৬৯ বছর ধরে নলকূপ খনন করেন ৮০ বছরের আজিজ
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ
নরসিংদী প্রতিনিধি

৮০ বছরের বয়োবৃদ্ধ আজিজ। ৬৯ বছর ধরেই আছেন নলকূপ খননের পেশায়। খুবই পরিশ্রমী এ খনন শিল্পী। শুধুই নলকূপ খনন কাজেই সীমাবদ্ধ নন তিনি। ক্ষেতখামারের কাজেও জুড়ি নেই তার। এখনো সমান তালে দুই হাতে সব করে যাচ্ছেন আজিজ। বার্ধক্য যেন পরাজিত ও পরাভূত এই অশীতিপর যুবাটির কাছে।
আজিজের জবানিতে, ‘কেলাস সিক্সে পড়ুনের সময় একবার বসন্ত অইছিল। হেই যে ইস্কুল বাদা অইছে আর গেছিনা। হেই সুময়তে কলের কাম শুরু।’ অর্থাৎ, আজিজ যখন ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়েন তখন একবার বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তাতে স্কুল কামাই হয় বেশ কদিন,
তারপর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। তখন থেকে পানীয় জলের অগভীর নলকূপ খননের পেশায় আছেন তিনি। প্রথমে বড় মিস্ত্রীর সহকারী এবং পরে নিজেই মিস্ত্রী হন। নলকূপ খননের কাজ দলবদ্ধভাবে হয়। ৪ থেকে ৫ জনের দল একেকটা।
আজিজ প্রায় ৭০ বছর ধরে নলকূপ খননের কাজে আছেন, এখনো করছেন এই কাজ। আগে করতে হতো অন্য সংস্থানের প্রয়োজনে। এখন ছেলেরা রোজগার করে। নলকূপ খনন করে রোজগারের দরকার পড়ে না তার আগের মতো। ছেলেমেয়েরাও করতে দিতে চায়না। তিন ছেলে এক মেয়ের জনক তিনি। দু'ছেলেই কর্মজীবি।
তবে সব কাজ ছেড়ে অকর্মা হয়ে বসে খেতে নারাজ আজিজ। নলকূপ খননের কাজ না থাকলে ক্ষেতখামারের কাজ করেন তিনি। নিজের জমি, শ্রম দিয়ে যত্ন করতে ভালো লাগে তার। এক কথায় হাত গুটিয়ে বসে থাকার পাত্র নন এ অশীতিপর যুবাটি।
আঃ আজিজের ভাষায়, ‘আইজ্জাও এক কানি ক্ষেতের কুলা কুবাইছি আমি।’ যার অর্থ আজকেও এক বিঘা জমির ধান চাষের কাজ করেছেন তিনি।
আজিজ জানান,কাজকর্মের ভেতরে থাকলে শরীর মন দুটোই ভালো থাকে তার। এছাড়া নিজের হাতে রোজগার করে খাওয়ার স্বাদটা আলাদা।
তিনি আরো জানান, তার প্রথম জীবনের কাজের সঙ্গীদের কেউই বেঁচে নেই এখন। পরে কাজে নামা সঙ্গীদেরও অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। ভদ্রলোক বনে গেছেন এখন তারা। তিনি জানান, যতদিন শরীর আর সামর্থ্যে কুলোয় ততোদিন এ কাজে লেগে থাকার পণ তার।
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার সরৈকান্দী গ্রামের বাসিন্দা এই অশীতিপর আজিজ। জীবনে কখনো সংসারে কারো ঘাড়ের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে নারাজ তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস