ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩১ মিনিট আগে
শিরোনাম

মান্নার উল্টো সুর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৮

মান্নার উল্টো সুর

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অনৈক্যের সুর বাজছে। জোটের প্রধান শরিক বিএনপি নেতাদের বাদ দিয়ে ফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার একটি নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠন নিয়ে এই বিরোধের বিষয়টি সামনে এসেছে।

৩০ ডিসেম্বরের ভোটের পর ঐক্যফ্রন্টের সভা-সমাবেশে কারাবন্দি বিএনপিনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে আসছেন জোটের শরিক নাহরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। বিএনপি নেতাদের কণ্ঠে সুর মিলিয়ে নিজের সাবেক দল আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনাও করে আসছেন তিনি।

তবে যে একাদশ নির্বাচনের ভোটকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্ম সেই ৩০ ডিসেম্বর ভোটের বর্ষপূর্তির দিন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপিকে না জানিয়ে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ নামে একটি নতুন প্লাটফর্ম গঠন করেন মান্না।

গত রোববার রাতে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’-এর সমাবেশ কাভার করার অনুরোধ জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি আসে গণমাধ্যমে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বক্তার নামের তালিকায় নাম ছিল জেএসডির আ স ম আবদুর রব, ঐক্যফ্রন্টের বাইরে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম, কমরেড খালেকুজ্জামান, জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকেরও নাম ছিল।

তবে সেখানে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি ও জোটটির প্রধান নেতা কামাল হোসেনের দল গণফোরামের কারও নাম ছিল না। অর্থাৎ যে পাঁচটি দল নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গড়া হয়েছিল মান্নার নতুন মঞ্চে তাদের তিনটিরই পাত্তা নেই। আর এই কারণেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে মান্নার এই উদ্যোগ। সঙ্গত কারণেই মান্নার নতুন প্লাটফর্ম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নতুন মেরুকরণ কি-না সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জোটের অঙ্গনে।

অবশ্য পরের দিন সমাবেশে শুধু গণফোরামের একজন ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানকে দেখা গেছে। অন্যদিকে আ স ম রব নিজেও ওই সমাবেশে যেতে অনীহা জানিয়েছিলেন। তবে মান্নার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তিনি সমাবেশে যোগ দেন বলে জানা গেছে।

২০০৭ সালে দলে সংস্কারের কথা বলে আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়া মান্না নাগরিক ঐক্য গঠন করেন। আওয়ামী লীগে গুরুত্ব হারিয়ে ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়েন বিএনপি বলয়ের দিকে। বিএনপির প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে এক ফোনালাপকে কেন্দ্র করে কারাগারেও যেতে হয় তাকে। মূলত এরপরই বিএনপিতে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় মান্নার।

এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক। ওই নির্বাচনে ভরাডুবি হলেও জোটটি বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল।

জোট সূত্র বলছে, ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দুই শরিক বিএনপি এবং গণফোরামকে পাশ কাটিয়ে মান্নার নতুন প্লাটফর্মকে ইতিবাচকভাবে নেয়নি দল দুটির নেতারা। তবে মান্নার এই উদ্যোগের পেছনে ঐক্যফ্রন্টের সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিয়মিত যোগ না দেয়া, ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ভোটে জয়ী গণফোরামের দুজনের সংসদে যোগদান, নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাদের অনেকটাই সরে যাওয়া আর কাদের সিদ্দিকীর ঐক্যফ্রন্ট ছাড়া নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন মান্না। নতুন প্লাটফর্মটির উদ্যোগের পেছনে এসব বিষয় ভূমিকা রেখেছে বলে ভাষ্য তাদের।

আর এসব কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিপরীতধর্মী বাম গণতান্ত্রিক জোটের কয়েকটি শরিক দল এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরব থাকা বিশিষ্টজনদের নিয়ে নতুন প্লাটফর্ম দাঁড় করাতে চেষ্টা করছেন মান্না। ভোটের বর্ষপূর্তির দিনটিকে মোক্ষম সময় ধরে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন নাগরিক ঐক্য প্রধান।

এ ব্যাপারে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যে অনুষ্ঠান থেকে মান্নার মঞ্চের যাত্রা শুরু হলো সেখানে বেশিরভাগ নেতাকর্মী বিএনপি, ছাত্রদল ছিলো। অথচ দলের সিনিয়র কেউ সেদিন সেখানে ছিলেন না। এই উদ্যোগ কেন কোন উদ্দেশ্যে দল নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবে।

ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেও অংশ নেননি জানিয়ে গণসংহতির সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী বলেন, গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য যারাই উদ্যোগ নেবে সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি। তবে এই মঞ্চ সামনে কি করবে তা এখনো বিস্তারিত জানি না।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। নানাভাবে চেষ্টা করছি আমরা, কিভাবে গণতন্ত্র ফেরানো যায়, জোর করে ক্ষমতায় থাকা সরকারকে সরানো যায়। এটাও তেমন একটি চেষ্টা। ধীরে ধীরে সবাইকে এক প্লাটফর্মে আনার চেষ্টা করছি।

তাহলে কি ঐক্যফ্রন্ট থেকে বের হয়ে গেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, ঐক্যফ্রন্ট থেকে বের হলে তো জানতেন। সেখানকার কার্যক্রমও চলছে, চলবে। এটাও চলবে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত