ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

কবে সুখবর পাবেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা?

  জামিল সরকার

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:০১

কবে সুখবর পাবেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা?

সরকারি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী বেতন বৈষম্য নিরসন। এই বেতন বৈষম্য নিরসনের জন্য জননেত্রী মমতাময়ী নেত্রী অনেকটা ইতিবাচক। তবুও লক্ষ লক্ষ প্রাথমিকের শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী কেন পূরণ হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়।

প্রধান শিক্ষকদের পরের গ্রেডে বেতন-ভাতাপ্রাপ্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শহীদ মিনারে তিন দিনের অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষরা। পরে ২৫ শে ডিসেম্বর অনশন ভাঙান তৎকালীন গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। স্থগিতের পর ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ে বেতন বৈষম্য নিরসন করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান। দেখতে দেখতে ১৮ সাল পেরিয়ে গেছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসও যায় যায়।তবুও ‘হবে, হচ্ছে’ এমন আশার বাণী ছাড়া প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা কিছুই পায় নি।

মনে রাখবেন শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদণ্ড,তবে এই মেরুদণ্ড বিনির্মাণ করেন প্রাথমিক শিক্ষকরাই। কিন্তু সেই ‘আকাশের মতো হৃদয়ধারী’প্রাথমিকের শিক্ষকরা কোন দেশে কেমন সম্মানী পান, কোন দেশে তার অবস্থান কেমন?

নিউইয়র্ক সিটির সমাজ মূলত অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর মানদণ্ড নির্ধারণ করে। এখানে দেখা হয় কোন শিক্ষক কতটুকু বেতন। শিক্ষকের মানদণ্ড অর্থের মাপকাঠিতে মাপা হয়। অন্যদিকে চীনে একজন শিক্ষক কম বেতন পেলেও শিক্ষককে সম্মানের চোখে দেখা হয়। শিক্ষকদের সামাজিক সূচকে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ চীনের সূচক ১০০, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গ্রীস (সূচক ৭৩ দশমিক ৭), তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক (সূচক ৬৮), খারাপ সূচকে সবচেয়ে এগিয়ে ইসরায়েল (সূচক ২), দ্বিতীয় (ব্রাজিল ২ দশমিক ৪), তৃতীয় চেক প্রজাতন্ত্র (১২ দশমিক ১)।

সবচেয়ে বেশি বেতনধারী সূচক ১৫০ এর মধ্যে এগিয়ে লুক্সেমবার্গ। দেশটির সূচক ১৩৭। তার মানে লুক্সেমবার্গের শিক্ষকরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর শিক্ষকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বেতন পান। বেতনের দিক থেকে এগিয়ে থাকা দ্বিতীয় দেশ সুইজারল্যান্ড (সূচক ১০৭), তৃতীয় অবস্থানে জার্মানি (সূচক ৮৯)। সবচেয়ে নিম্ন বেতন প্রদানকারী দেশ স্লোভাকিয়া। ১৫০ এর মধ্যে দেশটির সূচক ১৯। নিম্ন সূচকে দ্বিতীয় অবস্থানে চেক প্রজাতন্ত্র (সূচক ২২), তৃতীয় দেশ পোলান্ড (সূচক ২৬)।

১৯৭৩ সালে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে প্রাথমিক শিক্ষকদের সরকারের পক্ষ থেকে বেতন-ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যুদ্ধবিধস্ত সদ্যস্বাধীন দেশে নানা ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও তিনি এমন সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা প্রাথমিক শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সম্মান ও সম্মানী এবং সহকারী শিক্ষকদের সম্মানী বাড়িয়ে তাদের জীবন-মান উন্নাত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু তবুও বাস্তবতা হলো প্রাথমিক শিক্ষকদের এখনও ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা।

আর সহকারী শিক্ষকদের তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার দাবিও অযৌক্তিক নয়। একজন প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। তাই দুটি পদের মধ্যে কিছু বেতনের পার্থক্য রেখে উভয় শ্রেণিকেই দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করা যেতে পারে।

মর্যাদা, বেতন, পদোন্নতি, বদলিসহ পদে পদে অবহেলার শিকার হচ্ছেন মানুষ গড়ার তৃণমূলের ‘পরীক্ষিত কারিগর’ হিসেবে পরিচিত দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। অথচ আমরা শিক্ষকেরা কারও চেয়ে কম পরিশ্রম করি না। বিদ্যালয়ে পড়ানোর পাশাপাশি ভোটার তালিকা, সরকারির বিভিন্ন জরিপ থেকে শুরু করে এমনকি শিশুদেরকে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানো সহ নানা কাজ করতে হয় প্রাথমিকের শিক্ষকদের।

সবশেষে এটুকু বলতে চাই, প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে তৃতীয় শ্রেণি বা বেতন বৈষম্যে রেখে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ কিছুটা হলেও দূরুহ হবে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত