ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

পঁচাত্তরের মতোই দেশে একদলীয় শাসন চলছে: মওদুদ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৫৮

পঁচাত্তরের মতোই দেশে একদলীয় শাসন চলছে: মওদুদ
ফাইল ছবি

পঁচাত্তরের মতোই দেশে এখন একদলীয় শাসন চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংসদে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিবসে বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মওদুদ আহমদ বলেন, এদেশে আজকে যা চলছে একদলীয় শাসন। ১৯৭৫ সালের একদলীয় শাসনের চিন্তা-ধ্যান-ধরনা এখন চলেছে। ওই সময়ে যেমন কোনো রাজনীতি ছিল না, এখনো দেশে কোনো রাজনীতি নাই। এখন কোনো কার্যকর সংসদ নাই, আইনের শাসন নাই, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাই। ১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে আনুষ্ঠানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিলো। ঠিক এখন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এবং সুকৌশল সেই একই ব্যবস্থা অনানুষ্ঠানিকভাবে চলছে। গণতন্ত্রের আবরণে দেশে স্বৈরতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব ঘটিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবই তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আজকের এই দিনে জাতির প্রত্যয় হলো- দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য সকল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল-মত-শ্রেণি, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, ছাত্র-যুবকসহ সকল শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে যেতে হবে। আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনা এবং গণতন্ত্রের জয় অবশ্যম্ভাবী।

১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রবর্তনের পটভূমি তুলে ধরে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, সেদিন সংসদে বিনা বিতর্কে, বিনা আলোচনায় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিল মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে পাস করিয়ে দেশের তখনকার প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির পদে শপথ গ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। এই দলের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ অর্থাৎ বাকশাল। এইদিনে বাকশালের জন্মদিন।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ কিছু সামরিক অফিসারের মাধ্যমে জাতির জনককে হত্যা করে ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং দেশে জারি করে ‘মার্শাল ল’। ৪ জন ছাড়া সংসদ ও মন্ত্রীসভায় আওয়ামী লীগের সকল সদস্যই নিজ নিজ পদে থেকে গেলেন। সেই সরকারের সমর্থনে আওয়ামী লীগের ৪ জন নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় এবং তাদের সেই হত্যাকাণ্ডের অপরাধ মওকুফ করার জন্য ইনডেমেনিটি অর্ডিন্যান্স তারা জারি করেন।

৭ নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লবে স্বাধীনতা ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহনের মধ্য দিয়ে দেশে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা পূণঃপ্রবর্তনের বিষয়গুলো তুলে ধরে মওদুদ বলেন, শহীদ জিয়া ক্ষমতা আরোহন করার পরপরই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে ৭২ সালের সংবিধানের আলোকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সকল মৌলিক অধিকারসহ সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনর্বহাল করেন।

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিলো তা পরবর্তীতে সেনা সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করা হয়। এরপর একই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে আরো দুইটি প্রহসনের নির্বাচন করা হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ১১ বছর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে একদলীয়ভাবে দেশ চালিয়ে ১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি প্রবর্তিত বাকশাল ব্যবস্থানে পরোক্ষভাবে কায়েম করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও শওকত মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

কেএস/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত