প্রাথমিকের সময়সূচিতে পরিবর্তন আবশ্যক
মুহাম্মদ মাহবুবর রহমান (চঞ্চল)
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৪১
প্রাথমিক শিক্ষা স্তর হলো শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত (৫+ বয়স থেকে ১১+ বয়স পর্যন্ত)। এ স্তরে শিশুদের শারীরিক, মানষিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। এ স্তরে শিশুরা মুক্ত পরিবেশে, প্রকৃতিকে চেনার মাধ্যমে, অবাধ বিচরণের মাধ্যমে ও খেলার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহন করে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে বিশেষ করে ১ম শিফট্ এর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সকাল ৯ টা থেকে বিকের ৪টা ১৫মিনিট পর্যন্ত (৭ঘন্টা) সময় শিশুদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হয় এর মধ্যে বিরতি মাত্র ৩০ মিনিট।
এতো দীর্ঘ সময় (খাঁচার মধ্যে বন্দী থাকার মত অবস্থা) ধরা বাঁধা নিয়মের মধ্যে থেকে কিভাবে শিশুদের দৈহিক, মানষিক, বিকাশ ঘটতে পারে? এ দেশের অসংখ্য শিশু দু’বেলা দু’মুঠো পুষ্টিকর খাবার ঠিকমত পায় না অথচ সেই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কখনও অনাহারে কখনও বা অর্ধাহারে বা পান্তা ভাত খেয়ে পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসতে হয়।
বিদ্যালয় শেষ করে বাড়ি ফিরতে সময় লাগে প্রায় সন্ধ্যা (বিশেষ করে শীতকালে)। এতো দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে অবস্থান করা শিশুদের ক্ষেত্রে অসম্ভব ব্যপার হয়ে দাড়াঁয়। অথচ মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়ের সময় সূচি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আবার উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সময়সূচীর ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশুরা বয়সে বড় হয়েও বিদ্যালয়ে কম সময় থাকতে হয় এটা চরম অমানবিক! শিশু মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে, খেলার ছলে শিক্ষা, শিক্ষা নীতির (প্রাথমিক শিক্ষার) দীক্ষা অথচ প্রাথমিক স্তরের শিশুরা খেলাধূলা তো দূরের কথা, প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া, খাওয়া দাওয়া ও ঘুমানোর সময়ও পর্যন্ত ঠিক মতো পায় না।
বিদ্যালয়ের এসব বাড়তি চাপের কারণে প্রাথমিক স্তরে অকালে ঝড়ে পড়ছে প্রাণ চঞ্চল্য কোমলমতি অনেক শিশু। মেডিক্যাল সায়েন্স মতে, শিশুদের দৈহিক, মানসিক বিকাশ ঘটে ১৫+ বয়স পর্যন্ত, যা খেলাধূলা ও মুক্ত পরিবেশে বিচরনের মাধ্যমেই সম্ভব। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত বিদ্যালয়ের সময় সূচির কারণে বিদ্যালয়গামী অবুঝ, কোমলমতি শিশুরা খেলাধূলা ও মুক্তভাবে বিচরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জাতি গঠনে ভবিষ্যৎ প্রাণ চাঞ্চল্য কোমলমতি শিশু সৈনিকদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে প্রাথমিক স্তরের জন্য প্রণীত বিদ্যালয়ের সময় সূচিপরির্বতন করা আশু প্রয়োজন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট