ঢাকা, রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আপডেট : ৭ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

হেফাজতকে কব্জায় নিতে তৎপর বিএনপি-জামায়াত

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২০, ১১:৫৪  
আপডেট :
 ১২ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৪৫

হেফাজতকে কব্জায় নিতে তৎপর বিএনপি-জামায়াত

হেফাজতে ইসলামের আমির আহমেদ শফীর মৃত্যুর পর থেকেই বহুল আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত এ সাম্প্রদায়িক সংগঠনটির কর্তৃত্ব নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থি অংশের নেতারা। তারা শফীপন্থিদের বাদ দিয়ে হেফাজতকে পুরোপুরি দখলে নিয়ে সরকার বিরোধীদের কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে হেফাজতের ঢাকার আমির নূর হোসাইন কাসেমী ও মামুনুল হক পন্থীরা। রাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সূত্র মতে, কাউন্সিল সামনে রেখে জামায়াত-শিবির কৌশলে হেফাজতে ইসলামে প্রভাব বিস্তারেরও চেষ্টা চালাচ্ছে। আহমদ শফী জীবিত থাকতে সংগঠনটি চট্টগ্রাম থেকে নিয়ন্ত্রিত হলেও বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠরা তা ঢাকাকেন্দ্রিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক ও হেফাজত আমির আহমদ শফীর জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্যসহ শিবিরের বর্তমান সেক্রেটারি। ওই দিনই প্রশ্ন ওঠে, হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজতে ইসলাম এখন কি জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে?

হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। জামায়াত নেতাদের পাশে উপস্থিত কওমি মাদ্রাসা সংগঠনের অন্যতম নেতা আল্লামা মামুনুল হকের উপস্থিতি ওইদিনই বিতর্ক বাড়িয়েছিল। কারণ মামুনুল হকের জামায়াত সম্পৃক্ততা নিয়ে আগেই ছিল বিতর্ক।

সেদিন আহমদ শফীর জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর তার লাশ যখন বহন করতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন দেখা যায় মাওঃ মামুনুল হক, জামায়াতের চট্টগ্রামের সাবেক এমপি আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক এমপি ও জামায়াতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও ছাত্র শিবিরের বর্তমান কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দিন আইয়ুবী তার লাশ বহন করছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আরো বহু নেতা। সেই ভিডিওটি রীতিমত ভাইরাল হয়ে যায় নেট দুনিয়ায়।

এখানেই শেষ নয়, ওইদিন কোনো রাখঢাক না নিয়েই জানাজায় অংশ নেয়া জামায়াত-শিবির নেতাদের তালিকা প্রকাশ করে জামায়াত। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রাহিমাহুল্লাহুর জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে জানাজায় আরো অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরী শাখা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী শাখার সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উত্তর সাংগঠনিক জেলা শাখার আমির আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম মহানগরী শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মাদ উল্লাহ ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল সালাউদ্দিন আইয়ুবীসহ স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মী।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ মূলত বাংলাদেশের কওমি মাদ্রসাভিত্তিক একটি সংগঠন যা ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কথিত ইসলাম বিরোধী ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করে আসছে সংগঠনটি।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগঠনের বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের যে কাউন্সিল বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে অনেকেই সরাসরি বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট। কেউ কেউ জামায়াত নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। নতুন কমিটি গঠনকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা জাফর আলম নিয়মিত গোপন বৈঠক করে কমিটির তালিকা তৈরি করছেন। তালিকাটি কাউন্সিলের দিন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক ধর্মভিত্তিক সংগঠন হলেও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সংগঠনটিতে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী সংগঠনটির অন্যতম শীর্ষ নেতা। ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকেই হেফাজতের নতুন মহাসচিব করার জন্য সংগঠনটিতে থাকা বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠ অংশটি চেষ্টা চালাচ্ছে। ভবিষ্যতে হেফাজতের নেতৃত্বকে হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রভাবমুক্ত করে ঢাকাকেন্দ্রিক করতে শফীপন্থি কোনো আলেমকে হেফাজতের নতুন কমিটিতে না রাখতেও নানা তৎপরতা শুরু হয়েছে।

জামায়াত ও হেফাজতের আদর্শিক দূরত্বের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কওমিদের স্বার্থ রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংগঠনটির মূল শক্তি কওমি মাদ্রাসা এবং এসব মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা লাভ করা কওমি আলেম ও শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই এই কওমি আলেমদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াত পাকিস্তানিদের পক্ষ নেয়ায় কওমি আলেমদের সঙ্গে ওই দলটির দূরত্ব আরো বাড়তে থাকে।

তবে দেশে কওমি আলেমদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকায় জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন শিবির হেফাজত ও কওমি মাদ্রাসাগুলোকে তাদের দখলে নেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। এর অংশ হিসেবে শিবির ১৯৮৫ সালে কওমি অঙ্গনের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় আক্রমণ করে মাদ্রাসাটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ১৯৮৯ সালে ছাত্রশিবিরের সংশ্নিষ্টতার অভিযোগে ওই মাদ্রাসা থেকে ১০ জন ছাত্রকে বহিস্কার করা হয়। এর জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে হাটহাজারী মাদ্রাসায় কয়েক দফায় হামলা করা হয়।

অন্যদিকে হেফাজত নামে অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকে হেফাজতের মহাসচিব করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। কাসেমী বর্তমানে হেফাজতের ঢাকা মহানগর আমির। ফলে সব সময়েই হেফাজতকে বিএনপি-জামায়াত নিজেদের হিসেবে ব্যবহার করেছে।

এখন হেফাজতের নেতৃত্ব চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য নূর হোসাইন কাসেমী ও মামুনুল হক চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে হেফাজতের ভবিষ্যত নেতৃত্ব হাটহাজারীর প্রভাবমুক্ত এবং ঢাকাকেন্দ্রিক করা যায়। এটি তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ বলে মনে করছেন হেফাজতের ভেতরে থাকা জামায়াতবিরোধী ও আহমদ শফীর মতাদর্শে বিশ্বাসী আলেম ও ছাত্ররা।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত