ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

সালতামামি

ভাঙন-ক্ষোভ-অসন্তোষেই বছর শেষ ২০ দলের

  কিরণ শেখ

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:০৩

ভাঙন-ক্ষোভ-অসন্তোষেই বছর শেষ ২০ দলের

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর গতবছরের শেষ দিকে বিএনপির ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দেয়। আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ফ্রন্টের সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়া এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি, মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে এলডিপির সভাপতি অলি আহমেদের জাতীয় মুক্তি মঞ্চ নিয়ে চলতি বছরে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রতিনিয়তই দেখা গেছে।

এজন্য জোটের এক শীর্ষ নেতাকে দলের মহাসচিব তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের এবং শরিক দলগুলোতে ২০১৯ সালে ভাঙা-গড়ার খেলা চলেছে। এই বছরেই ৬ মে জোট থেকে বের হয়ে যায় জাতীয় পার্টির (বিজেপি)। আর গত ৭ সেপ্টেম্বর জোটের ঐক্যবিরোধী অবস্থানকে কেন্দ্র করে ভেঙে যায় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।

এই বিরোধকে কেন্দ্র করে সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে এবং সাধারণ সম্পাদক সভাপতিকে বহিষ্কার করছেন এবং অব্যাহতি দিয়েছেন। যার ফলে দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি, ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে পথ চলা এবং জোটের বৈঠক না ডাকা নিয়েও বিএনপি ও ২০ দলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

যদিও পরে জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতি মাসেই ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু কয়েক মাস বৈঠক হলেও পরে আবারো কয়েক মাস জোটের বৈঠক ডাকা হয়নি। এনিয়ে জোট নেতারা বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ। তবে সর্বশেষ গত ২৭ ডিসেম্বর জোটের বৈঠক হয়। তাই এক কথায় বলা যায় যে, ২০১৯ সাল ভাঙন, ক্ষোভ ও অসন্তোষের মধ্য দিয়েই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট পথ চলেছে।

গত ২৭ জুন নাজুক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রম জাতীয় মুক্তিমঞ্চ নামে নতুন মঞ্চের ঘোষণা করেন। অলি আহমেদের এই মঞ্চ প্রসঙ্গে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের ভাষ্য, অলি আহমেদ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে মঞ্চ করেছেন। মূলত জোটের ভেতরে থেকে আরেকটি নতুন জোট গঠন করে অলি আহমেদ ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিভক্তি ও বিভাজন তৈরি করতে চাচ্ছেন।

৬ মে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন। বিজেপি’র পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেবল সংহতি এবং সহমত পোষণের নিমিত্তে ২০ দলীয় জোটের সভা ডাকা হতো। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০ দলীয় জোটের সবার সম্মতিক্রমে এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রথমে ঐক্যফ্রন্টের দুজন এবং বিএনপির সম্মতিতে দলটির চারজন সংসদ সদস্য শপথ নেয়ায় দেশবাসীর মতো বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিও অবাক এবং হতবাক।

এরপর গত ৭ মে বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার আল্টিমেটাম দেন। ইরান বলেন, ২৩ মে’র মধ্যে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে ২৪ মে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন তিনি। যদিও পরে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এখনও জোটে রয়েছেন তিনি।

জানুয়ারি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। ওই এ বিষয়ে জোটের নেতারা অভিযোগ তোলেন, ২০ দলীয় জোটকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির বিষয়ে ২০ দলকে গুরুত্ব না দেয়ার বিষয়ে অভিযোগ ওঠে বিএনপির বিরুদ্ধে। আর এজন্য জোট বিলুপ্তির পক্ষেও ২০ দলীয় জোটের নেতারা!

জানুয়ারি মাসে ২০ দল বিলুপ্তির পক্ষে জোট নেতাদের ভাষ্য, বিএনপি যদি ২০ দলের চেয়ে ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয় তাহলে সরকার এখানে সুযোগ নেবে। এতে ক্ষমতাসীনরা জোট ভাঙার পরিকল্পনা করবে। আর বিএনপি জোট গড়বে। ফলে জোট ভাঙা গড়ার খেলা খেলা চলবে।

এপ্রিল ৮

গত ৮ এপ্রিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ২০ দলকে জানানো হয় যে, নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন না এবং খালেদা জিয়াও প্যারোলে মুক্তি নেবেন না। যদিও পরে বিএনপির বিজয়ীরা প্রার্থীরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন।

মে ১৩

গত ১৩ মে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। বৈঠকে শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে ২০ দলীয় জোট একক ও পৃথক পৃথক কর্মসূচি দেবে। কিন্তু এরপরে কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি।

ওই বৈঠকে নজরুল ইসলাম খান আরো জানিয়েছিলেন, প্রতি মাসের ৮ তারিখে ২০ দলীয় জোট বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মাত্র ১ থেকে ২ মাস চলেছে। এরপর থেকে আর ২০ দলীয় জোটের বৈঠক প্রতি মাসে হয়নি।

জুন ২৪

গত ২৪ জুন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। বৈঠকে শেষে নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছিলেন, বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জোট দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রধান নেত্রী বেগম জিয়ার দ্রুত মুক্তির লক্ষ্যে জুলাই মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা মহানগরে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আগামী সভায় নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে পরবর্তী সভায় কর্মসূচির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

সেপ্টেম্বর

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ঐক্য বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে জাতীয় মুক্তি মঞ্চে অংশগ্রহকে কেন্দ্র করে ভেঙে যায় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। আর এই মঞ্চকে কেন্দ্র করে সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে এবং সাধারণ সম্পাদক সভাপতিকে বহিষ্কার এবং অব্যাহতি দেন। এরফলে দলের মধ্যে বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একে অপরকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেয়ার কারণে জাগপা এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান। আর অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খন্দকার লুৎফর রহমান।

সর্বশেষ গত ২৭ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জোর জবরদস্তি করে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করা হয়। ফলে বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার বলে জনগণ মনে করে না। এই দিবসটির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৩০ ডিসেম্বরে ২০ দল ঢাকায় একটি আলোচনা সভা করবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত