ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাজনীতিতে কী সহিংসতা ফিরছে

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:০৭

রাজনীতিতে কী সহিংসতা ফিরছে
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়তই নানা হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির নেতারা। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিরোধীদের রাজপথে মোকাবিলা করার হুমকি দিতে ছাড়ছেন না। এ অবস্থায় নির্বাচন-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করার দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন এবং তা ঠেকাতে আন্দোলনে নেমেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। তখন গাড়িতে পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণসহ নাশকতার নানা ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে অনেক মানুষের। সেসব ঘটনা আজও দেশবাসীর মনে দগদগে ঘায়ের মতো ক্ষত হয়ে আছে। সম্প্রতি বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের লাঠি হাতে বিক্ষোভ সেই স্মৃতিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে কি সহিংসতার পথে হাটছে বিএনপি? সাধারণ মানুষের মনে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশগুলোতে হামলা প্রতিরোধ করতে দলের নেতাকর্মীরা পতাকা হাতে অংশগ্রহণ করছে। প্রতিরোধের প্রয়োজনে পতাকার সেই লাঠি আরও লম্বা করতে হবে। লম্বা লাঠি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির মরহুম সদস্য ব্রিগেডিয়ার আ স ম হান্নান শাহ’র ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, একদলীয় শাসন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে খালি গায়ে গুলি করছে। তারপরও শেখ হাসিনার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি নির্দ্বিধায় উচ্চবাচ্য করছেন, অসত্য কথা বলে যাচ্ছেন। এতো বেরিকেড, এতো হত্যাকাণ্ডের পরও সাধারণ মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছে, কারণ আজকে মানুষ জেগে উঠেছে ন্যায়ের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে।

যদিও দীর্ঘদিন উত্তাপ ছিল না রাজনীতিতে। চলতি বছর বিএনপির মিছিল-সমাবেশে হামলা-সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা কর্মসূচি ঘিরে। পরে দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মিছিল-সমাবেশ ঘিরে আরও বেড়ে যায় সংঘর্ষ-সহিংসতার মাত্রা।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত ২২ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপির কমপক্ষে ২৮টি সমাবেশে হামলা হয়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় হামলা হয়েছে বিএনপি নেতাদের বাড়িঘরেও। আরও কয়েক জায়গায় বিএনপিকে সমাবেশই করতে দেয়নি পুলিশ।

১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে বিএনপি আয়োজিত মিছিল পুলিশ ভেঙে দিতে চাইলে সংঘর্ষ বাধে। ওই সময় পুলিশের গুলিতে শাওন প্রধান নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ২৬ জন। শাওন প্রধান স্থানীয় যুবদলের কর্মী। গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ অনুযায়ী, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে এবং তাতে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েই শাওন মারা গেছেন।

নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদীসহ কোথাও কোথাও বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের বাধাদানের মাধ্যমে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলেও চট্টগ্রামের মিরসরাই, টাঙ্গাইলের কালীহাতী, পিরোজপুরের স্বরপকাঠীসহ বেশিরভাগ স্থানে হামলা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী সংগঠন। বাম দলগুলোর কর্মসূচিতেও পুলিশি বাধাসহ সরকারি দলের কর্মীদের হামলা চালানোর ঘটনাও ঘটছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কিছুদিন আগেই গণভবনে দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছিলেন, তার সরকার বিরোধীদের ‘ডিস্টার্ব’ করবে না।

গত ১৪ আগস্ট সাংগঠনিক এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দল একটা সুযোগ পাচ্ছে, তারা আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি, খবরদার, যারা আন্দোলন করছে, তাদের কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয় বা ডিস্টার্ব করা না হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসও ঘেরাও দেবে, আমি বলেছি, হ্যাঁ আসতে দেব।’

জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ-উত্তেজনা দেখা দেবে– এমনটা কমবেশি আঁচ করতে পারছিলেন সবাই। চাপের মুখে থাকা অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রভাবশালী কোনো কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের মাধুর্যে কিছুটা ভাটা পড়ায় খানিকটা আগেভাগেই মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সেই সঙ্গে দমন-পীড়নেরও শিকার হচ্ছে তারা। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়, নির্বাচনের সময় যতই কাছে আসবে রাজনৈতিক সহিংসতাও বাড়বে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত