ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

কাজের পাশাপাশি বাড়ুক আপনার দক্ষতা, কিন্তু কীভাবে...

  মেহেদী হাসান

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০১৯, ১৫:১০  
আপডেট :
 ০৬ জুলাই ২০১৯, ১৫:২৬

কাজের পাশাপাশি বাড়ুক আপনার দক্ষতা, কিন্তু কীভাবে...

অন্তিক সাহেব অফিস শেষে আজ ভীষণ ক্লান্ত। ওদিকে সন্ধ্যা থেকে স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্লাস। একে তো ক্লান্তি তার উপর ট্র্যাফিক জ্যামের বাড়তি ভোগান্তি। নাহ...! আজ আর বোধ হয় যাওয়া হচ্ছেনা। এমন অনেক চাকুরীজীবী, শিক্ষার্থী কিংবা চাকুরীপ্রত্যাশীরা অনেকেই তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের কথা ভেবে ব্যস্ততা, নানা ঝামেলায় তা পেরে উঠেন না। আজকের লেখাটি মূলত তাদের জন্যই–

নানা সমস্যা, ঝামেলাকে উপেক্ষা করতে চাওয়ার পাশাপাশি নিজের মত করে দক্ষতাকে এগিয়ে নিতে মানুষ দিন দিন অনলাইন কোর্সের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ছে। অনলাইন কোর্সগুলো বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী বেশ জনপ্রিয়, আর প্রযুক্তির অগ্রগতিতে আমাদের দেশেও দিন দিন অনলাইন কোর্সগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে ঘরে বসেই, বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনলাইনে পছন্দসই কোর্স করা যায়, এমনকি কোর্স শেষে নির্ধারিত কোর্সের উপর ডিগ্রীও অর্জন করা যায়।

বর্তমানে অনলাইনে পড়াশোনা ও পছন্দসই কোর্স করার সুযোগ দিচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীব্যাপী প্রায় সব ধরনের মানুষের জন্যই।কিন্তু কিভাবে অনলাইনে কোর্স করবেন?

অনলাইনে কোর্স করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি পিসি, মোবাইল, ট্যাব বা স্মার্টফোন।আর তার সাথে মোটামুটি মানের ইন্টারনেট কানেকশন।আপনার কাছে ইন্টারনেট সংযোগসহ নিজের ডিভাইসটি থাকলে সহজেই শুরু করে দিতে পারেন পছন্দসই কোর্স। তবে আপনার এই এগিয়ে চলার সঙ্গী হতে, বর্তমান বাংলাদেশে অনেক অনলাইন কোর্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

কিন্তু প্রশ্ন আসতে পারে, কেন দিন দিন মানুষ এতটা আগ্রহী হচ্ছে অনলাইন কোর্সের প্রতি?

স্বাধীনভাবে শিখতে পারার সুযোগ: টিচারদের একগাদা বোরিং লেকচারের ফাঁকে ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসে দুষ্টুমিতে মেতে থাকার স্মৃতি আমাদের অনেকেরই চোখেই এখনো উজ্জ্বল। কেমন হয় যদি বিছানায় গা এলিয়ে পিঁজা খেতে খেতে কিংবা নিজের সুবিধামত যেকোনো সময়ে মনের মত করে কোন কিছু শেখা যায়? কেমন হয় যদি কোন টিচারের লেকচার মিস হয়ে গেলে সেটা বারবার শোনার সুযোগ পাওয়া যায়? এই সবগুলো সুবিধা অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। মোটকথা অনলাইন প্লাটফর্ম আপনাকে স্বাধীনভাবে শেখার সুযোগ দেবে।

সময়ের সদ্ব্যবহার: আপনি কি বর্তমানে শিক্ষার্থী? নাকি চাকুরীজীবী? অথবা চাকুরীর জন্য নিজের দক্ষতা বাড়ানোর কথা ভাবছেন। এ সবগুলো ক্ষেত্রেই কিন্তু সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। অনলাইনে কোর্স করার ক্ষেত্রে আপনার ট্র্যাফিক জ্যামের ঝামেলা নেই, প্রস্তুতি নিয়ে, দৌড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বোরিং ক্লাস করারও ঝামেলা নেই। হয়তো বা আপনি সারাদিন ক্লাসের ফাঁকে সময় পাননি কিংবা অফিসের কাজের ব্যস্ততা বেশি। সেক্ষেত্রে অনলাইন কোর্স শুধু আপনার সময় বাঁচাচ্ছে তাই নয়, পাশাপাশি নিজের সুবিধামত সময়কে আপনি ভাগ করে নিয়ে কাজে লাগাতে পারবেন।

সঠিক দিকনির্দেশনা: আমাদের দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে এই সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে। আবার অনেকেই শেখার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন এই কারণে। অনলাইন কোর্সগুলোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা পাওয়া যায়। নির্ধারিত বিষয় সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তহীনতা কিংবা সমস্যায় পড়লে কোর্স প্রশিক্ষকরা সাবলীলভাবে সহযোগিতা প্রদান করে থাকেন।

পরীক্ষা দেওয়া এবং ডিগ্রী অর্জন: অনলাইনে পড়াশোনা ও কোর্স করার একটি বড় সুবিধা হচ্ছে ঘরে বসে ডিগ্রী অর্জন। শুধু শেখা নয়, আপনি কতটুকু শিখলেন তা পরীক্ষা করাটাও কিন্তু জরুরি। সাধারণত কোর্স লেসনের মাঝে মাঝে বিভিন্ন ছোট ছোট কুইজ ও ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে কোর্স শেষ করতে হয়। সেক্ষেত্রে আপনি সহজেই নিজেকে যাচাই করে নিতে পারবেন। কোর্স শেষে সরকার অনুমোদিত ডিগ্রীও প্রদান করে অনেক প্রতিষ্ঠান। ধরুন, আপনি সফলভাবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কিংবা গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স সম্পন্ন করলেন। এ মুহূর্তে যদি স্বীকৃতিস্বরূপ একটি ভালো মানের সনদ থাকে, তা আপনাকে প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে রাখবে অনেকখানি।

মুক্ত চিন্তার সুযোগ: অনিকের মন আজ ভীষণ খারাপ। আবার ১০ মার্ক কাটা গেছে সঠিক উত্তর দিয়েও। কারণ শিক্ষক যে নিয়মে চেয়েছেন সেই নিয়মে না হওয়ায় কম মার্ক পেতে হল। এমন অভিজ্ঞতা কিন্তু আমাদের অনেকেরই আছে। নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে এসে, অনলাইন কোর্সের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো মুক্তচিন্তার সুযোগ দিয়ে থাকে। আপনার মেধা বা চিন্তাকে বাউন্ডারিতে আটকে রাখা নয়, বরং মেধার স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশে সহায়তার সুযোগ পাওয়া যায় অনলাইনে পড়াশোনার মাধ্যমে।

বাংলাদেশের কোথায় করবেন অনলাইন কোর্স? বর্তমানে এমন অনেকেই আছেন যারা তাদের পছন্দের বিষয়গুলোর উপর পড়াশোনা করে দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং নিজেদের পছন্দসই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। বাংলাদেশে প্রচুর অনলাইন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মানসম্মত কোর্স অফার করে থাকে।

উল্লেখযোগ্য কিছু প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা যাক তাহলে...

১০ মিনিট স্কুল: ১০ মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠা মূলত এখন থেকে প্রায় ৩ বছর আগে, ২০১৫ তে। রবির সহযোগিতায় আয়মান সাদিকের গড়া এ প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুক ও ইউটিউবের সাহায্যে মানুষকে শিক্ষাদান করে থাকে। এছাড়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন বিষয়ের উপর কোর্স অফার করে থাকে। বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষার্থী, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী, যারা নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে ইচ্ছুক তাদের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কোর্স। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১০ মিনিট স্কুলের বর্তমান এলেক্সা ওয়েবসাইট র‌্যাংক $$$. শিক্ষার জন্য এটি হতে পারে দারুণ একটি ওয়েবসাইট।

ওয়াইএসআই বাংলা: ওয়াইএসআই বাংলার যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে। ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি মানসম্মত কোর্স অফার করছে। তাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫ লাখ শিক্ষার্থীকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসেবে তৈরি করা এবং কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের আয়ের সুপথ তৈরি করে দেওয়া। তাদের সাথে পার্টনার হিসেবে রয়েছে সুমান সাহার বাংলাদেশ সায়েন্স সোসাইটি। নরওয়ে ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়াইএসআই বাংলাদেশও কাজ করছে। জাভা ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, গেম ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন প্যাটার্নসহ স্কিল ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন মানসম্মত কোর্স পাওয়া যাবে সাইটটিতে। বাংলাদেশী সেরা ১০০ ওয়েবসাইটের মাঝেও জায়গা করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জবের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন চাকরির খবর, নিউজ আপডেট ও স্কলারশিপ নিউজ প্রকাশ করে থাকে। চমৎকার অ্যাপও রয়েছে যার মাধ্যমে ঝামেলামুক্ত কোর্স করা সম্ভব হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ওয়াইএসআই বাংলার বর্তমান এলেক্সা ওয়েবসাইট র‌্যাংক $$$.https://www.ysibangla.com এই লিঙ্কের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাবে। নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা ও বাইরের প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য ওয়াইএসআই বাংলাও হতে পারে দারুণ একটি ওয়েবসাইট।

রেপ্টো: আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অনলাইন ই-এডুকেশন প্লাটফর্মগুলোতে কোর্স করা অনেকের জন্য ভাষাগত ও খরচের কারণে সহজ হয়ে উঠে না। বেকারত্বের হার কমাতে রেপ্টো কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান করে যাচ্ছে। তারাও ওয়াইএসআই বাংলার মত বিভিন্ন মানসম্মত কোর্স অফার করছে। শিক্ষার্থীরা চাইলেই তাদের পছন্দসই কোর্স বাছাই করে শুরু করে দিতে পারেন কোর্স। www.repto.com এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোর্সে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী রেপ্টোর বর্তমান এলেক্সা ওয়েবসাইট রেঙ্ক $$$।

খান একাডেমী: ‘সকলের জন্য, সব জায়গায় বিনামূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষাদান’ স্লোগান নিয়ে কাজ করছে খান একাডেমী। ২০০৬ সালে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সালমান খান খান একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। বিল গেটসের প্রতিষ্ঠানও এর সাথে জড়িত। খান একাডেমীতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ৩০০০ এরও বেশি লেকচার ও টিউটোরিয়াল রয়েছে। তারা দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কোর্স অফার করে আসছে। ইংরেজি প্রধান ভাষা হলেও স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, ইতালীয়, রাশিয়ান, তুর্কি, ফ্রেঞ্চ, বাংলা এবং হিন্দি সহ অনেক ধরনের ভাষায় তারা সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী খান একাডেমীর বর্তমান এলেক্সা ওয়েবসাইট রেঙ্ক $$$।

শিক্ষক ডট কম: শিক্ষক ডট কম যাত্রা শুরু করে মূলত ২০১২ সালে। বর্তমানে সাইটটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনলাইন শিক্ষার্থীদের কাছেও জনপ্রিয় এই সাইটটি। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, বিদেশী ভাষা শিক্ষা, বিদেশে উচ্চশিক্ষা, এন্ড্রয়েড ডেভেলপমেন্টসহ নানা বিষয়ের উপর কোর্স রয়েছে ওয়েবসাইটটিতে। একটি কোর্সকে অনেক ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে সাজানো হয়েছে। আর কোর্সগুলো ভিডিও আকারে সাইটটিতে দেওয়া আছে। তবে সুবিধার জন্য পিডিএফের ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া এই সাইটটিতে শিক্ষক হাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী খান একাডেমী বর্তমান এলেক্সা ওয়েবসাইট র‌্যাংক $$$।

কিছু সতর্কতা: অনলাইন কোর্সের নামে কিছু ভুয়া নামধারী প্রতিষ্ঠান অনেক সময় টাকা আত্মসাৎ করে থাকে। এসকল প্রতারণার ফাঁদে পা না দেওয়াই উত্তম হবে। এসব ব্যাপারে আরও সতর্ক হোন। ভালোভাবে জেনে বুঝে তারপর এগোন। দরকার পড়লে বন্ধুবান্ধব বা যারা সফলভাবে কোর্স করেছে এমন কারো কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। গুগল সার্চ করেও আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।

শেষকথা: আমাদের অনেকের কাছেই ভালো স্মার্টফোন, ট্যাব, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আছে। কিন্তু সময়গুলোকে অবসরে বা অন্যভাবে ব্যয় করি। অথবা কাজের চাপেও হয়ত দক্ষতা বাড়াতে বাইরে গিয়ে ক্লাস করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। অবসর বা অন্যভাবে ব্যয় করা সময়গুলো চাইলেই আমরা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে কাজে লাগাতে পারি। বর্তমানে বাংলাদেশেই বিশ্বমানের কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। ঘরে বসেই এ সকল সকল কোর্স থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করা সম্ভব। ক্যারিয়ার বিষয়ক কোর্স যেমন রয়েছে তেমনি শখের বশেও অনেকেই বিভিন্ন কোর্স করে থাকেন। তবে অবশ্যই নিজের প্রয়োজনবোধটা ভালোভাবে জেনে এবং বুঝে এগোতে হবে।

তাহলে আর দেরি কেন? আজই শুরু করে দিন আপনার দক্ষতা বাড়ানোর কাজটি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত