ক্ষমতায় থাকতে ইউক্রেন ইস্যুতে ভোট দেয়নি সরকার: বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২২, ১৭:৩৭ আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ২০:৩৭
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলটি বলছে, ক্ষমতায় থাকতে ইউক্রেন ইস্যুতে ভোট দেয়নি সরকার।
শুক্রবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকায় বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে দেশবাসীর জনমতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছে ক্ষমতাসীন সরকার।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, গত ৭ দিন যাবত ইউক্রেনবাসীর উপর রাশিয়ার অমানবিক আক্রমণ চলছে। তার ফলে ১০ লক্ষ মানুষ উদ্ভাস্তু হয়েছে। শত শত নিরীহ ইউক্রেনবাসীর সঙ্গে একজন বাংলাদেশী নাবিকের নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ ব্যক্ত করছে বিএনপি।
এই আক্রমণকে ইউক্রেনের উপর চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ এবং তার স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লংঘন বলে মনে করে বিএনপি। এ ধরনের আধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী তৎপরতা জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী অপরাধ। ইতিমধ্যেই মাত্র পাঁচটি দেশ বাদে জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনে এই আক্রমণের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মাত্র পাঁচটি দেশের বিরোধীতা ও ৩৫টি দেশের পক্ষ গ্রহণে বিরত অবস্থান বাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ তথা বিশ্ববাসী এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবস্থান নিয়েছে।’
বাংলাদেশের জনগণ ইউক্রেনসহ যেকোনো দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের মৌলিক অধিকারকে শ্রদ্ধা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন জবাবদিহিতাবিহীন কর্তৃত্ববাদী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনমতকে তোয়াক্কা করে না। বিএনপি সব সময়ই সকল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে প্রবাহমান বিশ্বজনমতের পক্ষে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নিমূল করা এবং মানবাধিকার লংঘনে জাতিসংঘের নিন্দা প্রস্তাবের ক্ষেত্রেও সরকার একইভাবে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্খার বিপরীতে ভূমিকা নিয়েছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে কার্যকরী অবস্থান নিতেও ব্যর্থ হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাণ্ডে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে- যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলছে। বিএনপি মনে করে, দেশবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত জনমত গোটা বিশ্বের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার বিষয়ক মূলস্রোতের সাথে মিশে আছে। কিন্তু দেশের ক্ষমতাসীন সরকার তার ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে দেশবাসীর জনমতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদানে বিরত থেকেছে। যা বাংলাদেশের সংবিধান ঘোষিত গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধের নীতিমালা পরিপন্থি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি জাতিসংঘের নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শক্তিকে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহনের প্রত্যাশা ব্যাক্ত করছে। যুদ্ধরত দুই দেশের চলমান আলোচনার ধারাবাহিকতায় যুদ্ধ বন্ধ করে অবিলম্বে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি বিএনপি আহ্বান জানাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএস/এমজে
