ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

ছাত্র রাজনীতিতে সরগরম জবি, সক্রিয় চারটি দল

  অনুপম মল্লিক আদিত্য, জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৫২  
আপডেট :
 ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:০০

ছাত্র রাজনীতিতে সরগরম জবি, সক্রিয় চারটি দল
ফাইল ছবি

ছাত্ররাজনীতির 'সুপার ইউনিট' খ্যাত শাখা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটিতে এককালে একাধিক দল থাকলেও বর্তমানে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে চারটি দল। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সশরীরে ক্যাম্পাস কার্যক্রমে যুক্ত থাকলেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের স্থগিতাদেশ দেয়ার পরপরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নারী নেত্রীকে কুপ্রস্তাব, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নেতাদের হেনস্থাসহ নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে শাখা কমিটির সিংহভাগ নেতারা। পরবর্তীতে, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর অধিকাংশ বিদ্রোহী নেতাদের ক্যাম্পাসে আসতে দেখা যায়নি। তারা এই নেতৃত্বের অধীনে ছাত্র রাজনীতিতে অনীহা প্রকাশ করেন। এদিকে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরপরই ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে কাজ করছে শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। অনুষদ, বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের কমিটি দেয়ার লক্ষ্যে কর্মীদের সিভি জমা নিয়েছে তারা। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বিভাগের আংশিক কমিটি প্রকাশ করেছে তারা। তবে রাজনৈতিক জ্ঞানশূন্য প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ সিনিয়র কর্মীদের। এদিকে শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার লক্ষ্যে পদপ্রত্যাশী কর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছে নেতৃবৃন্দ।

জানা যায়, পরবর্তীতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হল 'বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল' ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। সে লক্ষ্যে পদ প্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্তও আহ্বান করবে তারা।

প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে কর্মী সংকটে ভুগছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক তাদের কর্মীসংকট কাটিয়ে উঠতে এবং নিজ নিজ গ্রুপ ভারী করতে কোন যাচাই বাছাই ছাড়াই শিক্ষার্থীদের দলে ভিড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে কে কোন মতাদর্শের তা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক সন্দেহ। এদিকে পরিচয় না পাওয়ার শঙ্কায় দীর্ঘদিন যাবত ছাত্র রাজনীতিতে আসতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনাগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। তবে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি বিভাগের কমিটি হওয়ায় এবং অনুষদ ও ইন্সটিটিউটের কমিটি হলে ছাত্ররাজনীতির প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লীষ্টরা।

এদিকে দীর্ঘ ১৯ বছর পর ২৮৩ সদস্য বিশিষ্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সশরীরে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে পারছে না তারা। ক্লাস-পরীক্ষা দিতে নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে আসলে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হতে হয় বলেও অভিযোগ করেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। কিছুদিন আগে ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত শাখা কমিটির যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম শাহিনের ওপর ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলার অভিযোগ তোলে শাখা ছাত্রদলের নেতারা। তার আগে, কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আফফান মুবাইদুর রহমান নামে ছাত্রদলের এক নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

তবে এবার ভিন্ন কৌশলে হাঁটছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধিতে দলে জাতীয়তাবাদী আদর্শের কর্মী ভিড়াচ্ছেন নেতারা। এক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাদের ঘনিষ্টজনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের ভেতরে অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মী সংখ্যা বাড়াচ্ছেন।

সূত্র থেকে জানা যায়, শীর্ষ নেতারা তাদের গ্রুপ ভারী করার লক্ষ্যে এবং তাদের অনুসারীদের সমন্বয় সাধনের জন্য প্রায় সময় মিলনমেলার আয়োজন করে থাকেন। নেতাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আনন্দভ্রমণেরও ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে তারা নিজেদের রাজনৈতিক বৈঠক সম্পন্ন করেন। আরও জানা যায়, শিক্ষানবিশ কর্মীদের নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের অর্থ সহায়তাও করে থাকেন। ইতিমধ্যেই, এসবের বেশ কিছু প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর পর আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছি। তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশ করছি। আমরা এখন দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মী দ্বারা ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রক্টরসহ বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। তারা যদি ব্যবস্থা না নেয় তখন আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল বসে পরবর্তী ব্যবস্থা নিব। আর এটা তো দীর্ঘ দিনের প্রসেস আসলে বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নামক এই সন্ত্রাসী সংগঠন বিভিন্ন ক্যাম্পাসের সংবিধান অনুযায়ী অনুমোদিত প্রতিটা ছাত্র সংগঠনকে আক্রমণ করছে।

কবে নাগাদ ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে আমরা দীর্ঘদিন যাবত ক্যাম্পাসের বাইরে এরকম না, আমরা কমিটি গঠনের পর ক্যাম্পাসের ভিসির সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার কারণে উনারা সময় দেননি। আমাদের সিনিয়র নেতারা যখন সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা তখনই পদক্ষেপ নিব৷ আর আমাদের যেসকল নেতারা রানিং শিক্ষার্থী হিসেবে আছেন তারা তো নিয়মিতই ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন এবং আমাদের ক্যাম্পাস কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ওসমান সালেহী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এক সেকেন্ডের জন্যও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কমিটিহীন ছিল না। যেহেতু কিছুদিন আগে শিবির সন্দেহে আমরা আটক হয়েছি তার মানে আমাদের অবস্থান ক্যাম্পাসে অবশ্যই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ব্যাচ থেকে আমাদের আদর্শের শিক্ষার্থী সংগ্রহ চলমান। আর আমরা যেহেতু আমাদের সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করতে পারি না তাই অন্য ব্যানারের মাধ্যমে বা অনেক সময় ব্যানার ছাড়া আমরা আমাদের এই কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। আমরা শীতবস্ত্র বিতরণসহ শিক্ষার্থীদের যে কোন সমস্যায় পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেন লাঞ্চিত না হয় সেজন্য এগুলো আমরা হাইড রাখি। ছাত্রশিবির বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন সেটা বিরোধীরাও স্বীকার করতে বাধ্য। ক্যাম্পাসে আমাদের সব নেতাকর্মীরাই সরাসরি সক্রিয়। তারা নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা অংশগ্রহণ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের এক সহ-সভাপতি বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে নিয়মিত দাওয়াতি প্রোগ্রাম করছি। আমরা দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা সরকারের পক্ষেও না আবার বিপক্ষেও না। আমরা সবাইকে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে একত্রিত করতে নিয়মিত দাওয়াতি প্রোগ্রাম করে যাব।

কারও দ্বারা কোন আক্রমণের শিকার হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি হামলার শিকার না হলেও হয়রানির শিকার হয়েছি৷ তারা ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত এবং আমাকে এসব কার্যক্রম না করার জন্য একাধিকবার বলেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই বিশটি বিভাগে কমিটি দিয়েছি। আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার জন্য সিভি আহ্বান করেছি। ধারাবাহিকভাবে অনুষদ, ইন্সটিটিউট আর হলের কমিটি দিব। তবে তাড়াহুড়া করে কোন অনুপ্রবেশকারীদের কমিটিতে জায়গা দেয়া হবে না। নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্যতা ছিল বিধায় প্রথম বর্ষ থেকেও সভাপতি-সম্পাদক করা হয়েছে।

অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা নিজেদের ব্যানারে না করে অন্য ব্যানারে কার্যক্রম পরিচালনা করে, এটা আমার কাছে হাস্যকর ছাড়া কিছু না। যাদের নিজেদের ব্যানারে প্রোগ্রাম করার সক্ষমতা নাই তাদের নিয়ে কথা বলা লজ্জাজনক। যাদের ছাত্রত্ব নাই তারা ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম তো দূরের কথা ক্যাম্পাসে পা দিলেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিবে না, তাদের বর্জন করবে।

ছাত্রদলের ওপর হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে ছাত্রলীগ তাদেরকে হামলা করছে বিষয়টা এরকম না। তাদের বিভাগে যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে ঝামেলা হয় এবং শিক্ষার্থী দ্বারা যদি তারা হামলার শিকার হয় তাহলে তো এর দায়ভার ছাত্রলীগ নেবে না।

উল্লেখ্য, একসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করলেও দীর্ঘদিন থেকেই প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন বামপন্থী ও ডানপন্থী দল। তার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছাত্ররাজনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/নুসরাত/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত