এক প্রাথমিক শিক্ষকের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ২০:৩২ আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ২১:০২
মুহাম্মদ মাহবুবর রহমান। তিনি জয়পুরহাট ক্ষেতলালের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। সম্প্রতি তার একটি জবাবদিহিতার পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়। যা বর্তমান সময়ে অন্য অনেকের জন্যই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
শিক্ষক মাহবুবের দায়িত্ব ও হাতের ছোঁয়ায় বদলে গিয়েছে হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। দেখে মনে হয় একটি বাগানের ভিতরে গড়ে উঠেছে কোমলমতি শিশুদের স্কুল। যা শিশুদের মননবিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। শিক্ষক মাহবুবের ছোঁয়ায় বিদ্যালয়টি সারাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
এ ব্যাপারে শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকার প্রতি বছর পর্যাপ্ত পরিমাণে বরাদ্দ প্রদান করেন। তা দিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয় নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন করে কোমলমতী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা সম্ভব। এর ধারাবাহিকতায় সরকারি বরাদ্দ যাতে কারো পকেটস্ত না হয় এ জন্যই মূলত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের প্রয়াসে ফেসবুকে হিসেব প্রদান করেছি। কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে যাতে করে সকলে দেখে অনুপ্রাণিত হন।
বাংলাদেশ জার্নাল-এর পাঠকদের জন্য শিক্ষক মুহাম্মদ মাহবুবর রহমানের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘বিদ্যালয়ে সরকারি বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে ব্যয় করি, বিদ্যালয়কে কোমলমতিদের জন্য চিত্তাকর্ষক, দৃষ্টিনন্দন, নান্দনিক ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলি’
ভালোলাগার, ভালোবাসার মাতৃতুল্য হিন্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সরকার কর্তৃক বরাদ্দ ভ্যাট বাদে (ক্ষুদ্র মেরামত ১,৩২,০০০, Need based Playing ১,৩২,০০০, রুটিন মেরামত ৩৫২০০, স্লিপ ও প্রাক প্রাথমিক ৭২,৫০০) মোট ৩৭১৭০০ টাকা।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত কল্পে কাজের বিবরণ ও খরচের হিসাব প্রদান করা হলো:
৪টি শ্রেণি কক্ষ, ১টি অফিস কক্ষ, ২টি বারান্দা, সিঁড়ি, শহীদ মিনার বেঁধি, বারান্দা থেকে রাস্তা পর্যন্ত পার্কিং, করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে বেসিন স্থাপন, বসার আসনসহ প্রায় ৩২০০ বর্গ ফিট টাইলসকরণসহ
১) ২টি কাঠের চেয়ার তৈরীর মজুরি ৬০০০ টাকা
২) চেয়ার ভাড়া ৭০ টাকা
৩) টাইলস ১৪৮৭০০ টাকা
৪) মিস্ত্রি টাইলস ২০১০০ টাকা
৫) টাইলস ভাড়া ৪৪৭০ টাকা
৬) সিমেন্ট ২৭৭১০ টাকা
৭) সিমেন্ট ভাড়া ৪৯০ টাকা
৮) মই ১৮০০ টাকা
৯) এস এস বল ৪টি ১০০টাকা
১০) Need based playinig খেলনা যন্ত্রপাতি ক্রয় ৩৪৩৭৫ টাকা
১১) Need based playinig খেলনা মিস্ত্রি মজুরী ১৩৭৫০ টাকা
১২) খেলনা সেট ভাড়া ও স্থাপন করা বকশিস ১৫০ টাকা
১৩) তোয়ালা ২ টি ৮০০ টাকা
১৪) পোল ভাড়া ১০০ টাকা
১৫) ফটোকপি (হেড ) ৪০ টাকা
১৬) স্কুলের জায়গা মাপা ১০০০ টাকা
১৭) জায়গা মাপার দিন নাস্তা, শোক দিবস পালনের নাস্তা ৬২০ টাকা
১৮) ছাদে গাছ লাগানোর প্লাস্টিক ড্রাম ৭ টি ক্রয় ১০০০ টাকা
১৯) স্কুলের নতুন SAMSUNG মোবাইল ক্রয় ২০৮০ টাকা
২০) রং, বেলচা, ব্রাশ, হারপিক, বদনা,ঘর মোছার হ্যান্ডেল ক্রয় ৬৩৮০ টাকা
২১) রং ভাড়া ৫০ টাকা
২২) হ্যান্ড ওয়াস ১৫০ টাকা
২৩) সাইফুল কে কাজের পাওনা পরিশোধ ১৮০০ টাকা
২৪) ব্যানার ঘরে বসে শিখি ২০০ টাকা
২৫) টিন ৮৩০ টাকা
২৬) টিন ভাড়া ১০ টাকা
২৭) সাজুকে দেওয়া ( মিস্ত্রি) নাস্তা কেনার জন্য ১৩০ টাকা
২৮) ভ্যান ভাড়া কাঠ নিয়ে যাওয়া ৪২০ টাকা
২৯) কাঠ চিরা ১০০০ টাকা
৩০) টয়লেট ছাওয়া ৬০০ টাকা
৩১) বাঁশ ৩৬০ টাকা
৩২) লোহা ও স্ক্রু ৪০৫ টাকা
৩৩) কাঠ কাটা ৫০০ টাকা
৩৪) বেঞ্চ মেরামত ও ৩টি র্যাক তৈরী মজুরী ২৫০০ টাকা
৩৫) সাজু কে দেওয়া (লোহা, কাঠ চিরা,কাঠ ভাড়া, ড্রিল করা) ১০০০ টাকা
৩৬) ফটোকপি এলামনাই ৫০ টাকা
৩৭) প্রত্যায়ন কম্পিউটার ২০ টাকা
৩৮) বালু ৬৩০০ টাকা
৩৯) আঠা ও ভিক্সল ৬০০ টাকা
৪০) সোফা ২২০০ টাকা
৪১) সোফা ভাড়া ৬০ টাকা
৪২) রনি মিস্ত্রি ৫০০ টাকা
৪৩) দরজা কাটা ৩২০ টাকা
৪৪) সাজুকে দেওয়া ২৩৬৫ টাকা
৪৫) প্রাক প্রাথমিক ঘোড়া ক্রয় ১১০০ টাকা
৪৬) ফাইল কেনা ২২৫ টাকা
৪৭) টর্চ লাইট ২০০ টাকা
৪৮) বেসিন ট্যাপ ২টি ১৬০ টাকা
৪৯) মোম ও মিস্ত্রি নাস্তা ৪২ টাকা
৫০) চাবী ও সাবান দানী ক্রয় ১১০ টাকা
৫১) হাসুয়া, কাঁচি ওও বটি ধার দেওয়া ৫০ টাকা
৫২) ২টি ব্লাব ও হোল্ডার ক্রয় ১৪০ টাকা
৫৩) মিস্ত্রি নাস্তা ১৩৫ টাকা
৫৪) চক পাওডার ও ফম ১১০ টাকা
৫৫) রং মিস্ত্রি মজুরী ২০০০ টাকা
৫৬) বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ৪০০ টাকা
৫৭) স্ট্যান্ড ফ্যান ক্রয় ৪৯০০ টাকা
৫৮) ফ্যান ভাড়া ১০০ টাকা
৫৯) ভিক্সল ও ট্যাপ ৩৮০ টাকা
৬০) ৪ পিচ সিরিজ ১০০ টাকা
৬১) হেড ক্লার্ক শাকিল ও হাবিবুর স্কুল দেখতে আসার দিন তাদের নাস্তা ১০০ টাকা
৬২) মিস্ত্রিদের নাস্তা ও ওষুধ ৬৫ টাকা
৬৩) শেষ দিন ৭ জন মিস্ত্রিদের দুপুরের রান্না করা খাবার (মুরগী) ৩৫০ টাকা
৬৪) প্রাক্তন ছাত্রদের দ্বারা অফিস ঘরে জিনিস পত্র আনা নেওয়া বাবদ তাদের নাস্তা ৮০ টাকা
৬৫) ফুল ঝাড়ু ও নারিকেল ঝাড়ু ১০০ টাকা
৬৭) পানির লাইন ফিটিং বাবদ ২০০০ টাকা
৬৮) বেসিনের আয়না ৬০০ টাকা
৬৯) পাপোস ৭১০ টাকা
৭০) চিনা মাটির প্লেট ৬ টি ৮০০ টাকা
৭১) পানির লাইন মিস্ত্রি মজুরী ৬০০ টাকা
৭২) ফ্যান মেরামত ৫০০ টাকা
৭৩) বারান্দার রং ও থিনার ১০০ টাকা
৭৪) পাইপের মুখের প্যাচ ২০ টাকা
৭৫) ঘর ঝাড়ু দেওয়া মজুরী ৪০ টাকা
৭৬) রুম এয়ার ফ্রেশনার ১৮০ টাকা
আপতত মোট খরচ ৩০৮৫০২ (৩ লক্ষ ৮ হাজার ৫ শত ২ টাকা) মাত্র।সহকারী শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের কাজে খরচ করছেন ৬১,২৫০ টাকা যা হিসাব সাইফুল প্রদান করবেন ইনশাল্লাহ।প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের হাতে ১০,০০০ টাকা যার হিসাব ওনি প্রদান করবেন।
# প্রধান শিক্ষক ও SMC কমিটি কর্তৃক কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমাকে (মুহাম্মদ মাহবুবর, সহকারী শিক্ষক) প্রদেয় ৩১১৭০০ টাকা।
* বিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় ৯৪৪৫ টাকা
৩১৯৮ টাকার কাজ চলমান~বি.দ্র. (বিদ্যালয়ের কাজে বিভিন্ন জায়গায় মোটরসাইকেলে যাওয়ার তেল খরচ, মোবাইল বিল, মেধা মনন, শ্রম আমার নিজের ভালোলাগা থেকে; আমি মনে করি করোনাকালীন সময়ে রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে কিছু নিজস্ব ব্যয় আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে) ভূল ত্রুটি মার্জনীয়!!
প্রধান শিক্ষকের আদিষ্ট হয়ে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত, পরিকল্পনায় ও ডিজাইনে:
মুহাম্মদ মাহবুবর রহমান,
সহকারী শিক্ষক, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট।
২১ অক্টোবর, মুজিববর্ষ।বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ