নতুন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে কীভাবে বিশ্বমানের মহানগর হিসাবে সাজানো যায়, পারলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিন। গণমানুষের কাছাকাছি থাকলে নিশ্চিত তারা আপনাদের মূল্যায়ন করবেই। আজ না হোক কাল, অবশ্যই।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত