ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ফখরুলের দাবি, হত্যার স্বীকার মুশতাক

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:২৩

ফখরুলের দাবি, হত্যার স্বীকার মুশতাক
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

মুশতাক আহমেদকে কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি মুশতাকের কারান্তরীন অবস্থায় মৃত্যুতে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করারও দাবি জানান ফখরুল।

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। ‍

কারাবন্দী অবস্থায় মুশতাকের মৃত্যুতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মুশতাক লুটপাটকারী কিংবা কালোবাজারী, সন্ত্রাসী ও ডাকাত ছিলেন না। বরং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্র মুশতাক আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়ে অকালে তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হলো। মুশতাকের এই নির্ভিক আত্মদানের মধ্য দিয়েই দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠবে এবং দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক স্বাধীনতাসহ সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে।

‘মুশতাক একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন, তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের নিকট প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিনের জন্য বিরাজ করবেন।’

ফখরুল বলেন, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগতি, অসংগতি, নিয়ম-অনিয়ম, কীর্তি-অপকীর্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীনচেতা মানুষের অভিমত, বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ আজ গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকার তাদের অপকর্ম ও ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোন ধরণের সমালোচনা যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে সেজন্য নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য লেখা বা পোষ্টকে কোনভাবেই বরদাস্ত করছে না।

‘যারা স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমে নিজের মত প্রকাশের চেষ্টা করছে তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ পরিণতি। হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ।’

দেশে আইন-কানুন, সুষ্ঠু বিচারিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সারাদেশে এক শ্বাসরোধী পরিবেশ বিরাজ করছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। সারাজাতির ওপর ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে। দেশে এখন নব্য বাকশালী শাসন জারি রাখা হয়েছে, যাতে কেউ টু শব্দ করতে না পারে। মানুষকে নিঃশব্দ করতেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, পুলিশী হেফাজতে মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় জীবনের অনুষঙ্গ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাতেও তারা আঁতকে ওঠে। রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রুপান্তর করা হয়েছে। নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সকল বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে মাফিয়ারুপ ধারণ করেছে। সরকার নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে দ্বিধা করছে না। সরকারের এই রক্তঝরা কর্মসূচির প্রধান শিকার হচ্ছে বিরোধী দল, মত ও স্বাধীন চিন্তার মানুষরা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, নজীরবিহীন অপশাসন ও কুকীর্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার যে ঝড় বইয়ে যাচ্ছে সেটি মানুষের দৃষ্টি থেকে ভিন্ন দিকে সরাতেই জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিবেকবান, স্বাধীনচেতা অনলাইন ব্লগার ও লেখকদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। তবে এই দুর্বিনীত দুরাচারের পরিণতি হবে ভয়াবহ। মুশতাকের এই মৃত্যুতে সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে-বেদনায় ফেটে পড়েছে। মুশতাকের মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ এবং নিজস্ব চিন্তায় স্বায়ত্বশাসিত ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সার লেখকের মৃত্যু কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সাথে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত।

ফখরুল গত বছর মে মাসে মুশতাক আহমেদের সাথে কার্টুনিষ্ট আহমেদ কবির কিশোরকে আটক করে এখনও কারাবন্দী করে রাখার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি অবিলম্বে কার্টুনিষ্ট আহমেদ কবির কিশোরের মুক্তি দাবি জানান।

কেএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত