ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

আওয়ামী লীগে লুকিয়ে থাকা গিরগিটিদের বিতাড়িত করতে হবে

  অসিত বরণ বিশ্বাস

প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৯

আওয়ামী লীগে লুকিয়ে থাকা গিরগিটিদের বিতাড়িত করতে হবে
ফাইল ছবি

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা। তারা জামাত-বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়ে দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে অংশ নেয়। সেই আন্দোলন মোকাবিলায় অনেকটা হিমশিম খেতে হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। ঠিক সে সময়ে সুযোগ বুঝে গা ঢাকা দেয় আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা সুযোগসন্ধানীরা। এমনকি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন নিতে ভয় পেয়েছিলেন।

ওই নির্বাচনে সকল শঙ্কা কাটিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ধীরে ধীরে সুযোগ সন্ধানীরা আবারো আওয়ামী লীগকে ঘিরে ধরতে থাকে থাকে। তৈরি হয় সাহেদ পাপিয়াদের মত আগাছা। তবে দলীয় প্রধানের নির্দেশে বেশ কয়েকবার এসব আগাছা মুক্ত করতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হয়। অনেক হাইব্রিডদের দল থেকে বের করে দেয়া হয়। তারপরেও কিছু অনুপ্রবেশকারী থেকে যায়।

সম্প্রতি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতির মতই আবারো দেশব্যাপী জ্বালাও পোড়াও করেছে হেফাজতে ইসলাম। তবে ওই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া একটা বড় অংশই নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অনেকেই গর্তে লুকিয়ে পড়েন। যখনই নেত্রী সংসদে হেফাজতের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করলেন, তখন অনেকেই গর্ত থেকে বেরিয়ে দু’একটি কথা বলা শুরু করে। নেত্রী কথা বলার আগে শক্তভাবে কাওকে হেফাজতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে কারো কোন ধরণের বিবৃতিও চোখে পড়েনি। কিন্তু উচিত ছিলো হেফাজতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সাথে সাথেই রুখে দাঁড়ানো।

বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটর কমিটি গঠন করা হয়। সেসব কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের পেছনে ফেলে হাইব্রিড কিংবা অনুপ্রবেশকারীরা জায়গা করে নেন। অনেক জায়গায় দেখা গেছে দলীয় আদর্শ যিনি কখনো ধারণই করেননি তিনিও দায়িত্বশীল পদ বাগিয়ে নেন। বাতাসে ভেসে বেড়ানো কথা থেকে শোনা যায় বিভিন্ন উপঢৌকনের মাধ্যমে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় না হয়েই নেতা বনে যাওয়া যায়। ফলশ্রুতিতে দুর্দিনে এসব হাইব্রিডরা গর্তে লুকিয়ে পড়ে।

দু’একটির উদাহরণ দিলেই বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট হয়ে যাবে। সম্প্রতি হেফাজতের তাণ্ডব নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক আফজাল হোসেন। এর কারণে তার নিজ এলাকা সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় অপমান অপদস্থ করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ানোর মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়। ওই ঘটনার নাটেরগুরু ছিলো স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা, যাকে পরে বহিষ্কার করা হয়।

শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনেও অনুপ্রবেশকারী ঢুকছে। হেফাজত নেতা মামুনুলের রিসোর্টকাণ্ড জনসম্মুখে প্রকাশ পাওয়ার পর মামুনুলের পক্ষে অবস্থান নেয় সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উদ্দিন ওরফে ফয়েজ মারজান। সে নিজের ফেসবুক একাউন্টে মামুনুলের পক্ষে একাধিক স্ট্যাটাস দেয়। পরে অবশ্য তাকেও অব্যাহতি দেয়া হয়।

তবে ভাবনার বিষয় হচ্ছে অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনায় না নিয়ে এদের কারা নেতা বানায়? কারা এদের শেল্টার দেয় বা পৃষ্ঠপোষকতা করে? দলের দুর্দিনে এরাই দলের শত্রু হয়ে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাই দলের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অপ্রকাশ্য এ সব শত্রুদের চিহ্নিত করে দল থেকে বিতাড়িত করার সময় এসেছে। কারণ প্রকাশ্য শত্রু থেকে অপ্রকাশ্য শত্রু বেশি ভয়ংকর। এরা দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থেকে দলের দুর্দিনে পেছন থেকে ছুরি মারতে পারে। তাই এখনই মূলোৎপাটন করতে হবে।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে একটা চিহ্নিত গোষ্ঠী বিরোধিতা করেছিলো। তারা শুধু বাংলাদেশের বিরোধিতাই করেনি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে যারা ছিলো তাদের উপর নির্যাতন করেছে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। দেশ স্বাধীনের পর তারা গিরগিটির মত রং পরিবর্তন করে ছদ্মবেশ ধারণ করে। তবে পঁচাত্তরে জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে তারা আবারো প্রকাশ্যে আসে। এমনকি যারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলো, তাদেরকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুরস্কৃত করার পাশাপাশি তাদেরকে দেশের মাটিতে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। যুদ্ধাপরাধীদের গড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়া হয়। সে সময় থেকে শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি।

সেই দুঃসময়ে রাজপথে থেকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হয়েছে বহুবার। কিন্তু জনগণের সমর্থন থাকায় দলটির ক্ষতি তারা করতে পারেনি। বরং যতই ক্ষতির চেষ্টা হয়েছে তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে আওয়ামী লীগ। সামরিক কিংবা স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কারিগর ছিলো আওয়ামী লীগ। সেই দুর্দিনে কিন্তু দলে কোন হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারী ছিলো না। কিন্তু টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে দুধের মাছিতে দল ভরে গেছে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে দলের দুর্দিনে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। স্বৈরাচারী এরশাদ, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে এক মুহূর্তের জন্য বিচ্যুত হয়নি। দলের দুর্দিনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছি। দেশবিরোধী চক্র যখন দেশে জ্বালাও পোড়ও বা অরাজকতার সৃষ্টির পায়তারা করছিলো তখন রাজপথে থেকে নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় অংশগ্রহণ করেছি। সেই দিনগুলোকে কিন্তু দুধের মাছিদের দেখা যায়নি। কোন হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারীরা দলের দুর্দিনে থাকে না, তাদের থাকার প্রয়োজনও হয় না। তারা আসে ক্ষমতার গন্ধে, ক্ষমতা ফুরালে আবার পালিয়ে যায়। তাই সময় থাকতে দলের ভেতরে লুকিয়ে থাকা গিরগিটিদের চিহ্নিত করে, তাদের বিতাড়িত করতে হবে। না হলে এদের কারণেই দুর্দিনে আওয়ামী লীগকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা এবং তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত