ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

বেশি সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাশাও বেশি আপনার কাছেই

  প্রণব সাহা

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:০৪  
আপডেট :
 ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:২৪

বেশি সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাশাও বেশি আপনার কাছেই

রাজনীতির পারদ গরম হচ্ছে। অর্থনীতিও চাপে। তাই সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার দিকে সবার চোখ। এরই মধ্যে চলে গেছেন বিশ্বসভায়, জাতিসংঘে ১৯ বারের মত ভাষনও দিয়ে ফেললেন। ৫১ বছরের বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সময়ের প্রধানমন্ত্রী,একটানা একযুগ পেরিয়েছে তার রাষ্ট্রপরিচালনার মেয়াদ। শত সমালোচনা সত্বেও তার মত গনমাধ্যমবান্ধব সরকার প্রধান হিসেবেও এগিয়ে তিনি। এখনো তাই আনুষ্ঠানিকতার বাইরে যেসব সাংবাদিক আমরা ঘুরে বেরিয়েছি সারাদেশ তার সাথে ,তাদের অনেকেই আপা ডেকে ফেলতে পারি অনায়াসেই। কিন্তু প্রোটকল আর নিরাপত্তা ব্যারিকেডে এখন কিছুটা দূরত্বে অবস্থান । সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০১৯ সালে গণভবনেই।

রাজনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে হাত পাকানোর বেশিরভাগ সময়টাই কেটেছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সভা-সমাবেশ আর নির্বাচনী প্রচারণার খবর কাভার করে। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরও সরকারের সমালোচনা বা তার আগে আওয়ামী লীগের ভেতরের সংকট বা দ্বন্ধ নিয়ে লিখতে কোনো অসুবিধা হয়নি। এখানো খোলাখুলি বর্তমান সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে দ্বিধা করি না।

এবছর বঙ্গবন্ধুর আদরের কন্যা শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর। সে উপলক্ষে তাকে শ্রদ্ধা আর শুভেচ্ছা জানাতে এই লেখা। নিজের জীবনের অর্ধেকরও বেশি সময় কাটিয়ে দিলেন রাজনীতিতে, আর যে রাজনীতিতে দেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ৪১ বছর আগে। আর তা কখন, যখন এক রাতেই হারিয়ে ফেলেছেন মা, বাবা, তিন ভাই, দুই ভাইয়ের স্ত্রী, চাচা এবং ফুপাসহ অনেক প্রিয় স্বজনকে হারিয়ে। একজন রাজনীতিক বা সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে মূল্যায়ন করার আগে এই বাস্তবতাকে বিচেনায় না নিলে অন্যায় হবে। দেশের বাইরে থাকায় মা-বাবাসহ সবাইকে খুনের ঘটনার সময় তিনি ছোটবোন শেখ রেহানাসহ বেঁচে গিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেও ২১ বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতাসীন করে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিতে।

তবুও কেউ তাকে ছাড় দিতে চায় না। কারণ ২০০৯ সাল থেকে একটানা ১৩ বছর ক্ষতায় তিনি। তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়ে হ্যাট্রিক করেছেন। ১৯৯৬-২০০১ এই পাঁচবছরের রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে যার, যিনি বাংলাদেশের প্রথম সরকারপ্রধান এবং তিনি প্রথম একটি সরকারের প্রধান যা মেয়াদ পূরণ করেছিল। তাই ২০০১ সালের ১৪ জুলাই যেদিন শেষ কর্মদিবসে সংসদ থেকে মিছিল করে বেরিয়ে এসেছিলেন, সেদিন খুব কাছে থাকার সুযোগ হয়েছিল। এমনকি নিরাপত্তার দায়িত্বপালনরত এসএসএফ-এর সাথে ধাক্কাধাক্কি করেও। বিদায়ী সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের শপথ অনুষ্ঠানেও।

২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ৩ বা ৪ অক্টোবর সুধাসদনে গিয়ে আওয়ামী লীগের হারবার কারণ নিয়ে বিতর্ক করার সৌভাগ্যও হয়েছিল। সতীর্থ সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, ওবায়দুল কবীর, মোড়ল নজরুল ইসলাম সঙ্গে ছিলেন। সেখানে থাকা আরেকজন সাংবাদিক বন্ধু পীর হাবিবুর রহমান অসময়ে চলে গেছেন কিছুদিন আগে। যেই পীর হাবিব অসুস্থ হলে দিনাজপুর থেকে সৈয়দপুরের বিমানবন্দর হয়ে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। দিনাজপুরে যখন গিয়ে বলেছিলাম ‘আপা পীরের অবস্থা ভালো নয়, ঢাকায় পাঠানো দরকার’ দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়ে শেখ হাসিনার সেই উক্তি এখনো ভুলি নেই। নিজের সম্পর্কে বলেছিলেন ‘মুরিদের অবস্থাও ভালো না।’ এইতো আমাদের আপা।

এমন অসংখ্য স্মৃতি আমাদের অভিজ্ঞতার থলিতে। কিন্তু তারপরও চাই সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার সঠিক মূল্যায়ন হোক। ১৯৯২ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই শেখ হাসিনাকে একজন রিপোর্টার হিসেবে কাছে থেকে দেখেছি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী আবার একজন স্নেহময়ী বড় বোন হিসেবেও।

মহাখালীর আনবিক শক্তি কমিশনের অফিসার্স কোয়াটার,৩২ নম্বরের বাড়ি এবং ২৯ মিন্টো রোড, সুধাসদন হয়ে সেই গণভবনে যা প্রথম ব্যবহার করেছেন তার জনক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এখন বাঙালি জাতি শুধু দোষ খোজে শেখ হাসিনার। কেন এতা বছর ক্ষমতায় থাকতে হবে , কেন কুইক রেন্টালে দুনীর্তি হলো, কেন বিদেশী ঋনে ব্যয়বহুল পরামণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে হবে। কী দরকার ছিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কর্নফুলি টানেল, অলাভজনক মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানানোর? পদ্মাসেতুর কথা এলে অবশ্য অনেকেরই গলা নেমে যায়। তখন আবার গলার জোর বাড়িয়ে বলতে শোনা যায় কেন আরো একটি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাতে হবে, কী দরকার পদ্মায় আকেটি সেতুর, নতুন আন্তজার্তিক বিমানবন্দর। আহা সবই শেখ হাসিনার দোষ, এতো এতো বড় স্বপ্ন কেন দেখেন শেখ হাসিনা? আরে বোকা যার বাবা একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন,তার আদরের ‘হাসু’ কি ছোটো স্বপ্ন দেখতে পারেন? যদিও যখন দেখি একনেকে এখন শুধু শত-হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাশ হয়ে যায়। বুকে কাঁপন ধরে বৈকি! সব শেষ করতে পারবেন তো? কিন্তু ওই যে ভারতের নুমালি গড় থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত তেলের পাইপ লাইন হয়ে যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে নতুন রেলসেতুর পিলার মাথা তুলে দাড়ায়, মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর বা পাওয়ার হাব হয়ে যায়, সেখান থেকে নাকি গ্যাসও আসবে রাজধানীতে পাইপলাইনে। হায় পরবর্তী সরকারের জন্য তো আর কিছু্‌ করার বাকি রইলো না।

না এতা সব প্রশংসাতো দলবাজি আর তেলবাজির লক্ষণ। এই যে ভারতে গেলো ফিরে এলো শূন্য হাতে? হায় ইতিহাস বলে ৫০ বছরে ভারতের সাথে চুক্তি করায় এগিয়ে আওয়ামী লীগ। আর সবচেয়ে বেশি চুক্তি তাদের সময়ই। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলেও হয়েছিল ৪টি। সত্য জানাতে অসুবিধা কি? কিন্তু জানতে হবে এইচ এম এরশাদের৯ বছর আর খালেদা জিয়ার ১০ বছরে কিন্তু একটি চুক্তিও হয়নি।

তবুও আমরা সমালোচনা করবো সুশাসনের অভাব আছে অবশ্যই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা ছিল ২০১৮ সারের নির্বাচনী ইশতেহারে। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী বাদ পড়েছেন। এমপির জেল হয়েছে,সচিব জেল খেটেছেন, সহযোগী সংগঠনের নেতাদের প্রেপ্তার ও বিচার অব্যাহত আছে। সাইজ করে দিচ্ছেন নিজের আত্মীয়,বাদ দিচ্ছেন মন্ত্রিত্ব থেকে। না তবু খুশি নই আমরা। শতভাগ বিদ্যতের জয়ডঙ্কা বাজানোর পর কেন লোডশেডিং। মানতে রাজি নই। মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলার। তাহলে কেন এতো ধনবৈষম্য। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলার পর কেন চালের এতা দাম বাড়লো আর আমদানী করতে হলো? ডিমের দাম বাড়ে কেন শেখ হাসিনা জবাব চাই, চা শ্রমিকদের দৈনিক বেতন ৩০০ টাকা করতে হবে, না শিল্প না বাণিজ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের সঙ্গে স্বয়ং বসলেন শেখ হাসিনা। আগে মালিকদের ডেকে একটি আপাত যৌক্তিক বেতনও ঘোষণা করা হলো, হায় হায় একটা সরকারবিরোধী আন্দোলন মাঠে মারা গেলো! আর শেখ হাসিনা বাপের বেটি। চা শ্রমিকদের উপহার সোনার চুড়ি হাতে দিয়ে দেখালেন তিনিই বাগানের দুঃখী নারীদের আপনজন।

আপাতত ফিরেছেন চা শ্রমিকরা। কিন্তু বিএনপি নেতা-কর্মীদেরতো রাস্তায়ই নামতে দেয়া হচ্ছে না, পুলিশের সাথে পেটাচ্ছে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামীরা। হামলা-মামলায় জেরবার বিএনপি, যে দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন দুজই দণ্ডিত দুর্নীতির মামলায়। আরে এও তো মিথ্যা মামলায় রায় দিয়েছে শেখ হাসিনা প্রভাবিত আদালত। আরে বাবা মামলা তো দিয়েছিলো–ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার।

অনেক হয়েছে এবার শেখ হাসিনাকে টেনে নামাবার পালা। নির্বাচনের বাকি একবছরের একটু বেশি। রাজপথে আন্দোলন জোরদার হচ্ছে, মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সভা-সমাবেশে জনসর্মথন বাড়ছে। আর সংসদের বিরোধীদল, মহাজোটে আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টিও ঘোষণা দিয়েছে ‘আমরা আওয়ামী লীগের সাথে নেই’। ঠোটকাটারা তখনি প্রশ্ন করেছে, ২০১৮ সালের পর কি আর মহাজোট জীবিত আছে? যখন স্বয়ং এইচ এম এরশাদই চলে গেছেন পরপারে। ছোট বাম যাদের ভোট নাই কানাকড়ি, তারাও চোখ রাঙায় আর বাড়ায় জোটের আয়তন বা গড়ে নতুন জোট।

তবুও হায় তুপ্তির ঢেকুর তোলা ঠিক নয় আওয়ামী লীগারদের। এক যুগ যাদেরকে দুধের নহরে ভাসিয়ে রেখেছেন মমতাময়ী শেখ হাসিনা। কতজনের দুর্নীতি দেখেও না দেখার ভান করেন। আমলাদের ওপর নির্ভরতা বাড়ে, আক্ষেপে দিন কাটান বর্ষীয়ান নেতারা। কিসের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম বা খুলনা ওয়াসার এমডিকে এক দশক পালন করেন প্রধানমন্ত্রী, প্রশ্ন কপালে ওঠে?এক যুগ আগে যে আমলা শেখ সাহেব বলতেন, তিনিই যখন এখন অনেক বড় পদে চিরদিনের মুজিব আদর্শের সৈনিকদের বুক পোড়ে বৈকি? কিন্তু এই যে মনোনয়নে অর্ধেক জেলাপরিষদ চেয়ারম্যানকে ফেলে দিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। আমরা আশা করতেই পারি আগামী সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে তো একটা বার্তা গেলো নাকি? ওহে আওয়ামী সাংসদগণ সতর্ক হোন, যারা দুনীতিতে গা ভাসিয়েছেন, দলের মধ্যে ‘এমপি লীগ’ ‘ভাই লীগ’ বানিয়ে দলের কোন্দলকে তুঙ্গে তুলেছিলেন শেখ হাসিনা তাদের ছাড়বেন না। যেমন ছাড় পাচ্ছেন না বিদ্রোহীরা। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট করে জিতেছেন। তবে আগামী নির্বাচনের আগেই এসব বিভাজন না মেটালে তা দলের জন্য সুখকর হবে না। মনে রাখতে হবে ২০১৪ আর ২০১৮ এর মত নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া এবার সহজ হবে না।

লেখক: সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত