ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিএনপি নেতা টুকুর বক্তব্য নিয়ে যা বলছে জামায়াত

  মো. আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৪১  
আপডেট :
 ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৪৫

বিএনপি নেতা টুকুর বক্তব্য নিয়ে যা বলছে জামায়াত
ফাইল ফটো

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের পরকীয়া চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তার এ বক্তব্যকে কুরুচিপূর্ণ বলেছে জামায়াত। তবে এ বক্তব্য সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলনের পথে বাধা হবে না বলেও জানানো হয়েছে। তবে টুকুর এ বক্তব্য খতিয়ে দেখতে বিএনপিকে পরার্মশ দিয়েছে জামায়াত।

এর আগে সোমবার রাজধানীর হাজারীবাগে বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আওয়ামী লীগের অনেকের মুখে একটা বুলি হয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত। আমি বলছি, এখন সময় এসেছে আওয়ামী লীগ-জামায়াত, আওয়ামী লীগ-জামায়াত বলার। কেননা উনারা (আওয়ামী লীগ) জামায়াতের নিবন্ধন ক্যানসেল করেন। কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করেন না। তাহলে কি আমি বলবো ওনাদের (জামায়াত-আওয়ামী লীগের) পরকীয়া চলছে?

তিনি আরো বলেন, আমাদের বলা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত, আর আপনারা আমাদের বলেন যুদ্ধবিরোধী দল। আমিও স্বীকার করলাম। কিন্তু নিবন্ধন বাতিল করলেন, বেআইনি ঘোষণা করলেন না। তার অর্থ আওয়ামী লীগ-জামায়াতের সঙ্গে তলে তলে বন্ধুত্ব করে। সেজন্য বাতিল করে না।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়ে যে ভাষায় কথা বলেছেন এটা কি রাজনৈতিক কোনো ভাষা হতে পারে? একটা রাজনৈতিক দলের পরকীয়া বলতে তিনি কী বোঝাচ্ছেন? এটা তো কুরুচিপূর্ণ, অশালীন এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ল্যাঙ্গুয়েজ। বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এভাবে বলতে পারেন না। যেহেতু তিনি বলেছেন সেহেতু তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। তার উদ্দেশ্য পরবর্তী ল্যাঙ্গুয়েজে প্রকাশ করেছেন। জামায়াতে নিবন্ধন বাতিলে তিনি সন্তুষ্ট নয়, তিনি সন্তুষ্ট হতেন যদি জামায়াত নিষিদ্ধ হতো।

এই বক্তব্য দিয়ে কাউকে খুশি করতে চান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। পাশাপাশি কোনো শক্তির যোগসাজশ আছে বলে মনে করে জামায়াত।

মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এ বক্তব্যেরে মাধ্যমে টুকু কার সন্তুষ্টি অর্জন করতে চান। এই বক্তব্যের সঙ্গে কারো না কারো যোগসাজশ আছে। কোনো শক্তির যোগসাজশ আছে। আমরা মনে করি এটা খতিয়ে দেখা দরকার। এবং বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দল যার সাথে জামায়াতের ২০-২৫ বছর ধরে জোট আছে, সেই দলের নেতা কী করে এই বক্তব্য দিতে পারেন তা বিএনপির খতিয়ে দেখা উচিৎ।

মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য বলে আমরা মনে করি। এতে বিএনপির সঙ্গে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করে জামায়াত। পাশাপাশি বিএনপি এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে বলেও তিনি মনে করেন।

এদিকে এ বিষয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেছেন ‘২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির এক সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত যে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন, তা দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। এটি কোনো রাজনীতিবিদের ভাষা হতে পারে না। তার এ বক্তব্য স্বৈরাচারী শাসনকে প্রলম্বিত করার ক্ষেত্র তৈরি করবে। আমরা তাঁর এ বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

জামায়াতের এই নেতা বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও বেআইনি ঘোষণাসংক্রান্ত বিষয়ে তার কথা ও মর্মবেদনায় জনগণের মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কার স্বার্থে এবং কাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী কখনো কোনো আপস, গোপন ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না এবং করার প্রশ্নই আসে না।

বিবৃতিতে ‘একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে’ দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ পাঁচজন শীর্ষ স্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে আটক রাখা এবং তিনজনের কারাগারে মারা যাওয়ার ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়, সে দলটি সম্পর্কে ইকবাল হাসান মাহমুদের বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।

তার বক্তব্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে। যে মুহূর্তে দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর, সে সময় তার এ বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। তার বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, তিনি জনগণের ভাষা বুঝতে অক্ষম এবং তিনি জনগণের ভাষায় কথা বলতে পারেন না।

বিবৃতিতে আবদুল হালিম বলেন, ‘জামায়াত’ শব্দটিকে ‘উর্দু’ ভাষা বলে ইকবাল হাসান মাহমুদ অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ‘অসংলগ্ন’ বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতির প্রসঙ্গে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘সোমবার রাজধানীর হাজারীবাগে বিএনপি সমাবেশে আমার পুরো বক্তব্য ছিল আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে, জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে নয়। আমি জামায়াত নিয়ে কিছু বলিনি। বরং তাদের সাপোর্ট করেছি। এ নিয়ে জামায়াত বিবৃতি দিলে তারা অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে’।

টুকুর বক্তব্যের ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়ে আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্যের বক্তব্যের ব্যাপারে কী করে বলি। টুকুর এ বক্তব্য দলীয় নাকি ব্যক্তিগত জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন তার (টুকু) কাছে জানতে চান। খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমাদের দলীয় বক্তব্য হবে মহাসচিবের মাধ্যমে। উনি আমাদের মুখপাত্র। তার মুখ দিয়ে দলের কথা আসবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত