ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

সরকারের সিদ্ধান্তে হতাশ বিএনপি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২১, ২১:৩৪

সরকারের সিদ্ধান্তে হতাশ বিএনপি
ফাইল ছবি

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে বিএনপি। রোববার রাতে এভার কেয়ার হাসপাতালে সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।

সরকার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য নাকচ করে দিয়েছে- এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, এই সিদ্ধান্তে নিঃসন্দেহে আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এই কথা অত্যন্ত সত্য যে, একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্যটাই ছিলো, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। এটা আজকের বিষয় নয়, ওয়ান ইলেভেন থেকেই শুরু হয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় তাকে এবং তার দলের সব শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে এধরণের মামলা নিয়ে আসা হয়েছে। আর দেশের প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে এধরণের মামলা দিয়ে পুরো দলকেই রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত চলছে। আর সবচেয়ে বেশি চক্রান্ত চলছে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। কারণ তিনি হচ্ছেন, সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। এদেশের কোটি কোটি মানুষের তিনি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক।

তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে যে চিকিৎসা তিনি (খালেদা জিয়া) নিচ্ছেন, ডাক্তারাই বলেছেন, এই চিকিৎসা যথেষ্ট নয়। কারণ করোনা পরবর্তী যেসকল সমস্যা তার দেখা দিচ্ছে, এটা তার বয়স এবং তার যে রোগগুলো আছে- সেখানে যথেষ্ট ঝুঁকির সম্মুখীনে আছেন তিনি। আর তার জীবনও ঝুঁকির সম্মুখীনে আছেন।

বর্তমান সরকার ওয়ান ইলেভেনের ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চান অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তার ফলশ্রুতিতে আজকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্তের কোন যুক্তি থাকতে পারে না। কারণ তারা বলেছেন, নজির নেই। নজির তো সরকার অসংখ্য সৃষ্টি করেছে। আর এই বিষয়টা তো শুধু মানবিক কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে এটা অত্যন্ত জরুরি। কারণ উনি ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তার যে অবদান, এই অবদান অস্বীকার করবার কোন উপায় নেই। দুর্ভাগ্য আজকে সরকারের প্রতিহিংসামূলক যে রাজনীতি সেই রাজনীতিকে চরিতার্থ করতেই এধরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের ধারার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ধারাতেই কিন্তু বিদেশে যাওয়া, একেবারেই দণ্ড মওকুফ করাসহ যথেষ্ট সুযোগ দেয়া আছে। তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনের আসামিকে বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারেন এবং মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ও গণতন্ত্রের জন্য যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তার জন্য তাদের কোন মানবতা, শিষ্টাচার এবং মূল্যবোধ কাজ করে না!

খালেদা জিয়া তাহলে রাজনীতির শিকার হলেন- এই প্রশ্নে জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তা তো অবশ্যই। এখনো তিনি (বিএনপি চেয়ারপারসন) রাজনীতির শিকার হয়েই তো আছেন। আর এখনো অন্তরীণ আছেন বলা যেতে পারে।

রাষ্ট্রপতি কিংবা আদালতের কাছে কোন আবেদন করবেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবেদন করেছেন তার পরিবার। তাই পরিবার সিদ্ধান্ত নেবেন কি করবেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে ফখরুল বলেন, তার যে সুচিকিৎসা। এবিষয়ে সরকারের কাছেও গিয়েছি। আমরা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদষ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও গিয়েছিলাম তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য। একবার নয়, দুইবার আমরা গিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাকে পিজি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল’ হাসপাতালে নেয়া হলো তারপরও তার সুচিকিৎসা হয়নি। আর যখন গোটা দেশ করোনায় আক্রান্ত হলো তখন পরিবারের আবেদন তার সাজা স্থগিত করা হলো। যেটা আমরা মনে করি, খুব বেশী উপকার তার জন্য করা হয় নাই।

বিএনপি মহাসচিব জানান, আমি আজকে উনাকে দুই মিনিটের মতো দেখেছি। আজ আমার কাছে একটু ভালো মনে হলো। আর অক্সিজেন ছাড়াই রুমে উনি এখন শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। সেখানে তার খুব বেশী একটা সমস্যা হচ্ছে না। আর উনার ফুসফুসে যে পানি আসছিলো, সেটা এখনো ‘টিউব’ লাগানো আছে।

এদিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে যে আবেদন তার পরিবার করেছিল, তা আজ নাকচ করে দিয়েছে সরকার। এবিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ স্থগিত করে যে শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছিল, তা শিথিল করে এখন তাকে বিদেশে যেতে দেয়ার সুযোগ নেই।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দারের আবেদনটি গ্রহণ করতে পারলাম না।

খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার গত ৫ মে আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেই রাতেই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হবে।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল বেগম জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আরও পড়ুন: সরকারের সিদ্ধান্ত বেআইনি: খালেদার আইনজীবী

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএস/আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত